Ajker Patrika

মহামারিতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপের প্রবণতা, মুদ্রানীতিতে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মহামারিতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপের প্রবণতা, মুদ্রানীতিতে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই

চলমান করোনা সংকটের সুযোগে অনেকে ইচ্ছা করে ঋণখেলাপি হয়ে যেতে পারেন। বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে বিষয়ে সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। 

আজ মঙ্গলবার ‘সাম্প্রতিক মুদ্রানীতি কি অর্থনীতির বর্তমান চাহিদা মেটাতে পারবে? সিপিডির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন অনলাইনে এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। এ সময় সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্য গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন। 

সিপিডির পর্যালোচনায় বলা হয়, মহামারির মধ্যে দেশে ইচ্ছা করে ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা আছে। ফলে প্রণোদনার ঋণের টাকা ফেরত আসবে কি–না তা নিয়ে ব্যাংকগুলো চিন্তিত। এ বিষয়ে মুদ্রানীতিতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আশা করেছিল গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। 

এছাড়া চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জনে এই মুদ্রানীতি খুব সহায়ক হবে না বলেও মনে করে সিপিডি। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ করতে হবে। এই করোনার সময়ে ব্যক্তি খাতে এত ঋণ দেওয়া কঠিন। এতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে হবে না। আর এই সময় সাময়িক সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে যেন পুরোনো সংস্কারের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এছাড়া অধিক তারল্য ব্যবহারে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। 

এসময় প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রণোদনার টাকা বড় উদ্যোক্তারা ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু ছোট উদ্যোক্তারা প্রণোদনার অর্থ তেমন পাচ্ছেন না। ফলে ছোটরা ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না, তাঁরা পেছনে পড়ে যাচ্ছেন। মহামারির সময় এতে বৈষম্য বেড়ে যাবে, এমন আশঙ্কা আছে। 

সিপিডি মনে করে, বাজারে এখন অধিক তারল্য আছে। উৎপাদনশীল খাতে অর্থ না গিয়ে পুঁজিবাজারে যাচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছে সিপিডি। করোনার কারণে অর্থনীতির এই নাজুক অবস্থায়ও পুঁজিবাজারে যে চাঙাভাব দেখা যাচ্ছে তা অস্বাভাবিক বলেই মনে করেন তাঁরা। 

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ইদানীং সন্দেহজনক স্টকে বিনিয়োগ বাড়ছে। এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। কোথাও ‘ফাউল প্লে’ হচ্ছে কি–না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, নাকি শেয়ারের দাম বাড়িয়ে টাকা বানানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কাজ করতে পারে। 

রেমিট্যান্স অধিক তারল্য সৃষ্টি করছে কি–না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার সময়ে বিভিন্ন পরিবারের আয় কমেছে, তাদের সহায়তায় বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আসছে। ২ শতাংশ প্রণোদনাও কাজ করছে। রেমিট্যান্সের টাকা বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। 

সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী কয়েক মাস অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত