Ajker Patrika

ডলারের মজুত কমছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৯: ১২
ডলারের মজুত কমছেই

দেশজুড়ে ডলার-সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পণ্যমূল্য হু হু করে বাড়ছে। এতে গণমানুষের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। ডলারের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক একের পর এক পদক্ষেপ নিলেও কাজে আসছে না এসব পদক্ষেপ। তবে ডলারের দর নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে বাজারভিত্তিক ডলারের রেট না থাকা।

ডলার দুষ্প্রাপ্যতার সঙ্গে নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে অবৈধ পথে (হুন্ডিতে) ডলার লেনদেন। এ ছাড়া ঋণপত্রের (এলসি) আড়ালে ডলার পাচার হচ্ছে। ডলার-সংকটের এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো কৃত্রিমভাবে ডলার নিয়ন্ত্রণের খেসারত দিচ্ছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, রপ্তানিকারকের জন্য ডলারের রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা, রেমিট্যান্সের জন্য ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে প্রতি ডলার বিক্রি করছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। এটাকে বাজারভিত্তিকের কাছাকাছি দাবি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের ভিন্ন মত রয়েছে। তাঁদের মতে, বাজারভিত্তিক ডলার রেট নির্ধারণ করা থাকবে না। এমনকি ঘোষিত দরের চেয়ে বেশি দরে ডলার লেনদেন করায় ১০টি ব্যাংককে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার মুখে মুখে বেশি দামে হলেও রেমিট্যান্স কিনতে নির্দেশনা রয়েছে বলে বেসরকারি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এদিকে খোলাবাজারে ১২০ টাকা পর্যন্ত ডলার বিক্রি হচ্ছে। এটা খোলাবাজারের জন্য ঘোষিত দরের বেশি। যদিও ঘোষিত দর হিসাবে ১১১ টাকা থেকে ১১২ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বাজারে মিলছে না অভিযোগ ক্রেতাদের। সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে চড়া দামে ডলার কিনে চাহিদা মেটাচ্ছে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডলার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত নীতিমালা ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ কোনোভাবেই কাজ করছে না। ডলার-সংকট নিয়ন্ত্রণে মূল বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। ডলারের দর বাজারভিত্তিক না করায় এখন হুন্ডি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের আগস্টে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল। এ সময় ডলারে দর ছিল ৮৬ টাকা। যা নিয়ে উচ্ছ্বাস করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ডলার বিক্রি শুরু করে। দর বেঁধে রাখার একগুঁয়ে সিদ্ধান্ত থেকে সরে বর্তমানে ডলার বিক্রি করছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। তত দিনে রিজার্ভে ধস নেমেছে। আইএমএফের হিসাবে ২১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। তবে নিট রিজার্ভ ১৭ বিলিয়নের নিচে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বর্তমানে ঢাকায় সফররত প্রতিনিধিদল ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ দিচ্ছে। এটা নাহলে ডলারের সংকট আরও প্রকট হবে এমন ইঙ্গিত সংস্থাটির।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডলারের এক ধাক্কা দেশের সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। টাকার মান কমায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। ডলার বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে সামনে আরও খেসারত দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সাশ্রয়ে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্টে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারে আমদানি বিল পরিশোধ করা হতো। গত জুলাইতে তা প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। বিগত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তা ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ও ৫ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পরে ডলার-সংকট বেড়েছে। এটা শুধু দেশের ভেতরের বিষয় নয়। ডলারের সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। ডলারের বাজারের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সামনে ডলার-সংকট দূর হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

সৈয়দ জামিলের অভিযোগের জবাবে যা লিখলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

বগুড়ায় ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত