Ajker Patrika

মোংলা বন্দরের কার্যক্রম

লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও কম এসেছে জাহাজ, পণ্য ও গাড়ি

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও কম এসেছে জাহাজ, পণ্য ও গাড়ি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা মাথায় রেখে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরের লক্ষ্যমাত্রা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম নির্ধারণ করা হয়েছিল। বছরের শেষে দেখা গেল, এই ছোট লক্ষ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ অনায়াসেই ছাড়িয়ে গেছে, অর্জন করেছে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। তবে এখানেই তৈরি হয়েছে এক দ্বৈত চিত্র—আর্থিক সাফল্য থাকলেও কার্যক্রমে দেখা গেছে হ্রাস। আগের বছরের তুলনায় কমেছে জাহাজ, পণ্য ও গাড়ি। তাই একদিকে যখন লক্ষ্যে পৌঁছানোর আনন্দ, অন্যদিকে রয়েছে কাঠামোগত প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ। গতি ধরে রাখতে চাই এখন টেকসই বিনিয়োগ ও কার্যকর পরিকল্পনা।

বৃহস্পতিবার মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বন্দরের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কার্যক্রম ও আর্থিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান। উপস্থাপিত তথ্যে বন্দরের অর্জন ও বাস্তব চিত্রের এই দ্বৈততা স্পষ্টভাবে উঠে আসে।

মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, বিদায়ী অর্থবছরে জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০টি; সেখানে এসেছে ৮৩০টি জাহাজ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০টি বেশি, প্রবৃদ্ধি ৩.৭৫ শতাংশ। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৮৪৮টি। অর্থাৎ বাস্তবে আগের বছরের তুলনায় কম এসেছে ১৮টি জাহাজ।

কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮.৮০ লাখ টন, কিন্তু বাস্তবে হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০৪.১২ লাখ টন; লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭.২৫ শতাংশ বেশি। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউ, সেখানে হ্যান্ডলিং হয়েছে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউ—৭.২৮ শতাংশ বেশি। যদিও এই দুই খাতেই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানো হয়েছে, তবে আগের বছরের তুলনায় আসল অগ্রগতি কমেছে।

সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে অর্থনৈতিক সূচকে। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছিল ৩৩৩.৮৭ কোটি টাকা, যা ছাড়িয়ে আয় হয়েছে ৩৪৩.৩৩ কোটি—প্রবৃদ্ধি ২.৮৩ শতাংশ। আর নিট মুনাফায় এসেছে চমক। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, কিন্তু আয় হয়েছে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা—৩ গুণের বেশি। এটি নিঃসন্দেহে বন্দরের অপারেশনাল দক্ষতা ও খরচ নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেয়।

তবে আমদানি করা গাড়ির সংখ্যা ১১ হাজার ৫৭৯টি, যা আগের বছরের তুলনায় কম। বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তফা কামাল বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এ অর্জন যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।

Mongla-bondor

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) কাজী আবেদ হোসেন বলেন, মোংলা বন্দরে কোনো জাহাজজট নেই। কনটেইনার খালাসের ক্ষেত্রে টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম ১.৬৬-৪০ ঘণ্টার মধ্যে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৩.৩৭-৭৮ ঘণ্টার মধ্যে। বন্দরের ৭টি কনটেইনার ইয়ার্ড, ৩৮টি সহায়ক জলযান এবং সমন্বিত নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। কোস্ট গার্ডের নিয়মিত টহল ও আইএসপিএস কোড মেনে চলার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

চ্যানেলের নিরাপদ নৌযান চলাচলের জন্য ১৪৪ কিলোমিটারজুড়ে লাইটেড বয়া, লাইট টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। আছে ৪৯টি বার্দিং পয়েন্ট। সড়ক ও নৌপথ মিলিয়ে স্বল্প খরচে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহজে মালামাল পরিবহনের সুবিধাও রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত