Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

চরফ্যাশন থেকে গেটিসবার্গ কলেজ

চরফ্যাশন থেকে গেটিসবার্গ কলেজ

মো. সাজিবুল ইসলাম। তাঁর বাড়ি ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর গ্রামে। তিনি এই গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে যুক্তরাষ্ট্রের গেটিসবার্গ কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এ বছর ভর্তি হওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফিন্যান্সিয়াল এইড (৪ কোটি টাকা) পেয়েছেন তিনি। তাঁর সংগ্রামী যাত্রা, প্রেরণা এবং স্বপ্নের বাস্তবায়ন নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আশিকুর রহমান।

আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, ১৭: ৫০

চরফ্যাশন থেকে উঠে এসে যুক্তরাষ্ট্রের গেটিসবার্গ কলেজে প্রেসিডেনশিয়াল স্কলারশিপ; এই যাত্রা কেমন ছিল?

সহজ ছিল না এই যাত্রা। চরফ্যাশনের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট, গাইডলাইন, এমনকি ইংরেজিতে কথা বলার পরিবেশও খুব সীমিত। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, সঠিক তথ্য পাওয়া এবং নিজেকে সেই আন্তর্জাতিক মানে প্রস্তুত করা। অনেকে বিশ্বাস করত না যে এই জায়গা থেকেও কেউ আমেরিকায় ফুল স্কলারশিপে যেতে পারে। এই মানসিক বাধাগুলো ভাঙাই ছিল আমার প্রথম লড়াই।

গেটিসবার্গ কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স ও ফিজিকস—এই দুটি বিষয়কে ডাবল মেজর হিসেবে কেন বেছে নিয়েছেন?

ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ছিল। রোবোটিকস ক্লাব, গবেষণা, এমনকি বিজ্ঞান মেলাগুলোতে অংশ নেওয়ার সময় বুঝেছি, কম্পিউটার সায়েন্সের সমস্যা সমাধানে দক্ষতা আর ফিজিকসের মৌলিক চিন্তাধারা একসঙ্গে মিললে আমি ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী উদ্ভাবন করতে পারব। দুটো বিষয় একসঙ্গে শিখে আমি এমন এক জায়গায় পৌঁছাতে চাই, যেখানে প্রযুক্তি এবং মৌলিক বিজ্ঞান মানুষের জীবন আরও সহজ করে তুলবে।

এই বৃত্তি পেতে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছেন, কোন ধাপে কী কী করতে হয়েছে?

প্রস্তুতিটা ছিল ধাপে ধাপে,

ভাষা ও পরীক্ষার প্রস্তুতি: প্রথমে ইংরেজি দক্ষতা বাড়াতে DUOLINGO আর SAT দিয়েছিলাম।

আবেদনপ্রক্রিয়া: কমন অ্যাপ ব্যবহার করে অনেক কলেজে আবেদন করি। ই-মেইল, এসএ বা ISFAA ফর্ম এবং প্রমাণপত্র ঠিকঠাকভাবে জমা দিতে হয়েছে।

প্রোফাইল গঠন: আমি গবেষণায় কাজ করেছি, রোবোটিকস ক্লাব পরিচালনা করেছি, আর সামাজিক উদ্যোগ নিয়েছি, যা আমার প্রোফাইলকে আলাদা করেছে।

প্রবন্ধ (Essay): আমার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা, যেমন আমার ভাইয়ের মৃত্যু এবং তার পরবর্তী সময়ে রক্তদান ক্লাব প্রতিষ্ঠা, সেগুলো নিয়ে আমার ব্যক্তিগত প্রবন্ধ লিখেছিলাম।

আপনার এই সাফল্যের পেছনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা কোথায় পেয়েছিলেন?

আমার অনুপ্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস বড় ভাই মো. আল আমিন। যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ায় ইকোনমিকসে পিএইচডি করছেন। গ্রামের একটি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে তাঁর এই অর্জন আমাকে দেখিয়েছে, সঠিক লক্ষ্য, অধ্যবসায় আর সাহস থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।

তা ছাড়া আমার বাবা-মাসহ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের কঠোর পরিশ্রম আমাকে প্রতিদিন নতুনভাবে শুরু করার শক্তি দিয়েছে। তাঁদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামই আমার পথচলার পাথেয়।

যাঁরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী হবে?

আমি শুধু এটুকু বলব, স্বপ্ন দেখতে ভয় পেলে চলবে না। নিজের অবস্থান যতই পিছিয়ে থাকুক, ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তথ্য সংগ্রহ করা, ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়ানো, নিজের গল্পকে ভয় না পেয়ে তুলে ধরা। আর কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যদি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখলে সুযোগ একদিন দরজায় আসবেই।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত