Ajker Patrika

ব্যবসায়ীদের ব্যাংকঋণ নির্ভরতা কমাতে বললেন অর্থ উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২১: ১৬
মঙ্গলবার পুঁজিবাজারের অংশীজনদের সঙ্গে সভা করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মঙ্গলবার পুঁজিবাজারের অংশীজনদের সঙ্গে সভা করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের বৃহৎ করপোরেশনগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তাদের ব্যাংকঋণ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পুঁজিবাজারের অংশীজনদের সঙ্গে সভা শেষে এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন বাজার ভালো করার সময় এসেছে। গত ১৫ বছরে এ সুযোগ পাওয়া যায়নি। তাই, পুঁজিবাজারের ভালো করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সবাই আগ্রহী। তার জন্য প্রয়োজনে নীতি পরিবর্তন করা হবে। তবে, সেটা দ্রুত করতে হবে। এ সরকার দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে না। কিন্তু, বাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো রেখে যেতে হবে। এ জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন বলেন, ‘শুধু রাষ্ট্রীয় কোম্পানি না, ভালো ভালো যে প্রাইভেট কোম্পানি আছে, করপোরেশনগুলো আছে, তারা ওই ফ্যামিলি বেইজড, ইসে (তালিকাভুক্ত) করতে চায় না। আমরা উৎসাহ দিচ্ছি তারা যাতে আসে। তাতে আপনার বাজারের ভিত্তি মজবুত হয়। ভালো শেয়ার আসলে লোকজনের পার্টিসিপেশন বাড়ে। রাষ্ট্রীয় কোম্পানিকেও আনার চেষ্টা করব।’

খেলাপি ঋণ কমাতে এবং পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকের দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়ন কমানো দরকার বলে মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশে লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট পুঁজিবাজার থেকে হয়, ব্যাংক থেকে না। ব্যবসায়ীরা শুধু ব্যাংক থেকেই পুরো টাকা নেবেন—তা হয় না। নিজেদের পুঁজি অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ থাকা উচিত। পুরোটা ঋণ নির্ভর হলে কেমনে হয়?’

পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য যথেষ্ট সহায়তা করছে সরকার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, আইসিবিকে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, এসব তো আস্থা ফেরাতেই করা হয়েছে।’

সালেহউদ্দিন বলেন, ‘এখন শুধু সংস্কার হচ্ছে। আমরা নতুন কোনো নীতিমালা করছি না। কাউকে ফেভার করা হচ্ছে না, অতীতে যেভাবে করা হয়েছে। কোনো শেয়ারের দর বাড়িয়ে দিতে পলিসি করা হয়েছিল-কার শেয়ারটা কে বাড়াবে তা নিয়ে, আপনারা সবাই জানেন। এখন তা হবে না।’

ব্রোকারেজ হাউস, দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের সুবিধা–অসুবিধা নিয়ে কথা বলেছি। আমরা কনফিডেন্ট (আত্মবিশ্বাসী) যে, বাজার ভালো হবে।’

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এখনো অনেক কর্মকর্তা আছেন, যাদের বিরুদ্ধে কারসাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের রেখে আস্থা ফেরানো কীভাবে সম্ভব?—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘দু–একজনের জন্য আমাদের পলিসি বা অ্যাকশন নিতে সমস্যা হবে না। তারা যদি বাধা দেয়, তাহলে ডেফিনেটলি ব্যবস্থা নেব।’

সভায় অংশ নেওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ–আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, ‘আমরা ফিসক্যাল ইনসেনটিভ অর্থাৎ বাজেটে শুল্কসহ বিভিন্ন ছাড় দেওয়ার কথা বলেছি। তাদের (বিদেশি প্রতিষ্ঠান) সুবিধা না দিলে তো আসবে না। তিনি (উপদেষ্টা) ফিল করেছেন, ইনসেনটিভ দিতে হবে। বলেছেন, দেওয়া লাগবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, আগামী বাজেটে এ রকম কিছু থাকবে। বর্তমান উপদেষ্টা তো এর আগে বৈঠক করে মূলধনী আয়ের ওপর করছাড় দিয়েছেন। এ রকম কিছু ইনসেনটিভ লাগবে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের উন্নয়নে।’

পুঁজিবাজারের সংকট কাটাতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় অংশ নেন—বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, ডিএসই চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

এ ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) এবং ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) প্রতিনিধিও সভায় অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত