Ajker Patrika

টিকটকের কল্যাণে ৩৬ বছর বয়সেই বিলিয়নিয়ার এক স্কিন কেয়ার মোগল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, ০০: ৪০
দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে কমবয়সী বিলিয়নিয়ার কিম বিয়ং হুন। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে কমবয়সী বিলিয়নিয়ার কিম বিয়ং হুন। ছবি: সংগৃহীত

মাত্র ১৫ সেকেন্ডের একটি টিকটক ক্লিপ, লাখ লাখ ভিউয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এর পেছনে ছিলেন মার্কিন তারকা মডেল কাইলি জেনার। মুখে একটি মসৃণ রুপালি ডিভাইস বসিয়ে ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। দাবি করেন, এটি ত্বককে আরও কার্যকরভাবে সেরাম শোষণে সহায়তা করে। ‘বুস্টার প্রো’ নামের এই গ্যাজেটের ভিডিও দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়। সঙ্গে ভাগ্য খুলে যায় এর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এপিআর করপোরেশনের। এটি একসময় খুবই অপরিচিত সিউলভিত্তিক স্টার্টআপ ছিল। এখন কোরিয়ার সৌন্দর্যচর্চাশিল্পের কেন্দ্র।

এই প্রতিষ্ঠানের পেছনে রয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী কিম বিয়ং হুন। তিনি মূলত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। এখন বিউটি মোগল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এপিআর করপোরেশনের তাঁকে দক্ষিণ কোরিয়ার নবীনতম বিলিয়নিয়ারে পরিণত করেছে। এ বছর এপিআরের শেয়ার ২০০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার পর ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, এপিআরে তাঁর ৩১ শতাংশ শেয়ারের মূল্য এখন প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।

উদ্যোক্তা থেকে বিউটি মোগল: কিম বিয়ং হুনের যাত্রা

এক দশকের বেশি আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়তে যান কিম। সেখানে তিনি ডেটিং অ্যাপসহ বেশ কিছু মোবাইল অ্যাপ নিয়ে কাজ শুরু করেন। তখনই স্মার্টফোনের সম্ভাবনা বুঝতে পারেন এবং উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেন।

২০১৪ সালে কিম এপিআর চালু করে স্কিন কেয়ারের (ত্বকযত্ন) দিকে মনোনিবেশ করেন। প্রাথমিকভাবে প্রসাধনী পণ্যের ওপর জোর দেন। ২০২১ সালে ব্যবসাটি উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন ফেসিয়াল ডিভাইস উৎপাদন শুরু করে। বাড়িতেই স্পার মতো যত্নের প্রতিশ্রুতি দেয় কোম্পানি। এপিআরের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা শিন জে হা ব্লুমবার্গ নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এটি এমন কোম্পানি, যেটির পণ্যগুলো কিম ব্যক্তিগতভাবে প্রচার করেন। তিনি প্রতিদিন ৩০ মিনিট ধরে এপিআরের ফেসিয়াল গ্যাজেট ব্যবহার করেন।

গত বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এপিআর এখন দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিউটি ফার্ম। এটির বাজার মূলধন ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

কে-বিউটির বিশ্বব্যাপী বিস্তার

দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল সৌন্দর্যচর্চাশিল্পের আন্তর্জাতিক নাম কে-বিউটি। একসময় জেন-জি বা এশীয় আমেরিকান ইনফ্লুয়েন্সাররা এর প্রধান ভোক্তা ছিল। কিন্তু এটি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূলধারায় প্রবেশ করেছে। গত বছর কোরিয়ান বিউটি পণ্যের বিক্রি ৫৬ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

কে-পপ সংগীত এবং কোরিয়ান সিরিয়ালের পাশাপাশি এখন কে-বিউটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ বাড়ছে। সেলিব্রিটিরা এপিআরের ফ্ল্যাগশিপ ব্র্যান্ড মেডিকিউবের পণ্যগুলো তাদের দৈনন্দিন রুটিনে তুলে ধরতে শুরু করেছেন। কোম্পানিটি জানিয়েছে, জাস্টিন বিবারের স্ত্রী হেইলি বিবার ২০২৩ সালের শেষের দিকে প্রথমবার তাদের জেল মাস্ক সম্পর্কে পোস্ট করেন। এই প্রচার এপিআরের ২০২৪ সালের বিশ্বব্যাপী প্রচারাভিযানের পথ প্রশস্ত করে। কাইলি জেনার এবং কেন্ডাল জেনার এবং কোল কার্দাশিয়ানের মতো তারকারা প্রচারণায় যুক্ত হন।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সাফল্য

যদিও কে-বিউটির উত্থান দক্ষিণ কোরীয় সংস্কৃতির বিশ্বব্যাপী উত্থানের প্রতিচ্ছবি, তবে এপিআর প্রসাধনী রপ্তানির একটি নতুন ঢেউয়ের অংশ। ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ডগুলো যা ডিউটি-ফ্রি শপ বা চীনকেন্দ্রিক পণ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল, এপিআর টিকটকে প্রচারিত স্কিন কেয়ার এবং ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে নিজস্ব জায়গা করে নেয়।

সিউলের হানা সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ইউন-জুং পার্ক বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিপণনে দক্ষ কে-বিউটি কোম্পানিগুলো ই-কমার্সে দ্রুত সাফল্য পাচ্ছে।’

চীন এখনো দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম প্রসাধনী রপ্তানি বাজার। তবে ব্যবধান খুব কম। চীনে রপ্তানি ধীর হচ্ছে, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি এখন দ্রুত বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রিমিয়াম খুচরা বাজারের কারণে উচ্চ মার্জিন পাচ্ছে তারা। এপিআর-এর ৭০ শতাংশের বেশি রাজস্ব এখন বিদেশি বাজার থেকে আসে। দক্ষিণ কোরিয়ার বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এখন এর বৃহত্তম বাজার। বর্তমানে তারা যুক্তরাষ্ট্রে আরও বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।

এপিআরের বর্তমান স্কিন কেয়ার এবং ডিভাইস লাইনগুলো অ্যান্টি-এজিং, ময়শ্চারাইজিং ও ব্রাইটেনিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবসা সম্প্রসারণের কথাও ভাবছে।

কোম্পানিটি আশা করছে, চলতি বছর কোম্পানির বিক্রি ১ ট্রিলিয়ন ওন (৭৩০ মিলিয়ন ডলার) বার্ষিক রাজস্বে পৌঁছাবে।

বিলিয়নিয়ার কিম: ব্যক্তিগত জীবন ও স্বপ্ন

ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলিয়নিয়ার কিমের ব্যক্তিগত কাজ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই শিরোনাম হচ্ছে। তিনি সম্প্রতি সিউলের উচ্চবিত্তদের বসতি সেওংসু-ডং এলাকায় ২৯ বিলিয়ন ওন (২১ মিলিয়ন ডলার) দিয়ে একটি পেন্টহাউস কিনেছেন। এই বিলাসবহুল বাসভবন সুপরিচিত চলচ্চিত্র তারকা এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদেরও আবাসস্থল।

এত সম্পদের মালিকা হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কিম প্রতিদিন অফিসে আসেন, ভোক্তাদের প্রবণতা এবং বাজারের প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং এমনকি সপ্তাহান্তে শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কৌশলগত বৈঠক করেন। নিজে ভিডিও শেয়ারও করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে আর তেমন আসেন না।

কিম তাঁর শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্টের সময় স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘যদি কেউ আমাকে আমার কর্মজীবনের লক্ষ্য কী জিজ্ঞাসা করে, আমি বলব, এখন আমি এমন একটি বড় কোম্পানি তৈরি করতে চাই, যা সবাই জানে। অ্যাপলের মতো, আমরা এমন পণ্য চালু করতে চাই, যা আমাদের সৌন্দর্যচর্চাশিল্পে সবচেয়ে উদ্ভাবনী কোম্পানিতে পরিণত করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারা দেশে আরও ১০ দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা

‘আজ বুঝলাম, সময়ের কাছে মানুষ কত অসহায়’—মৃত্যুর আগে স্ট্যাটাস স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার

পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার

রামদা হাতে ভাইরাল সেই সাবেক যুবদল নেতাকে গুলি ও পায়ের রগ কেটে হত্যা

জগন্নাথপুরে এসএসসিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া রাইদা হতে চায় চিকিৎসক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত