অনলাইন ডেস্ক
১৯৭৯ সাল। তরুণ উদ্যোক্তা কিহাক সাং দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল থেকে চট্টগ্রামে পা রাখেন। উদ্দেশ্য—এখানে একটি পোশাক কারখানা স্থাপন করার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা। সে সময় বাংলাদেশের অবকাঠামো ছিল দুর্বল, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ছিল নানা বিধিনিষেধ। তবে ইউরোপীয় বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ থাকায় কিহাক সাং বাংলাদেশকেই বেছে নেন।
আজ বুধবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর হাতে নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেন। এই সম্মাননা তাঁর দীর্ঘ ও সফল কর্মজীবনের স্বীকৃতি।
শুরুর সংগ্রাম
কিহাক সাংয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালের মে মাসে, স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে ‘ইয়াংওয়ান বাংলাদেশ লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। সুইডিশ ক্রেতার কাছ থেকে পাওয়া সাধারণ পোশাকের একটি ছোট অর্ডার দিয়ে শুরু হয় পথচলা। প্রশিক্ষিত কোরীয় কর্মীদের সাহায্যে অল্প সময়ের মধ্যে কারখানাটি সমৃদ্ধ হতে শুরু করে। ১৯৮৪ সালের মধ্যেই কারখানাটি ১৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করে।
কিহাক সাংয়ের ইয়াংওয়ান করপোরেশন বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৭০ হাজারই বাংলাদেশে কর্মরত। সিউল স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত ইয়াংওয়ান করপোরেশনের বার্ষিক টার্নওভার ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে, যার এক-তৃতীয়াংশ আসে বাংলাদেশ থেকে।
কেইপিজেডের জন্ম
ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, এল সালভাদর ও ইথিওপিয়ায় কারখানা থাকলেও কিহাক সাংয়ের সবচেয়ে বড় অবদান চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত ‘কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন’ বা কেইপিজেড। প্রতিবছর নতুন শিল্প কমপ্লেক্সের মাধ্যমে এই রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।
১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করা কিহাক সাং স্নাতক শেষ করে ১৮ মাস কোরীয় সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নেন। বাবার কোল্ডস্টোরেজের ব্যবসায় যোগ না দিয়ে তিনি পোশাকের বৈচিত্র্যময় জগতে আকৃষ্ট হন। ২৫ বছর বয়সে একটি পোশাক কোম্পানিতে বিক্রয় নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালে দুজন অংশীদারকে নিয়ে ইয়াংওয়ান করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
কিহাক সাংয়ের স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, ১৯৮০ সালের মে মাসে প্রথম অর্ডারের কাঁচামাল চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর হাতে টানা গাড়িতে করে কারখানায় আনা হয়েছিল। কাঁচামালবোঝাই গাড়িগুলোর সারি এক কিলোমিটার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
১৯৮৬ সালে তিনি স্থানীয় অংশীদারদের থেকে আলাদা হয়ে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) কারখানা স্থাপন করেন। এরপর থেকে তাঁর ব্যবসা বাড়তে থাকে।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও তিনি কারখানা পুনরুদ্ধারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। কর্মীদের আন্তরিকতা ও ক্রেতাদের সহযোগিতায় তিনি আরও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাইকার একটি অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি নতুন ফার্নিচার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। কিহাক সাং ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন একটি অঞ্চল তৈরির পরামর্শ দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি কেইপিজেড তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন।
আনোয়ারার অনুর্বর জমি দেখে অনেকে হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু কিহাক সাংয়ের স্বপ্ন ছিল ভিন্ন। তিনি জানতেন, এখানে পানি আছে। কর্ণফুলী নদীর লবণাক্ত পানি ও ভূগর্ভস্থ মিঠাপানির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি সরকারের সহযোগিতায় জমি অধিগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৯ সালের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ একরের বেশি জমি কেইপিজেডের জন্য বরাদ্দ করা হয়।
দীর্ঘ আইনি জটিলতা ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে ২০০৮ সালে কেইপিজেডে শিল্প কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে প্রথম কারখানা চালু হয়।
সবুজ বিপ্লব
কেইপিজেডে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়। ফলে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন গ্যালন পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। এর ফলে এলাকার বন্যা সমস্যার সমাধান হয় এবং শুষ্ক মৌসুমেও পানির অভাব দূর হয়।
দীর্ঘ ২৫ বছর পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কেইপিজেডের জমি মিউটেশনের নথি অনুমোদন করেছে। এর ফলে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ এখন বিশ্বজুড়ে অন্যান্য বিনিয়োগকারীর কাছে শিল্প প্লট বিক্রি করতে পারবে।
কিহাক সাংয়ের এই অবিশ্বাস্য যাত্রা বাংলাদেশের শিল্প খাতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাঁর দূরদর্শিতা ও পরিশ্রমের ফসল হিসেবে কেইপিজেড আজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আরও খবর পড়ুন:
১৯৭৯ সাল। তরুণ উদ্যোক্তা কিহাক সাং দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল থেকে চট্টগ্রামে পা রাখেন। উদ্দেশ্য—এখানে একটি পোশাক কারখানা স্থাপন করার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা। সে সময় বাংলাদেশের অবকাঠামো ছিল দুর্বল, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ছিল নানা বিধিনিষেধ। তবে ইউরোপীয় বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ থাকায় কিহাক সাং বাংলাদেশকেই বেছে নেন।
আজ বুধবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর হাতে নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেন। এই সম্মাননা তাঁর দীর্ঘ ও সফল কর্মজীবনের স্বীকৃতি।
শুরুর সংগ্রাম
কিহাক সাংয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালের মে মাসে, স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে ‘ইয়াংওয়ান বাংলাদেশ লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। সুইডিশ ক্রেতার কাছ থেকে পাওয়া সাধারণ পোশাকের একটি ছোট অর্ডার দিয়ে শুরু হয় পথচলা। প্রশিক্ষিত কোরীয় কর্মীদের সাহায্যে অল্প সময়ের মধ্যে কারখানাটি সমৃদ্ধ হতে শুরু করে। ১৯৮৪ সালের মধ্যেই কারখানাটি ১৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করে।
কিহাক সাংয়ের ইয়াংওয়ান করপোরেশন বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৭০ হাজারই বাংলাদেশে কর্মরত। সিউল স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত ইয়াংওয়ান করপোরেশনের বার্ষিক টার্নওভার ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে, যার এক-তৃতীয়াংশ আসে বাংলাদেশ থেকে।
কেইপিজেডের জন্ম
ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, এল সালভাদর ও ইথিওপিয়ায় কারখানা থাকলেও কিহাক সাংয়ের সবচেয়ে বড় অবদান চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত ‘কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন’ বা কেইপিজেড। প্রতিবছর নতুন শিল্প কমপ্লেক্সের মাধ্যমে এই রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।
১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করা কিহাক সাং স্নাতক শেষ করে ১৮ মাস কোরীয় সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নেন। বাবার কোল্ডস্টোরেজের ব্যবসায় যোগ না দিয়ে তিনি পোশাকের বৈচিত্র্যময় জগতে আকৃষ্ট হন। ২৫ বছর বয়সে একটি পোশাক কোম্পানিতে বিক্রয় নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালে দুজন অংশীদারকে নিয়ে ইয়াংওয়ান করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
কিহাক সাংয়ের স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, ১৯৮০ সালের মে মাসে প্রথম অর্ডারের কাঁচামাল চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর হাতে টানা গাড়িতে করে কারখানায় আনা হয়েছিল। কাঁচামালবোঝাই গাড়িগুলোর সারি এক কিলোমিটার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
১৯৮৬ সালে তিনি স্থানীয় অংশীদারদের থেকে আলাদা হয়ে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) কারখানা স্থাপন করেন। এরপর থেকে তাঁর ব্যবসা বাড়তে থাকে।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও তিনি কারখানা পুনরুদ্ধারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। কর্মীদের আন্তরিকতা ও ক্রেতাদের সহযোগিতায় তিনি আরও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাইকার একটি অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি নতুন ফার্নিচার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। কিহাক সাং ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন একটি অঞ্চল তৈরির পরামর্শ দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি কেইপিজেড তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন।
আনোয়ারার অনুর্বর জমি দেখে অনেকে হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু কিহাক সাংয়ের স্বপ্ন ছিল ভিন্ন। তিনি জানতেন, এখানে পানি আছে। কর্ণফুলী নদীর লবণাক্ত পানি ও ভূগর্ভস্থ মিঠাপানির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি সরকারের সহযোগিতায় জমি অধিগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৯ সালের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ একরের বেশি জমি কেইপিজেডের জন্য বরাদ্দ করা হয়।
দীর্ঘ আইনি জটিলতা ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে ২০০৮ সালে কেইপিজেডে শিল্প কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে প্রথম কারখানা চালু হয়।
সবুজ বিপ্লব
কেইপিজেডে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়। ফলে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন গ্যালন পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। এর ফলে এলাকার বন্যা সমস্যার সমাধান হয় এবং শুষ্ক মৌসুমেও পানির অভাব দূর হয়।
দীর্ঘ ২৫ বছর পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কেইপিজেডের জমি মিউটেশনের নথি অনুমোদন করেছে। এর ফলে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ এখন বিশ্বজুড়ে অন্যান্য বিনিয়োগকারীর কাছে শিল্প প্লট বিক্রি করতে পারবে।
কিহাক সাংয়ের এই অবিশ্বাস্য যাত্রা বাংলাদেশের শিল্প খাতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাঁর দূরদর্শিতা ও পরিশ্রমের ফসল হিসেবে কেইপিজেড আজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আরও খবর পড়ুন:
টানা দরপতন, তারল্যসংকট ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল দেশের পুঁজিবাজার। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে প্রাণ ফেরাতে নেওয়া হয়েছে কয়েকটি সাহসী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ।
৪১ মিনিট আগেঅর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বৈশ্বিক চাপ মোকাবিলায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তৈরি হয়েছে ব্যতিক্রমী সংযমে। এবার মাত্র ২৮টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার একটিও মেগা প্রকল্প নয়; বরং চলমান বড় প্রকল্পগুলোয় খরচ কমিয়ে দিয়েছে সরকার।
৪৪ মিনিট আগে২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন আয়কর বাড়ানোর সঙ্গে স্থানীয় শিল্পে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। দেশীয় অনেক শিল্পে কর অব্যাহতি সুবিধাও তুলে নেওয়া হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খাতে চাপ বাড়বে।
১ ঘণ্টা আগে২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আসছে এমন এক সময়, যখন অর্থনীতি আছে একযোগে চাপ, সংকট এবং শর্তের ঘূর্ণাবর্তে। রাজস্ব আয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না পৌঁছানো, বিনিয়োগে স্থবিরতা ও কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা এখন সরকারের নীতিনির্ধারকদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
১ ঘণ্টা আগে