Ajker Patrika

পুঁজিবাজার

লভ্যাংশ বিতরণে ‘ডিভিডেন্ড হাব’ হতে চায় সিএমএসএফ

  • সিএমএসএফকে কেন্দ্রীয় ‘ডিভিডেন্ড হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা।
  • তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ সিএমএসএফের মাধ্যমে বিতরণের প্রস্তাব।
  • কর কর্তন করে সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা।
  • সিএমএসএফকে ‘স্ট্যাটুটরি ফান্ড’ বা আইনসিদ্ধ তহবিলে রূপান্তরের উদ্যোগ।
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
লভ্যাংশ বিতরণে ‘ডিভিডেন্ড হাব’ হতে চায় সিএমএসএফ

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল বা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডকে (সিএমএসএফ) কেন্দ্রীয় লভ্যাংশ বিতরণকারী সংস্থা বা ‘ডিভিডেন্ড হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির আইনগত ভিত্তি জোরদার করা এবং কার্যপরিধি বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ সিএমএসএফে জমা হবে, সেখান থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে। এ সময় কর কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা দেবে সিএমএসএফ, ফলে বিনিয়োগকারীদের আলাদাভাবে কর প্রত্যয়ন সংগ্রহ করতে হবে না।

তবে এ উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাজারসংশ্লিষ্ট অনেকে। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনবেন, কোম্পানি লভ্যাংশ দেবে, এখানে আবার তৃতীয় পক্ষ কেন? এটা করার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে কোম্পানির যে মৌলিক কাঠামো, সেটা তো থাকে না। এখন পর্যন্ত ওদের (সিএমএসএফ) যে টাকা দেওয়া হয়েছে, সেটার কোনো স্বচ্ছ হিসাব নেই। আগে সেটার স্বচ্ছ হিসাব দেওয়া হোক।

সিএমএসএফ গঠিত হয় ২০২১ সালের জুনে। উদ্দেশ্য ছিল অবণ্টিত লভ্যাংশ পরিশোধ ও বাজারে তারল্য সরবরাহ। এ পর্যন্ত তারা প্রায় ৯.৪ কোটি টাকা নগদ এবং ৩০৫ কোটি টাকার শেয়ার লভ্যাংশ বিতরণ করেছে।

তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য সিএমএসএফের পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ফান্ডটির প্রাসঙ্গিকতা এবং তহবিলের যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয়। জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু সম্মানী ও অনুষ্ঠান বাবদ খরচ করা হয় ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এই বছরে মোট পরিচালন খরচ ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ‘নজিবুর রহমানকে পুনর্বাসন করার জন্যই সিএমএসএফ করা হয়েছিল। এর কারণে পুঁজিবাজারের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কোম্পানির ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে যে টাকা ছিল, সেগুলো সিএমএসএফে জমা দিতে হয়েছিল। ফান্ডের টাকায় মিটিংয়ের পরে মিটিং করে নিয়ে যাবে, কিংবা সেটার সুদ দিয়ে ইচ্ছেমতো খরচ করবে, সেটাও নীতিগতভাবে সমর্থন করি না।’

সম্প্রতি সিএমএসএফ প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবণ্টিত লভ্যাংশ পাঠানোর জন্য মধুমতি ব্যাংকে একটি বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব খোলার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন আইনগত ভিত্তি দুর্বল উল্লেখ করে হিসাব খোলার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিএমএসএফকে একটি ‘স্ট্যাটুটরি’ বা আইনসিদ্ধ তহবিলে রূপান্তরের প্রস্তাব তোলা হয়। এতে সম্মতি দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমএসএফের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ওয়াসি আজম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের অ্যাজেন্ডা হাতে এলে বিস্তারিত জানা যাবে।

নতুন কাঠামোয় যা থাকছে

সিএমএসএফ অতীতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে কিছু ইকুইটিতে বিনিয়োগ করেছে। আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড নামের একটি মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছে সিএমএসএফ। এসব পদক্ষেপ বাজারে সমালোচনার জন্ম দেয়। নতুন কাঠামোয় বিনিয়োগকারীদের অর্থ ব্যবহার করে আর কোনো বিনিয়োগ বা স্পনসরশিপ করার সুযোগ থাকবে না।

বর্তমানে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ বিতরণ করে। প্রতিটি কোম্পানি পৃথকভাবে কর প্রত্যয়নপত্র দেয়, যা করদাতাদের জন্য ঝামেলার। যাঁদের টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) আছে, তাঁদের লভ্যাংশ আয়ে ১৫ শতাংশ কর কাটা হয়, আর যাঁদের নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে কর ২০ শতাংশ। করফাঁকি ঠেকাতে আয়কর রিটার্নে প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানির দেওয়া কর প্রত্যয়ন অনলাইনে মেলে না। আবার উৎসাহজনক প্রণোদনা না থাকায় অনেকে কর প্রত্যয়ন সংগ্রহে আগ্রহী হন না। সিএমএসএফ যদি কেন্দ্রীয়ভাবে লভ্যাংশ বিতরণের দায়িত্ব নেয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা সম্মিলিত লভ্যাংশ আয়ের বিপরীতে একটি চালানেই কর অব্যাহতির সুবিধা নিতে পারবেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত