Ajker Patrika

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর

তিন বছরেও উপজেলায় নেই হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

  • ২২২ বর্গকিলোমিটারের এ উপজেলায় লোকসংখ্যা দেড় লাখ।
  • আছে কেবল ১০ শয্যাবিশিষ্ট দুটি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র।
  • ওই কেন্দ্রে ধাত্রীদের দিয়ে নামমাত্র চিকিৎসাসেবা চলছে।
  • পল্লিচিকিৎসক, কবিরাজ এবং ফার্মেসির ওপর নির্ভর করতে হয় রোগী ও স্বজনদের।
আতিক ফারুকী, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ)
Thumbnail image
১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

হাওর আর নদীবেষ্টিত জনপদ সুনামগঞ্জের মধ্যনগর। ২২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। তিন বছর আগে উপজেলা করা হয় মধ্যনগরকে। কিন্তু উপজেলাবাসীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এত দিনেও করা হয়নি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তাই নেই কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক।

এই উপজেলায় কেবল ১০ শয্যাবিশিষ্ট দুটি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে ধাত্রীদের দিয়ে নামমাত্র চিকিৎসাসেবা চলছে। ফলে এই জনপদের রোগীদের পল্লিচিকিৎসক, কবিরাজ ও ফার্মেসির কর্মীদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এ উপজেলার অবস্থান সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। জেলা থেকে একমাত্র নৌপথে যাতায়াত করা যায় এ উপজেলায়। এটির উত্তরে ভারত সীমান্ত, পশ্চিমে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এবং দক্ষিণে ধর্মপাশা উপজেলা।

২০২১ সালের ২৬ জুলাই প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ১১৭তম সভায় মধ্যনগরকে পরিপূর্ণ উপজেলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপজেলা ঘোষণার আগে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে মধ্যনগরে ১০ শয্যাবিশিষ্ট দুটি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কিন্তু উপজেলাবাসীর দাবি, এ উপজেলায় অন্তত ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হোক।

স্থানীয়রা জানান, এ উপজেলার লোকজনকে নদী পাড়ি দিয়ে অন্য এলাকায় যেতে হয়। একজন মুমূর্ষু রোগীকে জেলা সদরে নিতেও সময় লেগে যায় ৮-১০ ঘণ্টা। বর্ষাকালে তো দুর্ভোগের কোনো শেষ থাকে না। আবার শুকনো মৌসুমে বেহাল রাস্তাঘাটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় মুমূর্ষু রোগীদের।

বর্ষাকালে একমাত্র ভরসা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। এতে সময় লাগে আরও বেশি। খরচও হয় অনেক। সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে অনেকের মৃত্যুও হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য ভোগান্তি হয় সবচেয়ে বেশি।

ফারুকগর গ্রামের বাসিন্দা খাদিজা আক্তার বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রতি সপ্তাহে এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। ৩০ কিলোমিটার দূরে পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া আমাদের গরিব মানুষের জন্য কষ্টকর।

উপজেলায় হাসপাতাল ও এমবিবিএস ডাক্তার থাকলে এই ভোগান্তি হতো না।’

চামরদানী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম জিলানী বলেন, দুর্গম এই উপজেলাবাসীর চিকিৎসাসেবার কথা চিন্তা করে জরুরি ভিত্তিতে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে এমবিবিএস ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা চালু করা এবং দ্রুত একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা দরকার।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুবির সরকার বলেন, মধ্যনগরে একটি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল অনুমোদনের জন্য পুনরায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এই উপজেলায় একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স খুবই জরুরি। হাসপাতালের প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত