Ajker Patrika

জনতা ব্যাংকে প্রস্তাবিত পদোন্নতি নীতিমালা

মেধার চেয়ে চাকরির মেয়াদে জোর, বঞ্চনার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মেধার চেয়ে চাকরির মেয়াদে জোর, বঞ্চনার আশঙ্কা

জনতা ব্যাংকের প্রস্তাবিত নতুন পদোন্নতি নীতিমালায় চাকরির মোট মেয়াদকে প্রধান বিবেচনায় এনে নম্বর নির্ধারণ করায় গভীর অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ব্যাংকের অভ্যন্তরে। বিশেষত, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে ২০১৯ সাল ও পরবর্তী সময়ে সরাসরি জ্যেষ্ঠ অফিসার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ নীতিমালায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় দেখা গেছে, চাকরির মেয়াদের ভিত্তিতে ২৫ বছরে সর্বোচ্চ ৭ নম্বর বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এতে প্রতিবছর দশমিক ২৮ নম্বর করে হিসাব করা হবে। অর্থাৎ ২০১১ সালে যোগদানকারী একজন কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড) এবং ২০১৯ সালে সুপারনিউমারারি পদোন্নতিপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা ২০২৪ সালের শেষে পান প্রায় ৩.৬৪ নম্বর, আর ২০১৯ সালে সরাসরি জ্যেষ্ঠ অফিসার (৯ম গ্রেড) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রাপ্তি মাত্র ১.৪০ নম্বর। যদিও উভয়ের অভিজ্ঞতা প্রায় সমপর্যায়ের, তা সত্ত্বেও নিয়োগের ধরন ও সময়ের পার্থক্যে সৃষ্টি হচ্ছে বড় বৈষম্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অভিজ্ঞতা অবশ্যই মূল্যবান, তবে প্রমোশন নীতিমালায় সেটি একমাত্র মানদণ্ড হতে পারে না। একজন কর্মকর্তা যদি কম সময়ের মধ্যে দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হন, তাহলে তাঁকেও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। শুধু চাকরিতে প্রবেশের সময় ধরে নম্বর দিলে, সেটি প্রমোশন ব্যবস্থাকে পক্ষপাতমূলক করে তুলবে। এতে করে প্রতিভাবান, দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর্মকর্তারা হতাশ হবেন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।

তাঁরা আরও জানান, সুপারনিউমারারি (অতিরিক্ত আসনে অভ্যন্তরীণভাবে প্রমোশন পাওয়া) কর্মকর্তারা বছরের হিসাবে বেশি নম্বর পাওয়ায় মৌখিক পরীক্ষায়ও বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। ফলে নতুন ও প্রতিভাবান কর্মকর্তারা শুরুতেই পিছিয়ে পড়েন।

নীতিমালা অনুযায়ী, এজিএম ও ডিজিএম পর্যায়ের পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষায় ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। এর মধ্যে ৫ নম্বর আগের ৯০ নম্বরের আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হবে, যা মূলত চাকরির মেয়াদের ওপর নির্ভর করে। এ ব্যবস্থাকেও কর্মকর্তারা ‘দ্বৈত বৈষম্য’ হিসেবে দেখছেন।

নীতিমালাটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, প্রজ্ঞাপন আকারেও প্রকাশ হয়নি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। কেউ যদি জানতে চান, সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। মজিবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জনতা ব্যাংক

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, নীতিমালাটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, প্রজ্ঞাপন আকারেও প্রকাশ হয়নি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। কেউ যদি জানতে চান, সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সাধারণত ‘ফিডার পদের’ কর্মকালকে পদোন্নতির ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়, পুরো চাকরির সময়কাল নয়। জনতা ব্যাংকের নতুন প্রস্তাবিত নীতিমালা এ প্রচলিত রীতি থেকে সরে এসে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

জনতা ব্যাংকের প্রস্তাবিত পদোন্নতি নীতিমালায় ‘সমগ্র চাকরির সময়কাল’ বিবেচনায় ৭ নম্বর বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত একধরনের নীতিগত বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে। এম হেলাল আহমেদ জনি, রিসার্চ ফেলো, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ

২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনেও বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক পদে নিয়োগে কেবল ফিডার পদের কর্মকাল বিবেচনা করতে হবে। জনতা ব্যাংকের ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ অন্যান্য ব্যাংকেও বৈষম্যের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে পেশাগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনতা ব্যাংকের প্রস্তাবিত পদোন্নতি নীতিমালায় ‘সমগ্র চাকরির সময়কাল’ বিবেচনায় ৭ নম্বর বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত একধরনের নীতিগত বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে। এতে সরাসরি জ্যেষ্ঠ অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত যোগ্য কর্মকর্তারা বাস্তবে প্রমোশনে পিছিয়ে পড়বেন, যদিও তাঁদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা মোটেই কম নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস: এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মুকিতুলের বিরুদ্ধে এবার মামলা

রক্ত কেনা যায় না—ইয়েমেনে নিমিশাকে ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি মাহদির পরিবারের

২৫ সেকেন্ডে ১২ গুলি, হাসপাতালে গ্যাংস্টারের শরীর ঝাঁঝরা

গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় ফেসবুকে সরব ইসলামপুরের পলাতক আওয়ামী নেতারা

গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহত ৪ জনের ময়নাতদন্ত হলো না, প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ডিআইজি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত