Ajker Patrika

নিত্যপণ্যের দাম বিশ্বে কমছে, দেশে বাড়ছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নিত্যপণ্যের দাম বিশ্বে কমছে, দেশে বাড়ছেই

বিশ্ববাজারে মাংস, দুধ, ডিম, আলু ও গমের দাম অনেক কমলেও দেশে উল্টো তা বাড়ছে। বছর ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম ৫০ শতাংশ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। আর বাংলাদেশে এসব পণ্য পর্যাপ্ত উৎপাদন হলেও দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। সাধারণ ভোক্তারা এর নিরপরাধ ভুক্তভোগী হচ্ছে। 

নিত্যপণ্যের আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে আমেরিকান ডিমের দাম ৫০ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে। গমের দাম কমেছে ৩২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আলুর দাম কমেছে ৩১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। গরুর মাংসের দাম কমেছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। পোলট্রি মুরগির দাম কমেছে ৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আর দুধের দাম কমেছে ১৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। 

আর বাংলাদেশের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একই সময়ে উল্টো চিত্র বাংলাদেশে। গত এক বছরে এ দেশে পণ্যগুলোর দাম লাগামহীন বেড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবের সঙ্গে বাজারের বাস্তব হিসাবে ব্যাপক গরমিল রয়েছে। টিসিবি বেশ খানিকটা রক্ষণশীল তথ্য দিলেও তাদের হিসাবেও পণ্যগুলোর দাম অনেক বাড়তি। টিসিবি বলছে, এক বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। পোলট্রির দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ। আলুর দাম বেড়েছে ১০২ শতাংশ। ডিমের দাম এত বেড়েছে যে, টিসিবি ওই পণ্যটির দামের পরিবর্তন উল্লেখই করেনি।

গতকাল রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় আলেয়া নামের এক পোশাককর্মীর সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘যে পণ্যই কিনতে যাই না কেন, কোনোটিই আয়ত্তের মধ্যে নেই। আলু আর ডিম দিয়ে একসময় দিন পার করতাম। এখন এগুলোর দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ 

আলেয়ার মতো মধ্যবিত্ত থেকে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কমবেশি সবাই নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের চাপে হিমশিম খাচ্ছে। দেশে উৎপাদিত পণ্য কিংবা বিদেশ থেকে আমদানি করা—যা-ই হোক না কেন, সব পণ্যের দামই কারণে-অকারণে বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি এখন দুই অঙ্কের ঘর ছুঁই ছুঁই।

বাংলাদেশ আলু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিবছর চাহিদার চেয়ে পণ্যটির উৎপাদন বেশি হয়। অভিযোগ রয়েছে, কয়েক মাস ধরে এ পণ্যটির দর লাগামহীন বাড়ানো হয়েছে। একপর্যায়ে তা ৭০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। সরকার প্রতি কেজি আলুর দাম হিমাগার পর্যায়ে ২৭ টাকা আর খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রেতারা তা মানছেন না। 

ডিমও সরকার-নির্ধারিত দামে বিক্রি করেনি বিক্রেতারা। একপর্যায়ে আমদানির অনুমোদন দেওয়ার পর ডিম-আলুর দাম সামান্য কমেছে। কিন্তু সেটিও সহনীয় মাত্রায় আসেনি। এ রকম প্রায় সবগুলো পণ্যের দামই বিশ্ববাজারে গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। অথচ দেশের বাজারে কোনোভাবেই তা সহনীয় হচ্ছে না। বরং অভিযোগ রয়েছে, এখানে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে চলেছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি সীমিত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ ভোক্তারা মনে করেন, সরকারের জাতীয় ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তর বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা আর কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা করেই কাজ সারছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত