Ajker Patrika

রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির পর্ষদে ২০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ বাধ্যতামূলক হচ্ছে

শাহ আলম খান, ঢাকা
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ১৭
রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির পর্ষদে ২০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ বাধ্যতামূলক হচ্ছে

রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত সংস্থাগুলোয় প্রায়ই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কাজেও পর্ষদ পরিচালকদের স্বচ্ছতা ও দক্ষতার ঘাটতি দেখা যায়। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার বেশির ভাগই বছর বছর লোকসান গুনছে। এমন বাস্তবতায় অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিকঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে অর্থবছর শেষ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে নির্দেশনা দিয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের পরামর্শক্রমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্প্রতি এসব নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের চিঠি দিয়েছে অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল। চিঠিতে মন্ত্রণালয়গুলোর আওতাধীন কোম্পানি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো যাতে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত সংস্থাগুলোর পরিচালনা পর্ষদে বাধ্যতামূলকভাবে কমপক্ষে ২০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। সেখানে কারা স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন, তাঁদের যোগ্যতাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘স্বতন্ত্র পরিচালককে সংশ্লিষ্ট সংস্থার ব্যবস্থাপনা, অন্যান্য প্রধান শেয়ারহোল্ডার এবং মালিকানাস্বত্বার সঙ্গে যেকোনো বস্তুগত, আর্থিক স্বার্থ বা সম্পর্ক থেকে মুক্ত হতে হবে এবং তিনি সরকারি চাকরিজীবী হতে পারবেন না।’

সরকারের এসব সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, সিদ্ধান্তগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোতে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে। স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা বাড়লে প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষভাবে পরিচালিত হবে। এতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থসচিব ড. মাহবুব আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সিদ্ধান্তগুলো খুবই যৌক্তিক ও প্রগতিশীল হয়েছে। কমপক্ষে ২০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হলে অনেক এক্সপার্ট ব্যক্তি কোম্পানিগুলো পরিচালনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে অর্থবছর শেষ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দেশীয় বাস্তবতায় প্রকাশ করা কঠিন হবে। কারণ, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্পন্ন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম নেই, যাদের মাধ্যমে এ সময়ের মধ্যে অডিট সম্পন্ন করা সম্ভব হতে পারে।

অর্থ বিভাগের নির্দেশনা পর্যালোচনা থেকে আরও জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পৃথকভাবে একটি কোড অব করপোরেট গভর্নেন্স এবং কোড অব কনডাক্ট প্রণয়ন করারও সিদ্ধান্ত জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে প্রস্তাবিত কোড অব করপোরেট গভর্নেন্স ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে এবং কোড অব কনডাক্ট ২০২৫ সালের মার্চ থেকে বাধ্যতামূলক বাস্তবায়ন করার সময়সীমার কথা বলা হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সিদ্ধান্তগুলো ভালো। এখন তা প্রতিপালন জরুরি। তবে কোম্পানিগুলো যেহেতু রাষ্ট্রীয় সম্পদ দ্বারা পরিচালিত, তাই আইডিয়ালি বোর্ডে ৫০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক থাকলে তা যৌক্তিক হতো। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত