Ajker Patrika

ভরা মৌসুমেও চড়া চালের দাম, করপোরেটে আঙুল

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১১: ৫৮
ভরা মৌসুমেও চড়া চালের দাম, করপোরেটে আঙুল

আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে কিছুদিন আগেই। এমন ভরা মৌসুমে চালের বাজার বরাবরই নিম্নমুখী থাকে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন রকম। সরবরাহে টান না থাকলেও গ্রাম থেকে শহর—সবখানেই চড়া চালের দাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সিটি রাইস এজেন্সির বিক্রেতা বেলায়েত হোসেন গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘নির্বাচনের আগে যেই বস্তাডা তেইশ শ টাকায় কিনছি, এখন সেইটা পঁচিশ শর কমে পাইতেছি না। তাহলে কম দামে চাল বিক্রি করবো কেমনে?’ তিনি জানান, গত বছর এই সময়ে ৫০ কেজি মোটা চালের (ব্রি-২৮) বস্তা চালকলমালিকদের কাছ থেকে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনেছিলেন। সেই চালই এখন মোকাম থেকে আড়াই হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর ঢাকার আড়তে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ২ হাজার ৬০০ টাকা। একইভাবে বেড়েছে অন্যান্য চালের দামও।

সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চাল ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, মাঝারি চাল প্রায় ৩ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।

চালের দাম বাড়ার জন্য আড়তদার ও চালকলমালিকেরা আঙুল তুলছেন করপোরেট প্রতিষ্ঠান তথা বড় কোম্পানিগুলোর দিকে। তাঁরা বলছেন, এবার ধানের উৎপাদন কিছুটা কম। তার ওপর বড় কোম্পানিগুলো ধান কিনে মজুত করায় চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে।

এই অবস্থায় গত কয়েক দিন অবৈধ মজুতবিরোধী অভিযান চালিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে নওগাঁর বাজারে ধান ও চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তিন দিনের ব্যবধানে নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম কমেছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, আর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম কমেছে ১ থেকে ২ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এখনো আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের মেসার্স সিরাজ অ্যান্ড সন্সের বিক্রেতা মোহাম্মদ খোকন বলেন, ‘বড় কোম্পানিগুলো ধান কিনে স্টক করছে, যার কারণে ছোট মোকামের মালিকেরা ধান পাচ্ছেন না। বড় কোম্পানিগুলো চালের ব্যবসাটা জিম্মি করে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে অবস্থা আরও খারাপ হবে।’

কয়েকজন চালকলমালিক জানান, বোরো মৌসুমে এবার ফলন অনেক কম ছিল। এরপর আমন মৌসুমেও বৃষ্টি হওয়ায় কিছু ধান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের উৎপাদন কিছুটা কম। আর বড় কোম্পানিগুলো প্রচুর পরিমাণে ধান কিনে নেওয়ায় স্থানীয় মোকামের মালিকেরা ধান পাচ্ছেন না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স সাগর অটো রাইস মিলসের দায়িত্বে থাকা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সাগর বলেন, ‘গ্রুপ অব কোম্পানিজ যারা আছে, তারা বাজার অনেকটা অস্থির করেছে। বড় কোম্পানিগুলোকে চালের ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া উচিত হয়নি।’

মোকামের মালিকেরা জানান, বাজারে দাম বাড়লেও তাঁদের বিক্রি নেই। কারণ, কম দামে চাল বিক্রি করতে সরকারের দিক থেকে চাপ থাকায় ঢাকার আড়তদারেরা সপ্তাহখানেক ধরে চাল কিনছেন না। মেসার্স ফারুক অটো রাইস মিলের ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিক্রি নেই বললেই চলে। আড়তদারেরা চাল কিনছেন না; বলছেন, আগে দেখি বাজার কোন দিকে যায়।’

চালের বাজার অস্থিতিশীল হলেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ধান ও চালের কোনো সংকট নেই। ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে চালের মজুত ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪৮ টন, আর ধানের মজুত ১৬ হাজার ৯০০ টন।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরাসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে মোটা চাল (ব্রি-২৮) প্রতি কেজি ৪ টাকা বেড়ে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। সরু (মিনিকেট) চালের দাম প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৪ টাকা। সপ্তাহ দুয়েক আগেও ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। মাঝারি (পাইজাম) চালের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত