Ajker Patrika

পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

সিলেট প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৪, ১৮: ৫৮
পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভারতের পাহাড়ি ঢলে ও ভারী বৃষ্টিতে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ঈদুল আজহার দিনে ভোগান্তিতে পড়েন মুসল্লিরা। পানিবন্দী অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছেন। ডুবে গেছে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র। 

এর আগে ২৭ মে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী হন। ওই পানি নিম্নাঞ্চল থেকে পুরোপুরি নামার আগেই আজ সোমবার আবার বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঈদের দিনে এই টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। 

সরেজমিন জানা গেছে, ঈদের নামাজ ঈদগাহে গিয়ে আদায় করতে পারেননি জেলা ও নগরের অধিকাংশ মানুষ। পশু কোরবানি দিতে গিয়ে পড়ছেন বিড়ম্বনায়। চারদিকে পানি থাকায় ও অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় এই সমস্যায় পড়েন মানুষ। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন অনেকে। 

সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ শুরু করেছেন। 

সিলেট নগরের উপশহর এলাকায় বসতঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। ছবি: আজকের পত্রিকা কোম্পানীগঞ্জের মহিষখেড় গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল আহমদ বলেন, ‘দুই সপ্তাহ গেল না আবারও বন্যা চলে এল। আগেরবারের চেয়ে এবার পানি বেশি বেড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। যার কারণে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। পানি বাড়তেই আছে। ঈদের নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মুসল্লিদের।’ 

এদিকে পাহাড়ি ঢলে সাদা পাথর, জাফলংসহ সিলেটের সীমান্তবর্তী সব পর্যটনকেন্দ্র পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এ কারণে পর্যটকেরা সরাসরি ওই সব জায়গায় যেতে পারছেন না। প্রশাসন থেকে এখনো বন্ধের কোনো ঘোষণা না এলেও পর্যটকদেরকে সতর্কতার সঙ্গে ভ্রমণের জন্য বলা হয়েছে। 

ঈদের মৌসুমে বন্যা পরিস্থিতির কারণে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ঈদ এলে মোটামুটি ব্যবসা হয় বলে তাঁরা সেভাবে প্রস্তুতি নেন। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। 

সাদা পাথর খেয়াঘাট এলাকায়র প্রসাধন ব্যবসায়ী সুহেল আহমদ বলেন, ‘ঈদে সাদা পাথরে অনেক বেশি পর্যটকের আগমন ঘটে। যার কারণে ঈদ এলেই আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। এবার ঈদেও ছিল তেমন প্রস্তুতি। টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে মানুষ আসছেন না সাদা পাথরে। কয়েক দিন আগে এই বন্যার কারণে এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল পর্যটনকেন্দ্র। পরে খুলে দেওয়া হলেও মানুষ ততটা আসেননি। ভেবেছিলাম ঈদ উপলক্ষে মানুষ আসবেন, ব্যবসা হবে। কিন্তু, এবারও বন্যা দেখা দেওয়ায় খুবই হতাশ আমরা।’ 

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার ভোর ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত) সিলেটে ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর ঈদের দিন ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেখানে এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। 

সজীব হোসাইন বলেন, ‘আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে এবং আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।’ 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে আজ সোমবার বেলা ৩টায় দুটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে দুপুর ১২টায় সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেলা ৩টায় ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসের সামনে জলাবদ্ধতা। ছবি: আজকের পত্রিকা এ ছাড়া, সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্ট, কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ, শেওলা, শেরপুর, লুবা নদীর লুবা ছড়া, সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্ট, ডাউকি নদীর জাফলং পয়েন্ট, সারিগোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্ট ও ধলাই নদীর ইসলামপুর পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। গত শুক্রবার ও শনিবার থেকে এসব নদীর পানি আরও বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। 

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বালাগঞ্জে ১০ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন। তাদের মধ্যে শুকনো খাবার ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলার ইউএনও (নির্বাহী কর্মকর্তা) থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। আমরা খোঁজখবর রাখছি। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী রয়েছে। আর পর্যটনকেন্দ্র এখনো বন্ধ করা হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত