Ajker Patrika

লোকচক্ষুর আড়ালে সিলেটের এক সমৃদ্ধ জাদুঘর

শাকিলা আক্তার
লোকচক্ষুর আড়ালে সিলেটের এক সমৃদ্ধ জাদুঘর

সদর(সিলেট): সিলেটের জকিগঞ্জে ১৮৩৬ সালে মানুষ বেচা–কেনা হতো। এ কোনো কল্পকাহিনি নয়। বিক্রির দলিল পর্যন্ত আছে। আর এই দলিলটি সংরক্ষিত আছে সিলেটের ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরে। সিলেটের দরগা গেটে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের পঞ্চম তলায় অবস্থিত এ জাদুঘরে রয়েছে এমন আরও অনেক মূল্যবান দলিল, স্মারক ও নিদর্শন। রয়েছে লাখো বছরের পুরোনো গাছের জীবাশ্ম (পাথর), সোনার জরি খচিত মসলিন শাড়ি, দুই মণ ওজনের হাতির দাঁত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহান সৈনিক সূর্য কুমার সেনকে (মাস্টার দা) ধরিয়ে দিতে ঘোষিত পুরস্কারের বিজ্ঞাপনসহ অনেক কিছু।

ছবি: শাকিলা আক্তারসিলেট নগরীর ভেতরেই এমন একটি সমৃদ্ধ জাদুঘর রয়েছে, যার তথ্য অনেকের কাছেই অজানা। জাদুঘরটিতে রয়েছে তেরো শতকের কালো পাথরের তৈরি তৈজসপত্র, শিলালিপি, তাম্রলিপি, ১৮৮৩ সালের হস্তচালিত ছাপার মেশিন, ফারসি কাবিন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত রকেট লঞ্চারের ক্যাপসুলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম, জুলিয়াস সিজারের সময়ের মুদ্রাসহ বহু মূল্যবান নিদর্শন। অজস্র মূল্যবান নিদর্শন থাকলেও জাদুঘরটি অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গেছে। এ নিয়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও নেই কোনো প্রচার কার্যক্রম।

ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নিদর্শন। ছবি: শাকিলা আক্তারকোনো একটি অঞ্চল বা জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ ও তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এক অবিকল্প মাধ্যম জাদুঘর। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞানের বিস্তারের ক্ষেত্রেও জাদুঘরের ভূমিকা অপরিসীম। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জাদুঘরের যাত্রা হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে। নামটিও সবার জানা—আলেক্সান্দ্রিয়া। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সেই জাদুঘর নিয়ে গল্প–গাথাও কম নেই। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সময়টি আরও অনেক পরের। এখনো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যক্তি উদ্যোগে বহু জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। সিলেটের এই ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরও অনুরূপ।

ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নিদর্শন। ছবি: শাকিলা আক্তারভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদের পুরোনো স্মারক ও নিদর্শন সংগ্রহের প্রতি ঝোঁক ছিল। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত সিলেটের এই জাদুঘরে ঠাঁই পাওয়া নিদর্শনের ২০ শতাংশ সংগ্রহই তাঁর। বাকি ৮০ শতাংশ সংগ্রহ তাঁর নাতি ও বর্তমানে এই জাদুঘরের পরিচালক মোস্তাফা শাহ জামান চৌধুরীর। ১৯৮০ সালে ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ মারা যান। মৃত্যুর পর তাঁর কাছে থাকা সংগ্রহ নাতি মোস্তাফা শাহ জামান চৌধুরীকে ওসিয়ত করে যান। সেই সব সংগ্রহ এবং নিজের করা কিছু সংগ্রহ নিয়ে ২০০৪ যাত্রা করে জাদুঘরটি। বর্তমানে এটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন মোস্তাফা শাহ জামান চৌধুরী। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘর এখনো কোনো সরকারি আনুকূল্য পায়নি। অবশ্য সে চেষ্টাও এখন পর্যন্ত হয়নি।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে জাদুঘর অবশ্য নতুন কিছু নয়। বরং ব্যক্তির উদ্যোগেই যাত্রা করেছিল পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম জাদুঘর—আলেক্সান্দ্রিয়া। সরকারি বা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাদুঘরের ধারণা এসেছে অনেক পরে। দেশে দেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহু জাদুঘর রয়েছে। নতুন করে হচ্ছেও অনেক। এই সব জাদুঘর আবার এক রকম নয়। কোনো কোনোটি বিশেষ বিশেষ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের লোকশিল্প জাদুঘরই এর বড় প্রমাণ। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা জাদুঘরের গুরুত্ব বিবেচনায় রাষ্ট্র বা সরকার কখনো কখনো এগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। লক্ষ্য থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞানের বিস্তার। সাধারণ মানুষের মধ্যে জাদুঘর নিয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ঘটা করে পালন করা বিশ্ব জাদুঘর দিবসও। আজ সেই বিশ্ব জাদুঘর দিবস, যার যাত্রা হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ১৮ মে। বাংলাদেশেও আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ডিজিটাল পরিসরেই এবারের আয়োজন সীমাবদ্ধ।

ছবি: শাকিলা আক্তারঅবশ্য প্রতি বছরই বাংলাদেশে যে বিশ্ব জাদুঘর দিবস পালন হয়, তা অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা বলা যায়। তা না হলে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জাদুঘরগুলোয় সংরক্ষিত নিদর্শনগুলো যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর প্রায়ই পত্রিকার পাতায় উঠে আসত না। থাকত না অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার অভিযোগ। এর গুরুত্ব পুরোপুরি অনুধাবন করলে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত জাদুঘরগুলো দেখভালের জন্যও আলাদা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের দেখা মিলত। কিন্তু এমন কোনো কিছুর দেখা আজও বাংলাদেশের মানুষ দেখেনি। তেমনটি হলে ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরটির কথা অন্তত মানুষ জানত। কিন্তু সে ধরনের কোনো উদ্যোগ প্রশাসনের কোনো স্তর থেকেই নেই।

ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নিদর্শন। ছবি: শাকিলা আক্তার২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০১৫ সালে জাদুঘরটি সিলেটের দরগা গেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের পঞ্চম তলার বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। পারিবারিকভাবেই জাদুঘরটি পরিচালিত হচ্ছে বলে এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তেমন কোনো প্রচার নেই। অবশ্য আগ্রহীরা ঠিকই খুঁজে নেন জাদুঘরটিকে। কারণ এতে থাকা সংগ্রহের বৈচিত্র্য। সরেজমিনে দেখা যায়, এই জাদুঘরে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মাথার খুলি, বিভিন্ন শতাব্দীর বন্দুক, পিস্তল, এক হাজার বছর আগের রাজা চন্দ্র দেবের আমলের নাগরি ভাষায় লেখা তাম্রলিপি, ত্রিপুরার মহারাজা ও মহারানির বিভিন্ন দলিলসহ বিভিন্ন সময়ের ঐতিহাসিক দলিলপত্র। এখানে রয়েছে নবাব আলিবর্দী খাঁর আমলের হাতির দাঁতের হাত পাখা, বিভিন্ন দেশের প্রাচীন ব্যাংক নোট, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ব্যাংক নোট, শতাধিক বছরের পুরোনো দেয়াল ঘড়ি, হাত ঘড়ি, ১৮৬৬ সালে জকিগঞ্জ উপজেলার উত্তরকুলের জমিদার পত্নী বেগম মুসিম রাজা চৌধুরীর ব্যবহৃত মিনি ড্রেসিং টেবিল, ১ হাজার ৩০০ বছরের পুরোনো কালো পাথরের তৈরি তৈজসপত্র, বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত ক্যামেরা, ২ হাজার বছর আগের জুলিয়াস সিজারের সময়ের মুদ্রা, ১৮৫৩ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলের মুদ্রা ও ১৭১৯ সালে জৈন্তাপুর থেকে প্রাপ্ত বাংলা হরফে এবং সাংস্কৃতিক উচ্চারণে লেখা শিলালিপি ও প্রতিলিপি। রয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জের ঐতিহাসিক গয়বী দিঘি থেকে প্রাপ্ত শিলালিপি, যার একপাশে আরবি লিপি এবং অন্য পাশে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি খোদাই করা। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের ব্যবহৃত পানদান, হাতির দাঁতের তৈরি খুঁটির খড়ম, হাতির দাঁতের তৈরি চীনা খেলা মাহজং–এর দান, নেপালের রাজা বিক্রম শাহদেব কর্তৃক মতিন উদ্দীন আহমদকে উপহার দেওয়া হাতির দাঁতের তৈরি দাবা খেলার গুটি থেকে শুরু করে গরুর গাড়ি পর্যন্ত এমন অজস্র নিদর্শন এখানে রয়েছে, যা এই প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দিতে পারে অতীত সময়ের। ইতিহাসের গলি–ঘুপচিতে চলার সাহস ও উৎসাহ জোগানোর এক অনায়াস ক্ষমতা রয়েছে জাদুঘরটির। কিন্তু সেই ক্ষমতার খুব কমই প্রয়োগ হচ্ছে শুধু এ সম্পর্কিত তথ্যের যথাযথ প্রচারের অভাবে।

ছবি: শাকিলা আক্তারএ বিষয়ে জাদুঘরটির পরিচালক মোস্তাফা শাহ জামান চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার নানার ইচ্ছা পূরণ করতেই এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছি। এখানে স্থানীয় দর্শনার্থীরা খুব একটা না এলেও বিদেশি অনেক দর্শনার্থী আসেন। বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও আসেন। তবে এখন করোনা মহামারির কারণে জাদুঘরটি নিয়মিত খোলা রাখা হয় না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

কুষ্টিয়া প্রতি‌নিধি
লালনশিল্পী রতন। ছবি: সংগৃহীত
লালনশিল্পী রতন। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় রতন (৪২) নামের এক লালনশিল্পীকে ছুরিকাঘাত করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সদর উপজেলার মিললাইন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শিল্পী রতন কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আফসার আলীর ছেলে। তিনি ‘শিল্পী সমাজ’ নামক কুষ্টিয়ার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহসভাপতি।

পুলিশ ও আহত শিল্পীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে গানের অনুষ্ঠান শেষ করে রতন কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া লালন মাজার এলাকা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সদর উপজেলার মিললাইন এলাকায় পৌঁছালে চলন্ত অবস্থায় দুর্বৃত্তরা তাঁর পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলটি অন্ধকার থাকায় তিনি কাউকে চিনতে পারেননি। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, রাত ২টার দিকে রতনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।

লালন একাডেমির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও ভবের হাট সংগীত একাডেমির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু বলেন, ‘রতন লালন একাডেমির একজন নিয়মিত শিল্পী। তার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদসহ অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়ে কুমারখালী ও মডেল থানা যৌথভাবে কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দৌলতপুরে অস্ত্র ও মাদকসহ যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার যুবদল নেতা জামিল মালিথা। ছবি: আজকের পত্রিকা
অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার যুবদল নেতা জামিল মালিথা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের আবেদের ঘাট এলাকা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ পদ্মার চরের শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিল মালিথাকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গ্রেপ্তার জামিল কুখ্যাত ‘চল্লিশ বাহিনী’র প্রধান রাখিবুল ইসলাম রাখির ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ফিলিপনগর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব। এ সময় জামিল মালিথার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, একটি গুলি এবং ৪৮ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার জামিল মালিথা ফিলিপনগর গ্রামের মৃত জালাল মালিথার ছেলে।

জামিলের ফিলিপনগর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব পদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক বেনজির আহমেদ বাচ্চু।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, জামিল একজন চিহ্নিত অস্ত্র ও মাদক কারবারি। ভারত থেকে অবৈধভাবে বিপুল সংখ্যক আধুনিক অস্ত্র, বিশেষ করে অটোমেটিক পিস্তল পাচারের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক জাকিরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, ‘জামিলের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। রাতেই বিজিবি তাঁকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আজ তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেরপুরে গণসংযোগে হামলার অভিযোগ জামায়াতের, অস্বীকার বিএনপির

শেরপুর প্রতিনিধি
হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ করে শেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামী। ছবি: আজকের পত্রিকা
হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ করে শেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামী। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুর-১ (সদর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলামের গণসংযোগে হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এতে জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতিসহ জামায়াতের অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনার জেরে শুক্রবার রাতে শহরজুড়ে জামায়াত ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে।

জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, শুক্রবার জুমার নামাজের পর শেরপুর-১ আসনের মনোনীত প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম ডাকপাড়া গ্রামে গণসংযোগে বের হলে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে বাগ্‌বিতণ্ডা হয় এবং পরে বিএনপির সমর্থকেরা জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে। এ সময় জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম স্বপনসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে শুক্রবার রাতে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। ছবি: আজকের পত্রিকা
জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে শুক্রবার রাতে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। ছবি: আজকের পত্রিকা

জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীর গণসংযোগে অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর এসব হামলার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ইতিমধ্যে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনের প্রতি আলটিমেটাম দিচ্ছি।’

জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিএনপি যদি জনগণের পালস বুঝতে না পারে, তাহলে আগামী দিনে তারাও বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে হারিয়ে যেতে বাধ্য হবে।

অন্যদিকে জামায়াতের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে শুক্রবার রাতে শেরপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াতের লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডাকপাড়া গ্রামে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে গিয়েছিল। সেখানে কয়েকটি মসজিদে মিটিং-মিছিল করে তারা গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এলাকাবাসী এর তীব্র প্রতিবাদ করলে তারা এলাকা ছেড়ে চলে আসে।’

সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে তারা থানায় গিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তারা মিথ্যা কথা বলছে এবং উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। আমরা তাদের এই প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আদিতমারীতে অটোরিকশা উল্টে নিহত ২, আহত ১

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
খাদে পড়ে যাওয়া অটোরিকশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খাদে পড়ে যাওয়া অটোরিকশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় অটোরিকশা উল্টে খাদে পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে উপজেলার মহিষখোচা বাজার আদিতমারী বাইপাস সড়কের আনছার খাঁর পুকুরপাড় এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া ব্রমত্তর গ্রামের মৃত তালেব্বর রহমানের ছেলে বকুল মিয়া (৬০) ও একই ইউনিয়নের কচুড়ুমা বারহাত কালী এলাকার মেছের আলীর জামাতা আতিকুল ইসলাম আতিক (৩৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মহিষখোচা বাজার থেকে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে একটি অটোরিকশা আদিতমারী যাচ্ছিল। আনছার পুকুরপাড়ে ওই অটোরিকশায় ওঠেন আতিকুল ইসলাম আতিক। একটু এগিয়ে যাওয়ার পরই খাদে পড়ে উল্টে গিয়ে নিচের গর্তে পড়ে যায় অটোরিকশা। এতে ঘটনাস্থলে আতিকুল মারা যান। আহত হন বকুল মিয়াসহ একজন নারী।

স্থানীয় বাসিন্দারা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে প্রথমে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে আশঙ্কাজনক বকুল মিয়াকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রংপুর যাওয়ার পথেই মারা যান বকুল মিয়া।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত