Ajker Patrika

ভরা মৌসুমেও চড়া চালের দাম, করপোরেটে আঙুল

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১১: ৫৮
ভরা মৌসুমেও চড়া চালের দাম, করপোরেটে আঙুল

আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে কিছুদিন আগেই। এমন ভরা মৌসুমে চালের বাজার বরাবরই নিম্নমুখী থাকে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন রকম। সরবরাহে টান না থাকলেও গ্রাম থেকে শহর—সবখানেই চড়া চালের দাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সিটি রাইস এজেন্সির বিক্রেতা বেলায়েত হোসেন গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘নির্বাচনের আগে যেই বস্তাডা তেইশ শ টাকায় কিনছি, এখন সেইটা পঁচিশ শর কমে পাইতেছি না। তাহলে কম দামে চাল বিক্রি করবো কেমনে?’ তিনি জানান, গত বছর এই সময়ে ৫০ কেজি মোটা চালের (ব্রি-২৮) বস্তা চালকলমালিকদের কাছ থেকে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনেছিলেন। সেই চালই এখন মোকাম থেকে আড়াই হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর ঢাকার আড়তে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ২ হাজার ৬০০ টাকা। একইভাবে বেড়েছে অন্যান্য চালের দামও।

সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চাল ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, মাঝারি চাল প্রায় ৩ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।

চালের দাম বাড়ার জন্য আড়তদার ও চালকলমালিকেরা আঙুল তুলছেন করপোরেট প্রতিষ্ঠান তথা বড় কোম্পানিগুলোর দিকে। তাঁরা বলছেন, এবার ধানের উৎপাদন কিছুটা কম। তার ওপর বড় কোম্পানিগুলো ধান কিনে মজুত করায় চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে।

এই অবস্থায় গত কয়েক দিন অবৈধ মজুতবিরোধী অভিযান চালিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে নওগাঁর বাজারে ধান ও চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তিন দিনের ব্যবধানে নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম কমেছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, আর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম কমেছে ১ থেকে ২ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এখনো আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের মেসার্স সিরাজ অ্যান্ড সন্সের বিক্রেতা মোহাম্মদ খোকন বলেন, ‘বড় কোম্পানিগুলো ধান কিনে স্টক করছে, যার কারণে ছোট মোকামের মালিকেরা ধান পাচ্ছেন না। বড় কোম্পানিগুলো চালের ব্যবসাটা জিম্মি করে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে অবস্থা আরও খারাপ হবে।’

কয়েকজন চালকলমালিক জানান, বোরো মৌসুমে এবার ফলন অনেক কম ছিল। এরপর আমন মৌসুমেও বৃষ্টি হওয়ায় কিছু ধান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের উৎপাদন কিছুটা কম। আর বড় কোম্পানিগুলো প্রচুর পরিমাণে ধান কিনে নেওয়ায় স্থানীয় মোকামের মালিকেরা ধান পাচ্ছেন না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স সাগর অটো রাইস মিলসের দায়িত্বে থাকা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সাগর বলেন, ‘গ্রুপ অব কোম্পানিজ যারা আছে, তারা বাজার অনেকটা অস্থির করেছে। বড় কোম্পানিগুলোকে চালের ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া উচিত হয়নি।’

মোকামের মালিকেরা জানান, বাজারে দাম বাড়লেও তাঁদের বিক্রি নেই। কারণ, কম দামে চাল বিক্রি করতে সরকারের দিক থেকে চাপ থাকায় ঢাকার আড়তদারেরা সপ্তাহখানেক ধরে চাল কিনছেন না। মেসার্স ফারুক অটো রাইস মিলের ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিক্রি নেই বললেই চলে। আড়তদারেরা চাল কিনছেন না; বলছেন, আগে দেখি বাজার কোন দিকে যায়।’

চালের বাজার অস্থিতিশীল হলেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ধান ও চালের কোনো সংকট নেই। ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে চালের মজুত ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪৮ টন, আর ধানের মজুত ১৬ হাজার ৯০০ টন।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরাসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে মোটা চাল (ব্রি-২৮) প্রতি কেজি ৪ টাকা বেড়ে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। সরু (মিনিকেট) চালের দাম প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৪ টাকা। সপ্তাহ দুয়েক আগেও ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। মাঝারি (পাইজাম) চালের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দাম কমাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামীকাল রোববার থেকে আমদানিকারকেরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) নিতে পারবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত তিন দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে খুচরা ও পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫-৩০ টাকা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আজ শনিবার অনলাইনে এক জরুরি বৈঠক করে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে দুই মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে কৃষিসচিব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংকে আইপি দেওয়ার নির্দেশনা দেয়।

এই উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ বৈঠকের পর আমাদের আইপি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মোট ৫০ জন আমদানিকারককে আইপি দেওয়া হবে। প্রতিজন ৩০ টন করে আমদানি করতে পারবে। সাধারণত আমদানি করতে তিন মাস সময় পাওয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা রোববার সকাল ১০টায় সার্ভার খুলে দেব। তারপর ৫০ জন হলে আবার সার্ভার বন্ধ করে দেব। অনেকটা ট্রেনের টিকিটের মতো। আমাদের কাছে সাড়ে তিন হাজার আবেদন ছিল। যা আমরা ফেরত দিয়েছিলাম। মূলত তাদের মধ্য থেকেই এই আবেদন নেওয়া হবে।’

গত নভেম্বরের শুরুতে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ে। ওই সময় এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ৮০-৯০ টাকার পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকায় ওঠে।

তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানি করার কথা জানিয়েছিল। এরপর কিছুটা কমে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয়ের আপত্তির মুখে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয় রুপি এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হলো যেভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৩৯
ভারতীয় রুপি ও মার্কিন ডলার। ছবি: সংগৃহিত
ভারতীয় রুপি ও মার্কিন ডলার। ছবি: সংগৃহিত

মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মূল্য এখন ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে। এই মুদ্রামান আরও নিম্নমুখী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বছর ধরেই রুপির দরপতন অব্যাহত ছিল। এখন এর মান কমেছে ৫ শতাংশেরও বেশি। যা এই মুদ্রাকে এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত করেছে।

আর রুপির দরপতনে সবচেয়ে বড় আঘাতটি এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হলে রুপির এই পতন ঠেকানোর একটি সম্ভাবনা ছিল কিন্তু সেই চুক্তিও অধরা রয়ে গেছে।

তবে এর প্রধান কারণ হলো ভারতের শেয়ারবাজার। ১৯৯৩ সালের পর থেকে ইন্ডিয়ান স্টক মার্কেট অন্যান্য বাজারগুলোর তুলনায় সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে। এই বছর এমএসসিআই ইন্ডিয়া সূচকের ডলার রিটার্ন ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ, যেখানে বৃহত্তর উদীয়মান বাজার ইনডেক্সের রিটার্ন দাঁড়িয়েছে ২৭.৭ শতাংশে।

এই ব্যবধানের ফলে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা দেশের বাজার থেকে তুলে নিয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার। আর সেগুলো বিনিয়োগ করেছে ভালো পারফর্ম করা বাজারগুলোতে।

রুপির নিম্নমুখী অবস্থানে যারা কিছুটা হলেও লাভবান হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন রপ্তানিকারকেরা। মার্কিন চড়া শুল্কের কারণে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। রুপির দরপতন তাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।

ভারতের প্রযুক্তিখাতের শেয়ার কয়েকটি ত্রৈমাসিক ধরে একটি সীমিত পরিসরে আটকে ছিল। তা এই সপ্তাহে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এছাড়া আর কোনো ইতিবাচক দিক চোখে পড়ে না।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ভারতের চলতি হিসাবের ঘাটতি কিছুটা কমলেও পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতি অক্টোবর মাসে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৪১.৭ বিলিয়ন ডলারে, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। রুপি আরও নিচে নামতে থাকায় জ্বালানি আমদানি ব্যয় বাড়বে; পাশাপাশি বাড়বে বিদেশি ঋণের খরচও। আর এর প্রভাব পড়বে বিমান, ইলেকট্রনিকস ও অটোমোবাইলের মতো বিভিন্ন খাতের উৎপাদন ব্যয়ে।

এ অবস্থায় বিদেশ ভ্রমণ ও বিদেশে শিক্ষার খরচও ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি আনন্দ নাগেশ্বরন বলেন, রুপির দরপতন নিয়ে তিনি ‘নিদ্রাহীন রাত’ কাটাচ্ছেন না। স্বল্প মুদ্রাস্ফীতি ও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি তাঁকে চিন্তামুক্ত রাখছে। রুপির দুর্বলতা ছিল নরেন্দ্র মোদির প্রথমবারের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থিতার সময় বড় প্রচারণা–ইস্যুগুলোর একটি। ২০১৩ সালে মোদি যখন প্রচার চালাচ্ছিলেন, তখন রুপির বিনিময়মূল্য ছিল ডলারের বিপরীতে ৬০.৫; আর তিনি দায়িত্ব গ্রহণের বছর তা ছিল ৬১। তবে ক্ষমতায় আসার পর মুদ্রার অবমূল্যায়নের অর্থনৈতিক প্রভাবকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি মোদি সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়া-ভেনেজুয়েলাকে মার্কিন হুমকি, সরবরাহ কমার শঙ্কায় ঊর্ধ্বমুখী তেলের দাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৫
রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদনেও নজর রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। ছবি: মার্কেটস ডট কম
রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদনেও নজর রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। ছবি: মার্কেটস ডট কম

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জ্বালানি চাহিদা বাড়াতে আগামী সপ্তাহে সুদের হার কমাতে পারে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ। এ সম্ভাবনা থেকে তেলের দাম ১ শতাংশ বেড়ে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। পাশাপাশি, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও হস্তক্ষেপের কারণে রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে সরবরাহ সীমিত হয়ে আসতে পারে এ উদ্বেগও রয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রেন্ট ফিউচার ৪৯ সেন্ট বা ০.৮% বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৩.৭৫ ডলারে স্থির হয়েছে। একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) অপরিশোধিত তেল (ক্রুড) ৪১ সেন্ট বা ০.৭% বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেলপ্রতি ৬০.০৮ ডলারে স্থির হয়েছে। এই দুটিই হলো ১৮ নভেম্বরের পর অপরিশোধিত তেলের জন্য সর্বোচ্চ সমাপনী দর।

সাপ্তাহিক হিসাবে, ব্রেন্ট প্রায় ১% এবং WTI প্রায় ৩% বেড়েছে, যা উভয় চুক্তির জন্য ধারাবাহিক দ্বিতীয় সপ্তাহের লাভ নির্দেশ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে ৯-১০ ডিসেম্বর ফেডের হার কমানোর সম্ভাবনার ওপর নতুন করে প্রত্যাশা জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

তিন মাসের ধারাবাহিক শক্তিশালী বৃদ্ধির পর মার্কিন ভোক্তা ব্যয় গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে পরিমিতভাবে বেড়েছে। এ থেকে বোঝা যায় তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শেষে অর্থনীতিতে গতি কমেছে, কারণ দুর্বল শ্রমবাজার এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় চাহিদা হ্রাস করেছে।

বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জ অপারেটর সিএমই গ্রুপের ফেডওয়াচ টুল অনুসারে, ব্যবসায়ীরা আগামী সপ্তাহে ফেড ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা ৮৭ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছেন।

এদিকে গতকাল শুক্রবার শীর্ষ চীনা ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ফোনালাপের মাধ্যমে বাণিজ্যবিষয়ক আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে তাদের বাণিজ্যযুদ্ধের সমাধানে একটি চুক্তি বাস্তবায়নের চলমান প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

অন্য বাণিজ্য-সংক্রান্ত খবর অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি মেক্সিকো ও কানাডার নেতাদের সঙ্গে গতকাল বাণিজ্যবিষয়ক আলোচনা করবেন, যাঁদের সঙ্গে তাঁরা ২০২৬ বিশ্বকাপ ড্রয়ের জন্য ওয়াশিংটনে একত্রিত হবেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশের মধ্যে যেকোনো আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য চাপ কমানো হলে তা অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং জ্বালানি চাহিদা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদনেও নজর রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এই দুটি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ওপেক প্লাসের সদস্য দেশ থেকে তেলের সরবরাহ ভবিষ্যতে বাড়বে নাকি কমবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তাঁরা।

এই সপ্তাহে তেলের দাম বাড়ার পেছনে আরেকটি কারণ হলো ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার কোনো গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি না হওয়া।

পিভিএমের তেল বাজার বিশ্লেষক তামাস ভার্গাস বলেছেন, ‘ইউক্রেনীয় শান্তি আলোচনায় অগ্রগতির অভাব একটি তেজি মনোভাব সৃষ্টি করছে, কিন্তু অন্যদিকে, ওপেকের স্থিতিশীল উৎপাদন একটি মন্দার সীমা তৈরি করছে। এই দুটি বিপরীত শক্তি ট্রেডিংকে আপাতদৃষ্টিতে শান্ত করে তুলছে।’

ছয়টি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানায়, রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নে সাহায্য করে এমন তেলের রাজস্ব কমাতে গ্রুপ অব সেভেন দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ান তেল রপ্তানিতে মূল্যসীমার পরিবর্তে সম্পূর্ণ সামুদ্রিক পরিষেবা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে আলোচনা করছে।

তেল রপ্তানিকারী ওপেক প্লাসের সদস্য দেশগুলোর সংস্থা এবং রাশিয়ার মতো মিত্র দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। কোনো চুক্তি যা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে পারে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ বাড়াতে পারে।

এদিকে গতকাল দিল্লি সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে অব্যাহত জ্বালানি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দেশই বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সম্প্রসারণে সম্মত হলেও ভারতের কাছ থেকে সতর্ক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

বাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মূল্যের ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল খাতের প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান অয়েল কর্প এবং ভারত পেট্রোলিয়াম কর্প নিষিদ্ধ নয়—এমন সরবরাহকারীদের কাছ থেকে রাশিয়ার তেল লোড করার জন্য জানুয়ারির অর্ডার দিয়েছে।

অন্যদিকে ভেনেজুয়েলার মাদক পাচারকারীদের থামাতে সামরিক হস্তক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার প্রভাবও পড়ছে বৈশ্বিক তেল বাজারে।

তেল ও গ্যাস বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠান রাইস্টার্ড এনার্জি জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপ ভেনেজুয়েলার দৈনিক ১১ লাখ ব্যারেল ক্রুড তেল উৎপাদনের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এই ক্রুড অয়েলের বেশির ভাগই চীনে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানে ২৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্রিপ্টো ব্যবসা, দায়মুক্তির সুযোগ দিচ্ছে সরকার

পাকিস্তানের ২৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্রিপ্টো ব্যবসায় দায়মুক্তির সুযোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩১
সভাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব এবং পাকিস্তান ভার্চুয়াল অ্যাসেটস রেগুলেটরি অথরিটির (পিভিএআরএ) চেয়ারম্যান বিলাল বিন সাকিব। ছবি: পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়
সভাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব এবং পাকিস্তান ভার্চুয়াল অ্যাসেটস রেগুলেটরি অথরিটির (পিভিএআরএ) চেয়ারম্যান বিলাল বিন সাকিব। ছবি: পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়

পাকিস্তান সরকার গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, স্থানীয় ব্যাংকগুলো ঝুঁকি ও কমপ্লায়েন্স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় বছরে ২৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্রিপ্টো লেনদেনকারী পাকিস্তানি ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়মুক্তির সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এক শীর্ষ বৈশ্বিক ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ভার্চুয়াল অ্যাসেট পাকিস্তানের জিডিপি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। এরপরই এক উচ্চপর্যায়ের পরামর্শ সভায় এ ধারণা উত্থাপিত হয়।

এই ভার্চুয়াল সম্পদগুলোকে তরল মুদ্রা সরবরাহের (এম-১) অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। ভার্চুয়াল অ্যাসেটকে জামানত হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ এম-১ বৃদ্ধি করবে—সভায় এমনই মন্তব্য করেন বাইন্যান্সের এক সদস্য।

সভাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব এবং পাকিস্তান ভার্চুয়াল অ্যাসেটস রেগুলেটরি অথরিটির (পিভিএআরএ) চেয়ারম্যান বিলাল বিন সাকিব।

সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়, সভাটি পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিজিটাল অ্যাসেট ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে আলোচনা ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আয়োজন করা হয়েছিল। সভায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) গভর্নরও উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি দেশের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধানেরা, বাইন্যান্সের শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং এর বৈশ্বিক প্রধান নির্বাহী রিচার্ড টেংও অংশ নেন।

সভায় সার্বভৌম ঋণকে টোকেনাইজ করে তারল্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রবেশাধিকার বিস্তৃত করা এবং ব্লকচেইনভিত্তিক বিধিবদ্ধ আর্থিক উপকরণে পাকিস্তানকে আঞ্চলিক অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা যাচাই করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কর ও কমপ্লায়েন্স কাঠামোর জন্য বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন, যার মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত এক্সচেঞ্জগুলোকে প্রধান তদারকিতে আনা, স্থিতিশীলতা রক্ষায় ধাপে ধাপে মূলধনি মুনাফা কাঠামো তৈরি এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়মুক্তির সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সম্পদ নিয়ন্ত্রিত প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরে উৎসাহ দেওয়া—এসব বিষয় নীতিতেই উল্লেখ করা হয়েছে।

ডনকে জানানো সূত্র বলছে, বাইন্যান্স দল জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ পাকিস্তানি বাইন্যান্সে নিবন্ধিত ট্রেডার, যার মধ্যে ৪০ লাখ সক্রিয়। শুধু বাইন্যান্সেই তাঁরা প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের ভার্চুয়াল সম্পদ ধরে রেখেছেন আর তাঁদের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার।

অন্যান্য ক্রিপ্টো কোম্পানির পাকিস্তানি ব্যবহারকারীরা এই হিসাবের অন্তর্ভুক্ত নয়। বাইন্যান্সের বিশ্বব্যাপী সক্রিয় ব্যবহারকারী ৩০ কোটির বেশি, মূলত ২২টি দেশে।

বাইন্যান্সের এক কর্মকর্তা বলেন, এর ফলে পাকিস্তানি ব্যবহারকারীদের হাতে থাকা ৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ পাকিস্তানি রুপিতে পুনরায় অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। ব্যাংকগুলো স্টেবলকয়েন উত্তোলন সুবিধাও দিতে পারবে।

বাইন্যান্স আরও জানিয়েছে, স্বয়ংক্রিয় লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর ব্যাংকের কাছে সর্বোচ্চ ঋণ দায় নির্ধারণ করা হবে, যা পাকিস্তানি ব্যবহারকারীদের ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত