Ajker Patrika

নেক ব্লাস্টে ধ্বংস হচ্ছে বোরো ধান, গাইবান্ধার কৃষকেরা হতাশ

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
নেক ব্লাস্টে নষ্ট খেতের ধান। ছবি: আজকের পত্রিকা
নেক ব্লাস্টে নষ্ট খেতের ধান। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেক ব্লাস্ট রোগ। স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘কারেন্ট পোকা’। এর আক্রমণে গাইবান্ধার বোরো ধানের খেত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কৃষকের চোখের সামনে ঘাম ঝরানো কষ্টের ধান চিটা হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও এই পোকার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ফসল। আর এই দুঃসময়ে পাশে না পেয়ে কৃষি বিভাগ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন কৃষকেরা।

তবে কৃষি বিভাগ দাবি করেছে, মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পাশে রয়েছে তাদের কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। মাঠঘুরে দেখা গেছে, বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরো ধানের শিষ; সেই সঙ্গে দুলছে কৃষকের স্বপ্নও। কিন্তু সেই স্বপ্নে আঘাত হানছে নেক ব্লাস্ট। ধান পাকার সময় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শিষ চিটা হয়ে যাচ্ছে। পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে, গাছ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত বোরো খেতের সংখ্যা।

চড়া দামে বীজ, সার ও কীটনাশক কিনে ধানের চাষ করেছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু ঘরে তোলার আগমুহূর্তে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। স্থানীয় বাজার থেকে একাধিক কোম্পানির কীটনাশক কিনে প্রয়োগ করেও কোনো সুফল মিলছে না। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ধানগাছ কেটে নিচ্ছেন গোখাদ্য হিসেবে, কিন্তু আক্রান্ত খড় গবাদিপশুও খাচ্ছে না।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ প্রামের প্রান্তিক কৃষক মেজা মিয়া। ধারদেনা করে নিজের ও বর্গা নেওয়া পাঁচ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছেন। আবাদও ভালো হয়েছে। থোকা থোকা ধানের শিষে ভরে উঠেছে তাঁর জমি। পাকতে শুরু করেছে তাঁর খেতের ধান। কিন্তু ধান পাকার আগেই ব্লাস্ট রোগে শিষ চিটা হয়ে মরে যাচ্ছে গাছ। কষ্টের ফসল নষ্ট হতে দেখে জমিতে এসে কান্না করা ছাড়া কিছুই করতে পারছেন না।

কৃষক ফয়াজ মিয়া বলেন, ‘আমরা আবাদ করি, কৃষি অফিস থেকে কোনো পরামর্শ পাই না। কৃষকেরা এত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি, এখন পর্যন্ত কোনো কৃষি অফিসারকে পাই নাই। উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শ চাইলে বলে সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) মাঠে গেছে। মাঠে যে কোন কর্তা কাজ করে, তাকেই তো আজ পর্যন্ত চিনলাম না।’

এদিকে একই অবস্থা ওই গ্রামের কৃষক ফুয়াদ মিয়ার। এই দুঃসময়ে কৃষি বিভাগকে পাশে না পেয়ে স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতাদের পরামর্শে বারবার ওষুধ ছিটিয়েও রক্ষা করতে পারছেন তাঁর জমি।

গোবিন্দগঞ্জের পুরানদহ গ্রামের কৃষক বাবলু মিয়া বলেন, হাইব্রিড জাতের ধানে পচারি রোগ ধরছে। আস্তে আস্তে পুরো বিলে ছড়িয়ে পড়ছে। আরেক কৃষক হেলাল মিয়া বলেন, মাঠের অধিকাংশ ধান পাক ধরার মুখে আছে, কিন্তু ধানের শিষ সাদা হয়ে সব চিটা হয়ে যাচ্ছে।

পলাশবাড়ী উপজেলা নান্দিশহর গ্রামের কৃষক হাকিম মিয়া বলেন, ‘আধা পাকা ধানে কারেন্ট পোকা লাগছে। কয়েক দিন থেকে বিএসকে খুঁজতেছি। কোনো পাত্তা পাচ্ছি না। ওমরা অফিসার হয়ে যদি জমিতে না আসে, হামারে খোঁজ না নেয়। তাহলে সরকার ওমোহরক মাগনামাগনি বেতন দেয় ক্যা?’

কৃষক খাজা খন্দকার বলেন, ‘বাজারত থেকে ঔষধ কিনে নিয়ে যায়া হল্কায় হল্কায় স্পোরো করছম। কোন লাভই হচ্ছে না। মনটা কয় এল্লা আবাদসুবোদ না করি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘ধানের রোগবালাই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। খেতের ৮০ শতাংশ ধান পাকলেই কেটে ফেলতে হবে। কৃষকদের সচেতন করতে কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এরপরও মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত