Ajker Patrika

পোশাকের ক্রয়াদেশ কমেছে আশঙ্কাজনক

  • ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ইউডি কমেছে ৩৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৪২ শতাংশ।
  • পোশাকের দাম কমিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতারা।
  • গ্যাসের দাম বাড়ার আশঙ্কায় রপ্তানি অর্ডার ফিরিয়ে দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের তৈরি পোশাকশিল্প হঠাৎ করেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি। বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার চাপ, ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ব্যয় এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আরও দুঃসংবাদ হলো, চলতি বছরের জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে পোশাক রপ্তানির ক্রয় আদেশ (ইউডি) ৪২ শতাংশ কমে গেছে, যা গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। জানুয়ারিতে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও পরের মাসেই অপ্রত্যাশিত এই ধস শিল্পের স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে।

রপ্তানি আদেশের প্রবণতা নির্ধারণে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির জন্য এই সনদ নিতে হয়। তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন দিয়ে থাকে বিজিএমইএ এবং নিট পোশাক শিল্পের জন্য বিকেএমইএ, যা মূলত রপ্তানি বাজারের প্রস্তুতির প্রতিফলন হিসেবে কাজ করে। সেই ইউডি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা অঞ্চলে ইউডি ৩৭ শতাংশ কমেছে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই হার ৪২ শতাংশ কমে গেছে। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার উদ্যোক্তারা ১৮৫ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের সমমূল্যের ইউডি নিয়েছেন, যা জানুয়ারির তুলনায় ৩৭ শতাংশ কম। চট্টগ্রাম অঞ্চলের উদ্যোক্তারা ১১ কোটি ডলারের সমমূল্যের ইউডি নিয়েছেন, যা জানুয়ারির তুলনায় ৪২ শতাংশ কম। এই পরিসংখ্যান দেখে অনেক বিশেষজ্ঞ এবং শিল্পমালিকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষের মতে, এই পরিসংখ্যানের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, বিশেষ করে ক্রেতাদের চাপ এবং পোশাকের দাম কমানোর প্রবণতা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিট পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আজকের পত্রিকাকে জানান, রপ্তানি ক্রয় আদেশ যে হারে কমেছে, তা অপ্রত্যাশিত। এর পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ স্পষ্ট নয়। বরং চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে অনেক বিদেশি বায়ার বাংলাদেশের কারখানাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে, যা আদেশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। তবে মূল সমস্যা হলো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো পোশাকের দাম কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে অনেক শিল্পমালিক বাধ্য হয়ে ক্রয় আদেশ ফিরিয়ে দিচ্ছেন, কারণ গ্যাসের দাম বাড়লে নির্ধারিত মূল্যে উৎপাদন করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতির ফলে ইউডির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে কি না, তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

তবে, এই সংকটের মধ্যেও কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পোশাক রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেড়ে ২৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে সামগ্রিক রপ্তানি আয় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ২৮ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছর ছিল ২৫ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। এটি সামগ্রিকভাবে রপ্তানি খাতের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

যে কারণে অনেক উদ্যোক্তা এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাময়িকভাবে রপ্তানি আদেশের কমতি হওয়ার পরও এটি দীর্ঘ মেয়াদে আবার বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল জানান, কিছু রপ্তানি মৌসুমভিত্তিক হয় এবং মৌসুম শেষ হওয়ার পর এই ধরনের কমতি আসতে পারে। তবে তিনি আশাবাদী, আগামী মাসে ইউডি আবারও বৃদ্ধি পাবে এবং এটি একটি ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে।

এ ছাড়া, কিছু বিদেশি শিল্পমালিক চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে স্থানীয় কারখানামালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির জন্য লাভজনক হতে পারে। তবে, ক্রেতারা দাম কমানোর চেষ্টা করছেন, যা শিল্পমালিকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত