Ajker Patrika

জগন্নাথপুরে আইইএলটিএস পাস করলেই ১৫-২০ লাখ টাকার ‘চুক্তিভিত্তিক বিয়ে’

জুয়েল আহমদ, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) 
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৯: ৪৮
Thumbnail image

সুনামগঞ্জের প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলায় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ইউরোপযাত্রার হিড়িক পড়েছে। উচ্চশিক্ষার নামে আইইএলটিএস পাস করে স্টুডেন্ট ভিসার পাশাপাশি কেয়ার ভিসাতেও তাঁরা পাড়ি জমাচ্ছেন যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সত্যিকারের বিয়ে, আবার কেউ কেউ কন্ট্রাক্ট ম্যারেজে (চুক্তিতে বিয়ে) ইউরোপ যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। স্থানীয়ভাবে লন্ডনপ্রবাসী হিসেবে পরিচিত। একসময় লন্ডনপ্রবাসী ছেলে কিংবা মেয়েকে আত্মীস্বজনদের কেউ বিয়ে করে এই উপজেলার অনেকেই লন্ডন যেতেন। পরে এ ধরনের বিয়েতে বর-কনের সম্মতি না থাকায় দিন দিন হ্রাস পায় লন্ডনযাত্রা। বর্তমানে আইইএলটিএস পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন পাড়ি জমানোর চল শুরু হয়েছে। সঙ্গে স্বামী বা স্ত্রীকে স্পাউস ভিসায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগকেও কাজে লাগাচ্ছেন তাঁরা। 

এইচএসসির পর আইইএলটিএসে নির্ধারিত পয়েন্ট অর্জন করে পাড়ি দিচ্ছেন লন্ডনে। এতে কলেজের ভর্তি ফিসহ থাকা খাওয়ার খরচ ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পড়ে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষা ছাড়াও আইইএলটিএস পাস করে কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে। এতে খরচ হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। এই ব্যয় সুরাহা করতে কেউ কেউ কন্ট্রাক্টে, আবার অনেকে সত্যিকারের বিয়ে করছেন। বিয়ের সময় কনে কিংবা ছেলে পক্ষের কাছ থেকে খরচের সমুদয় টাকা নেওয়া হচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইইএলটিএস পাস তরুণীকে বিয়ে করে লন্ডনে যাওয়া এক তরুণ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইইএলটিএস কনে এখন সোনার হরিণ! কেউ তো আর চাইলেই ২০-২২ লাখে লন্ডন আসতে পারবে না। তাই আইইএলটিএস পাস করা কনেকে বিয়ে করে লন্ডনে এসেছি। এতে আমার প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক তরুণ বলেন, ‘আমার পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল থাকায় আইইএলটিএস পাস করেও লন্ডন যেতে পারছি না। তাই বিয়ে করার চিন্তা করছি। অনেকেই যোগাযোগ করছেন; বলছেন তাঁরা কনে পক্ষ থেকে ১০-১৫ লাখ দেবেন। কিন্তু সব মিলিয়ে ৩০ লাখ টাকার প্রয়োজন। তাই ভাবছি ২০ লাখের কনে পেলে রাজি হয়ে যাব।’ 

জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, একসময় চাচাতো-খালাতো ভাইবোনের মধ্যে উভয় পরিবারের অভিভাবকদের সম্মতিতে বিয়ের মাধ্যমে লন্ডন যেতেন। পরিবেশের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে এ ধরনের বিয়ে এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে স্টুডেন্ট ও কেয়ার ভিসায় বিয়ের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীকে লন্ডন যাওয়ার চল শুরু হয়েছে। যার ফলে আইইএলটিএস পাস বর-কনেরা ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে বিবাহ করছেন। স্পাউস ভিসায় (ডিপেনডেন্ড) স্বামী বা স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যাচ্ছেন। 

যুক্তরাজ্যের বাংলা মিরর পত্রিকার সম্পাদক আবদুল করিম গণি বলেন, সাম্প্রতিক কালে স্টুডেন্ট ও কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসে অনেক তরুণ-তরুণী বিপাকে পড়েছেন। এসব ভিসায় এসে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে বেকায়দায় আছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার লন্ডন থেকে পালিয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। 

পাসপোর্টের তথ্য যাচাইকারী ডিএসবির জগন্নাথপুর উপজেলার দায়িত্বে থাকা উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন বলেন, দুই বছর ধরে এ উপজেলায় প্রতি মাসে গড়ে ৫০০ নতুন পাসপোর্ট হচ্ছে। এর মধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগেই তরুণ-তরুণী এবং তাঁরা পেশায় শিক্ষার্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত