Ajker Patrika

আর্থিক হিসাব নেই ৭ কোটির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ থেকে এখনো বঞ্চিত কোটি কোটি মানুষ। আধুনিক ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সুবিধা নিতে না পারার কারণে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী রয়েছে অর্থনৈতিক লেনদেনের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থার বাইরে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স দেশের প্রায় ৭ কোটি এমন মানুষ এখনো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক হিসাব খুলতে পারেনি। এতে করে তারা সঞ্চয়, ঋণ গ্রহণ, ডিজিটাল লেনদেনসহ আধুনিক আর্থিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। এই চ্যালেঞ্জ কেবল ব্যক্তিগত নয়, দেশের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের জন্যও বিরাট ঝুঁকি তৈরি করছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হলে শুধু প্রযুক্তি নয়, জনসচেতনতা ও গ্রহণযোগ্যতার মধ্য দিয়ে সেবার গুণগত মানও উন্নত করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ বৈশ্বিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সূচক (ফিনডেক্স) অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২ কোটি ২৮ লাখ। এর মধ্যে ৬ কোটি ৯৭ লাখের কোনো আর্থিক হিসাব নেই। বিশ্বে হিসাব না থাকা অধিকাংশ মানুষ আটটি দেশে বাস করে, যার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। অন্য দেশগুলো হলো ভারত, চীন, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান। সেখানে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) এবং মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দেওয়া প্রতিষ্ঠানে হিসাব থাকার হার দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের একই রিপোর্ট অনুযায়ী, তিন বছর আগে এ হার ছিল ৫৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে এর আগে দাবি করা হয়, দেশের ১৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ছিল ২৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে (এমএফএস) দেশের ১৫ বছরের বেশি জনসংখ্যার ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যক্তির এমএফএস হিসাব ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে এমএফএসে নিবন্ধিত হিসাব প্রায় ২৪ কোটি ছিল। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার। ব্যাংক হিসাবে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ কোটি ৫৭ লাখ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক মানুষ দিনমজুর, যাঁদের সংসার চালিয়ে অর্থ সঞ্চয় করার মতো অবস্থা নেই। এ ছাড়া শিক্ষার অভাবে অনেকেই ব্যাংক লেনদেন এড়িয়ে চলেন। ব্যাংকে টাকা রাখা নিয়ে অনেকের মধ্যেই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। ফলে ভয়ে টাকা অন্যত্র রাখতে চান না। এসব কারণেও আর্থিক হিসাবধারী কমতে পারে।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ-২০২৩’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে দেশের ১০ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীর ৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় এসেছে। যদিও বিবিএসের জরিপ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যাংক তো দূরের কথা, মোবাইল ব্যাংকিং এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও লেনদেন করছে না ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১০ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি মানুষের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আগ্রহ নেই। সে বিবেচনায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে থাকা মানুষের মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ মানুষের ব্যাংকে হিসাব রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন খান বলেন, বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। তবে কেবল ৫ শতাংশ মানুষের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে এ কথাটির সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বা বিবিএসের হিসাবে হয়তোবা অনেকে আসেনি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে অর্ধেকের বেশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় এসেছে। সামনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটা নির্দিষ্ট বয়স হিসাব না করে সামগ্রিক হিসাব বিবেচনায় আনতে হবে। তখন হয়তোবা ফলাফলটা প্রকৃত তথ্যে কাছাকাছি আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত