Ajker Patrika

পুঁজিবাজারে হাহাকার: পতন ঠেকাতে উদ্যোগ কম

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
পুঁজিবাজারে হাহাকার: পতন ঠেকাতে উদ্যোগ কম

ভয়াবহ দরপতন চলছে দেশের পুঁজিবাজারে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা দরপতনের সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই। কিন্তু পতনের কারণে পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। আস্থাহীনতা চরমে পৌঁছেছে। নতুন বিনিয়োগ আসছে না। এমতাবস্থায় দরপতন ঠেকিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অংশীজনদের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় আশার বাণী শোনালেও সংকটের মুহূর্তে পুঁজিবাজারের বড় অংশীজনেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। তবে অংশীজনেরা বলছেন, নীতিসহায়তার মাধ্যমে বাজারের স্থিতিশীলতা অর্জনে কাজ করছেন তাঁরা। 

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারির পর থেকে শুরু হয়েছে টানা দরপতন। ওই দিন থেকে এখন পর্যন্ত সূচক হারিয়েছে ৫৬৮ পয়েন্ট। এর মধ্যে বিদায়ী সপ্তাহেই কমেছে ১৬৩ পয়েন্ট। 

১৭ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। ধারাবাহিকভাবে কমে সেটি দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ ৯ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এর অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে বা বিনিয়োগকারীদের টাকা ‘নাই’ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বিদায়ী সপ্তাহেই বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ১৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। 

বিদায়ী সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৯৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। অথচ গত ৭, ৮ ও ১১ ফেব্রুয়ারির গড় লেনদেন ১ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার বেশি। 

বিনিয়োগকারী সানী মাহমুদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের অভয় দিয়ে পুঁজিবাজারে ডেকে আনেন বড় স্টেকহোল্ডাররা। কিন্তু বিপদের সময় তাঁরা সাপোর্ট দেন না। 

চলমান দরপতনের মধ্যে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজারের উন্নয়নে আমাদের উদ্যোগ ছিল। আমরা নিজেরা (ব্রোকাররা) বসলাম। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসির সঙ্গে বসলাম। সবার সঙ্গেই বসেছি।’ 

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছিলাম। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুবই ইতিবাচক। তারল্য বাড়াতে তারা নীতিসহায়তা দেবে।’ 

তবে এই সময়ে বিশেষ কিছু করার নেই বলে মনে করেন মাজেদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আসলে এই সময়ে (রোজার মধ্যে) বাজার এ রকমই থাকে। কমোডিটি বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ে। আশা করি, খুব শিগগির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।’ 

মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারদের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরামের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর আনুষ্ঠানিকভাবে যে রকম উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সেভাবে এবার নেওয়া হয়নি। কারণ, সবাই যদি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন, তাহলে পতন রোধে সাপোর্ট দেওয়া কঠিন।’ 

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উদ্যোগ সম্পর্কে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, বাজার অনেকটাই পড়েছে। ওভার সোল্ড অবস্থায় আছে। বাই অটোমেটিক্যালি আসবে। কিছু করা লাগবে না, বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। 

রেজাউল করিম বলেন, এই পর্যায়ে বাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম বা গতি রোধে যেকোনো ধরনের কারসাজি বা নীতিবহির্ভূত কাজ রুখতে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত