Ajker Patrika

তিস্তার ঢলে গঙ্গাচড়ায় ৫ ইউনিয়ন প্লাবিত, ভেঙে গেছে ব্রিজ ও রাস্তা 

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৪, ১১: ৪৯
তিস্তার ঢলে গঙ্গাচড়ায় ৫ ইউনিয়ন প্লাবিত, ভেঙে গেছে ব্রিজ ও রাস্তা 

কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের সিকিম থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ফুলেফেঁপে উঠেছে তিস্তা। এতে নতুন করে পাঁচ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে প্রায় ১২ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের বাড়িঘর। 

ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, দোকানপাট ও পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি। বানভাসি মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে পোকামাকড়ের আতঙ্ক। ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্ট। বাঁশ, গাছ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করে এলাকাবাসী। 

সরেজমিন দেখা গেছে, লালমনিরহাট সদরের হরিণচরা গ্রাম এবং মর্ণেয়া ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের সঙ্গে গঙ্গাচড়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১০০টি পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। ভাঙনের আতঙ্কে অনেকেই তাঁদের বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন। বাড়িঘর সরিয়ে নিলেও বাঁচাতে পারেননি তাঁদের ভিটেমাটি।

নতুন করে প্রায় সাত হাজার পরিবারের বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও পয়োনিষ্কাশন সংকট। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যসংকট। রান্নার চুলা ও খড় পানিতে ডুবে যাওয়া রান্না করতে না পেয়ে অনেকেই রাত থেকে না খেয়েই আছেন। 

গঙ্গাচড়ায় তিস্তার ঢলে পানি উঠেছে দোকানপাটে। গঙ্গাচড়ার মর্ণেয়া ইউনিয়নে ভাঙাগড়া বাজার থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকাপানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে সামান্য কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। তবে এসব শুকনো খাবার বিতরণ যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন পানিবন্দী বাসিন্দারা। 

গঙ্গাচড়ার মর্ণেয়া ইউনিয়নে শেখপাড়া এলাকার এক পরিবারের ঘরে ডুকে পড়েছে পানি। ছবি: আজকের পত্রিকা রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের ধরলা, দুধকুমার ও তিস্তা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে তিস্তা নদীর পানি কিছু পয়েন্টে স্বল্প মেয়াদে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। দুধকুমার ও ধরলা নদীসংলগ্ন কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে। 

আজ রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, মর্ণেয়া ইউনিয়নে গতকাল রাতে পানির তীব্র স্রোতে শেখপাড়া এলাকার একটি ব্রিজ ও সংযোগ সড়কের দুই পাশ ভেঙে গেছে ও ভাঙাগড়া এলাকার একটি পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে। এতে করে গঙ্গাচড়ার মর্ণেয়া ইউনিয়নের নীলারপাড়, শেখপাড়া, আলফাছটারী, ভাঙাগড়া, নরশিং এবং লামনিরহাট সদরের হরিণচরা গ্রাম ও উপজেলার হারাগাছ এলাকার প্রায় ১০ হাজার পরিবারের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। 

হঠাৎ বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় বেকায়দায় পানিবন্দী পরিবারগুলো। গঙ্গাচড়ার মর্ণেয়া ইউনিয়নে আলফাছটারী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকামর্ণেয়া ইউনিয়নের আলফাছটারী এলাকার বাসিন্দা কাজলী বেগম (৪৯) বলেন, ‘গতকাল শনিবার দুপুর থেকে আমাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। আমরা ঘরের জিনিসপত্র রাস্তায় নিয়ে রাখার সুযোগও পাইনি। হঠাৎ করেই আমাদের উঁচু স্থানের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। এই পানির কারণে এখন পর্যন্ত রান্না করতে পানি নাই। বেটির বাড়ি থেকে জামাই রান্না করে নিয়ে আসছে। সকালে সেই খাবার খাইছি।’ 

কথা হয় শেখপাড়া গ্রামরে বাসিন্দা আজহারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কালকে আছরের আজানের সময় এমনভাবে একটা পানির হলকা আসিছে, একবারে চোখের ইশারায় ব্রিজটা ভাঙি নিয়া গেইছে। ব্রিজটা ভাঙি যাওয়ায় প্রায় ১২ হাজার মানুষের চলাচল বন্ধ হই গেছে। ব্রিজটা দ্রুত ঠিক করা না গেলে মানুষগুলাক এখন হাঁটি চলাচল করতে হবি। পানি না কমা পর্যন্ত এখন ওই দিকের মানুষ আর এপারে আসতি পারবি না। আসতে চাইলে ভিজি আসতি হবি।’ 

লালমনিরহাট সদরের হরিণচরা গ্রাম এবং মর্ণেয়া ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের সঙ্গে গঙ্গাচড়ার যোগাযোগের ব্রিজ ও রাস্তাটি ভেঙে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকাএদিকে নেহালী, কোলকোন্দ ও লক্ষীটারী ইউনিয়নের ছয়টি স্বেচ্ছাশ্রম বাঁধ ভাঙন হুমকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা। 

মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভাঙনরোধে শনিবার রাত থেকে আমরা নিজেরাই বালুভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলে ও গাছ-বাঁশ কেটে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। পানিবন্দী পরিবারগুলোকে যে পরিমাণ ত্রাণসহয়তা দেওয়া হয়েছে, তা যতেষ্ট না। এই ত্রাণসহয়তা অনেকেই পায়নি।’ 

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে তিস্তার পানি বাড়া-কমার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। গতকাল হঠাৎ করে তিস্তার পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় মর্ণেয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নের অনেক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। মর্ণেয়া ইউনিয়নে কয়েকটি স্থানে ব্রিজ ও পাকা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কিছু পানিবন্দী পরিবারের মাঝে আমরা শুকনো খাবার বিতরণ করছি।’ 

ভাঙাগড়া বাজার থেকে মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াতের পাকা রাস্তাটি ভেঙে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা এদিকে আজ দুপুরে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান। এ সময় তিনি পানিবন্দী মানুষকে উঁচু স্থানে আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করার কথা জানান। পানি কমলে রাস্তার সংস্কারকাজ করা হবে বলেও তিনি জানান। 

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল ফেরদৌস ঊর্মি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজীবুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত