Ajker Patrika

সিলেট স্টেশনে দুদকের অভিযান, রেলে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে এল সাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের সেবায় হয়রানি, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুদক টিম। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের সেবায় হয়রানি, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুদক টিম। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের সেবায় হয়রানি, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুপুরে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, সিলেটের তিনজন সহকারী পরিচালকের একটি টিম এই অভিযান চালায়।

দুদক জানায়, অভিযানে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি, ভুয়া বিল-ভাউচারে মাসে ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ, ট্রেনের অ্যাটেনডেন্টদের বেতন না দিয়ে উল্টো তাঁদের কাছ থেকে প্রতি মাসে টাকা নেওয়া, রড বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিনের নেতৃত্বে আভিযানিক দলের সদস্য ছিলেন সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার ও সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল।

অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঈদ উপলক্ষে টিকিট কালোবাজারি ও যাত্রী হয়রানি রোধ। কিন্তু এখানে এসে একের পর এক ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র তাঁরা পেয়েছেন। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে এল!

অভিযানকালে দেখা যায়, সিলেট-ঢাকা-সিলেটগামী আন্তনগর (কালনী, জয়ন্তিকা, পারাবত, উপবন) এবং সিলেট-চট্টগ্রাম-সিলেটগামী আন্তনগর (পাহাড়িকা, উদয়ন) ট্রেনে যাত্রীসেবার জন্য (সাবান, টিস্যু, তোয়ালে, অডোনিল, অ্যারোসল, ফিনাইল, হারপিক, ডাস্টার, ঝাড়ু, হাত ব্রাশ, কমোড ব্রাশ, ডাস্টার ক্লথ, গ্লাস ক্লিনার, ডিটারজেন্ট, মগ, বেলচা, বালতি, বদনা, ঝুড়ি ইত্যাদি) প্রায় ১৮ ধরনের সামগ্রীসহ দুজন ক্লিনার থাকার নিয়ম রয়েছে। বাস্তবে একজন ক্লিনারের মাধ্যমে কেবল এসি বগিতে সাবান ও টিস্যু ছাড়া অন্য কোনো সামগ্রী সরবরাহ করা হয় না। অভিযানকালে সাবান ও টিস্যু ছাড়া আর কোনো সামগ্রী পাওয়া যায়নি। এভাবে প্রতি মাসে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ে অন-বোর্ড ট্রেনের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করে থাকে, যাঁদের অ্যাটেনডেন্ট বলা হয়। কালনী ও পারাবত ট্রেনে প্রগতি এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন-বোর্ড যাত্রীসেবা দেওয়া হয়। এসব ট্রেনের অ্যাটেনডেন্টদের মাসিক বেতন ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু অভিযানকালে অ্যাটেনডেন্টদের অনেকে দুদক কর্মকর্তাদের জানান, বাস্তবে তাঁদের বেতন দেওয়া হয় না, বরং তাঁদের উল্টো প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকা দিতে হয়। না হলে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। অ্যাটেনডেন্টরা আরও জানান, সেই টাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকেও দিতে হয়। ফলে তাঁরা বাধ্য হয়ে বিনা টিকিটে যাত্রী যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন এবং যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে হয়।

দুদক কর্মকর্তারা আরও জানান, পুরোনো প্ল্যাটফর্ম ভেঙে আনুমানিক সাড়ে তিন টন রড পাওয়া যায়। ওই রড আনুমানিক ১ লাখ ১৭হাজার টাকায় বিক্রি করে তা সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযানকালে ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নির্মাণকাজ করারও প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। তা ছাড়া রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টারে বহিরাগতদের ভাড়া দেওয়ার অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। রেলওয়ে লাইনের পাথরগুলো কোনো ধরনের পরিমাপ বা জরিপ ছাড়াই ওয়াগনে লোড করা হয়। ওই লোড করা পাথরের পরিমাণ সম্পর্কে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো সুস্পষ্ট জবাব দিতে পারেনি। টিকিট কালোবাজারির বিষয়েও অভিযানে সত্যতা পাওয়া গেছে। আজিজ নামের এক ব্যক্তি স্লিপার ক্লাসের টিকিটের জন্য ১২০০ টাকার পরিবর্তে ২০০০ টাকা দাবি করেন, যিনি স্টেশনে গেটকিপারের দায়িত্বে রয়েছেন।

বুধবার রাতে আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, সিলেটের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার। তিনি বলেন, ‘নকশা এখনো অনুমোদিত নয়, অথচ সেই অনুযায়ী কাজ চলছে। যদি সরকার নকশা বাতিল করে, তাহলে জনগণের দুই কোটি টাকা পানিতে যাবে। টিকিট থাকার কথা অনলাইনে। অথচ দালালেরা সেগুলো কীভাবে নিজেদের কাছে রেখে দেয়, সেটি খতিয়ে দেখা হবে। টিকিট কালোবাজারি, ভুয়া বিল-ভাউচারে মাসে ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ, ট্রেনের অ্যাটেনডেন্টদের বেতন না দিয়ে উল্টো তাঁদের কাছ থেকে প্রতি মাসে টাকা নেওয়া, রড বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। দোষীদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইনের আওতায় আনা হবে।’

এ বিষয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজিজ গেটকিপার, তাঁর টিকিট বিক্রির সুযোগ নেই। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো কাজ করে। এখন অভিযোগ উঠেছে, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। আর ভুয়া বিল-ভাউচার মেকানিক্যাল বিভাগ, রড বিক্রির বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বলতে পারবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত