Ajker Patrika

খেলাপি কম, আস্থা বাড়ছে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
খেলাপি কম, আস্থা বাড়ছে

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা কিংবা লবণাক্ততা মোকাবিলায় দেশে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ বাড়ছে। টেকসই উন্নয়ন ও সবুজ প্রবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই ও সবুজ খাতে মোট ১,৭০৪ কোটি টাকা বেশি বিনিয়োগ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মার্চ শেষে টেকসই প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগেও ছিল ১ লাখ ৪৮ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে সবুজ প্রকল্পে বিনিয়োগ বেড়েছে ১১৮.৪৭ কোটি টাকা কোটি, যা বছরের শেষে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকায়।

সব মিলিয়ে এখন দেশে টেকসই ও সবুজ খাতে মোট বিনিয়োগ ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি—১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। বাকি অংশ এসেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আজকের পত্রিকাকে জানান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে বিনিয়োগ দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই ব্যাংকিং তালিকায় স্থান পাওয়া ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করায় আমাদের ব্যাংকে টেকসই খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। এই খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি খুবই কম, ফলে খেলাপি ঋণের হারও সর্বনিম্ন। ফলে টেকসই বিনিয়োগে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।’

টেকসই অর্থায়ন বলতে বোঝায় এমন প্রকল্পে বিনিয়োগ, যা পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। উদাহরণ হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ, পরিবেশবান্ধব ইট, বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি এবং সামাজিক দায়িত্বসম্পন্ন শিল্পকারখানার অর্থায়নকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ১১টি ক্যাটাগরিতে ৬৮ ধরনের টেকসই পণ্যে অর্থায়নের অনুমোদন দিয়েছে।

তবে সব সূচক ইতিবাচক নয়। টেকসই কৃষি খাতে মার্চ প্রান্তিকে বিনিয়োগ কমেছে ৮০৭ কোটি টাকা; ডিসেম্বর শেষে যেখানে এ খাতে অর্থায়ন ছিল ৮ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, মার্চ শেষে তা নেমে এসেছে ৭ হাজার ৯২৪ কোটিতে।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব সময় দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা, ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ ও সুশাসনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছি। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আরও ভালো করার চেষ্টা করব। পরিবেশবান্ধব টেকসই বিনিয়োগে রিটার্ন সাধারণত বেশি আসে। তবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে, তাহলেই বিনিয়োগ আরও বাড়বে।’

বিশ্লেষকদের মতে, কৃষি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া উদ্বেগজনক হলেও সামগ্রিকভাবে টেকসই অর্থায়নের এই প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির কাঠামোতে পরিবেশবান্ধব পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘টেকসই বিনিয়োগ শুধু প্রযোজকের দায় নয়, গ্রাহককেও এতে অংশ নিতে হবে। এটা আমাদের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির অংশ।’

বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক বছর ধরে সবুজ অর্থায়নে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রেটিং প্রকাশ করছে, যা এই খাতে প্রতিযোগিতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, এ ধরনের অর্থায়ন দেশের অর্থনীতিকে একদিকে যেমন ঝুঁকিমুক্ত করে, তেমনি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও বড় ভূমিকা রাখে। সবুজ অর্থনীতি এখন আর বিলাসিতা নয়, এটা ভবিষ্যতের টেকসই প্রবৃদ্ধির অপরিহার্য ভিত্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত