শিপুল ইসলাম, রংপুর
বাঁশের তৈরি কাঁচা বেড়ার গায়ে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন মকবুল হোসেন। দৃষ্টি ছেলে আবু সাঈদের সমাধিস্থলের দিকে। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম সমাধিস্থলের অদূরেই পুরোনো মাটির ঘরে বসে আছেন। হাতে সাঈদের পরনের শেষ কালো টি-শার্ট। কথা বলার জন্য এগিয়ে যেতেই কেঁদে উঠলেন মনোয়ারা বেগম। বললেন, ‘এইটার গায়োত এ্যালাও সাঈদের ঘ্রাণ লাগি আছে। মোর সাঈদ তো ক্লাসের পর, আন্দোলন করে এমন ঘামে ভেজা শরীর নিয়া আসিল হয়। ওরা আমার বাবাটাকে ফেরতে দেয় নাই। গুলি করি শেষ করি দিছি, মোর বুকটারে ছিঁড়ি ফালাইছে।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ। গত বছরের ১৬ জুলাই পুলিশের গুলি ছোড়া এবং সাঈদের আহত হওয়ার সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে আন্দোলন আরও গতি পায় এবং শেষমেশ সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আবু সাঈদ।
সম্প্রতি রংপুরের পীরগঞ্জের বাবানপুরে সাঈদের বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এক বছর পেরিয়ে গেলেও মকবুল হোসেন আর মনোয়ারা বেগমের জন্য সময় যেন থমকে আছে ঠিক সেই দুপুরবেলায়, যখন তাঁদের সন্তান আবু সাঈদের রক্তাক্ত নিথর দেহ ফোনে শেষ ছবি হয়ে ধরা দেয়।
এ নিয়ে কথা হয় সাঈদের বাবার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ছেলে হারানোর এক বছর হলো। এখনো বিচার পাইনি। আরও বলেন, ‘চারজন আসামিকে আইনের আওতায় আনা হইছে। আর আসামিরা এখনো বহালভাবে চলিফিরি বেরাওছে। সরকারের কাছে আমার আকুল দাবি, বাকি আসামিদের আইনের আওতায় আনি কঠিন শাস্তি দেওয়া হউক। যারা অপরাধী আমি তাদের বিচারের দাবি জানাই।’
সাঈদের বাবা বলেন, ‘টিউশনি করি পড়ার খরচ চালাত। খুব কষ্ট করেছে ছেলেটা। কিন্তু সুখ ভোগ করির পারে নাই। এই দিক দিয়া দুঃখ নাগে খুব।’
ছেলের কথা স্মরণ করে মকবুল হোসেন বলেন, ‘গত কোরবানিত বাড়িত আসি কথা হইছে। বাড়ি থাকি বন্ধুর বিয়া খায়া বাড়িত আসি সাইট ব্যাগ ঘাড়োত নিয়া কইছে, “আব্বা আমি যাওছি”। এটাই ওর শেষ যাওয়া।’
সাঈদ নিহত হওয়ার দিনের ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘ঢাকায় লেখাপড়া করে প্রতিবেশী ভাতিজা খবর দেয়, আবু সাঈদ মারা গেছে। ছাত্ররা লাশ নিয়া আসির ধরছে, পুলিশ রাস্তা থাকি লাশ কাড়ি নিছে। কাড়ি নিয়া যাওয়ার থাকি নিখোঁজ। রাত ২টার দিকে সন্ধান পাই লাশ মর্গে। সেই লাশ আনির চাইছে, দেয় না। লাশ রাস্তাত ঠেক দিছে। পুলিশ প্রশাসন ভাঙি আছি রাতে মাটি দিতে বলছে। ভেকু দিয়া খুঁড়ি পুঁতি থাইবে। এ রকম বহু জুলুম-অত্যাচার করেছে।’
আবু সাঈদকে মনে রাখতে ভাস্কর্য নয়, তাঁর নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম করলে তাঁরা খুশি হবেন বলে জানান মকবুল হোসেন।
এদিকে সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রংপুরের তাজহাট থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সাতজনকে সম্পূরক এজাহারে যুক্ত করা হয়। আদালতের আদেশে তাঁরা মামলায় নামীয় আসামি হন। এই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, এএসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশ। পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল হলে তা আমলে নেওয়া হয়। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ২৬ পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২।
১৬ জুলাই ঘিরে যেসব আয়োজন
আবু সাঈদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ জুলাই দিবসের অংশ হিসেবে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ কর্মসূচিতে যোগ দেবেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আকবার, পরিবেশ, বন ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। এদিন পীরগঞ্জের বাবানপুরে আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের পর ক্যাম্পাসে ফিরে কালোব্যাজ ধারণ ও শোক র্যালি করা হবে। শহীদ আবু সাঈদ গেটে শহীদ আবু সাঈদ তোরণ ও মিউজিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এরপর পার্কের মোড়ে আবু সাঈদের স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।
এ দিকে ওই দিন শহীদ আবু সাঈদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কবর জিয়ারত, পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময়, মাদ্রাসায় কোরআন খতমের ব্যবস্থা, মসজিদে বাদ জোহর দোয়া মাহফিল এবং এতিম ও গরিবদের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বাঁশের তৈরি কাঁচা বেড়ার গায়ে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন মকবুল হোসেন। দৃষ্টি ছেলে আবু সাঈদের সমাধিস্থলের দিকে। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম সমাধিস্থলের অদূরেই পুরোনো মাটির ঘরে বসে আছেন। হাতে সাঈদের পরনের শেষ কালো টি-শার্ট। কথা বলার জন্য এগিয়ে যেতেই কেঁদে উঠলেন মনোয়ারা বেগম। বললেন, ‘এইটার গায়োত এ্যালাও সাঈদের ঘ্রাণ লাগি আছে। মোর সাঈদ তো ক্লাসের পর, আন্দোলন করে এমন ঘামে ভেজা শরীর নিয়া আসিল হয়। ওরা আমার বাবাটাকে ফেরতে দেয় নাই। গুলি করি শেষ করি দিছি, মোর বুকটারে ছিঁড়ি ফালাইছে।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ। গত বছরের ১৬ জুলাই পুলিশের গুলি ছোড়া এবং সাঈদের আহত হওয়ার সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে আন্দোলন আরও গতি পায় এবং শেষমেশ সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আবু সাঈদ।
সম্প্রতি রংপুরের পীরগঞ্জের বাবানপুরে সাঈদের বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এক বছর পেরিয়ে গেলেও মকবুল হোসেন আর মনোয়ারা বেগমের জন্য সময় যেন থমকে আছে ঠিক সেই দুপুরবেলায়, যখন তাঁদের সন্তান আবু সাঈদের রক্তাক্ত নিথর দেহ ফোনে শেষ ছবি হয়ে ধরা দেয়।
এ নিয়ে কথা হয় সাঈদের বাবার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ছেলে হারানোর এক বছর হলো। এখনো বিচার পাইনি। আরও বলেন, ‘চারজন আসামিকে আইনের আওতায় আনা হইছে। আর আসামিরা এখনো বহালভাবে চলিফিরি বেরাওছে। সরকারের কাছে আমার আকুল দাবি, বাকি আসামিদের আইনের আওতায় আনি কঠিন শাস্তি দেওয়া হউক। যারা অপরাধী আমি তাদের বিচারের দাবি জানাই।’
সাঈদের বাবা বলেন, ‘টিউশনি করি পড়ার খরচ চালাত। খুব কষ্ট করেছে ছেলেটা। কিন্তু সুখ ভোগ করির পারে নাই। এই দিক দিয়া দুঃখ নাগে খুব।’
ছেলের কথা স্মরণ করে মকবুল হোসেন বলেন, ‘গত কোরবানিত বাড়িত আসি কথা হইছে। বাড়ি থাকি বন্ধুর বিয়া খায়া বাড়িত আসি সাইট ব্যাগ ঘাড়োত নিয়া কইছে, “আব্বা আমি যাওছি”। এটাই ওর শেষ যাওয়া।’
সাঈদ নিহত হওয়ার দিনের ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘ঢাকায় লেখাপড়া করে প্রতিবেশী ভাতিজা খবর দেয়, আবু সাঈদ মারা গেছে। ছাত্ররা লাশ নিয়া আসির ধরছে, পুলিশ রাস্তা থাকি লাশ কাড়ি নিছে। কাড়ি নিয়া যাওয়ার থাকি নিখোঁজ। রাত ২টার দিকে সন্ধান পাই লাশ মর্গে। সেই লাশ আনির চাইছে, দেয় না। লাশ রাস্তাত ঠেক দিছে। পুলিশ প্রশাসন ভাঙি আছি রাতে মাটি দিতে বলছে। ভেকু দিয়া খুঁড়ি পুঁতি থাইবে। এ রকম বহু জুলুম-অত্যাচার করেছে।’
আবু সাঈদকে মনে রাখতে ভাস্কর্য নয়, তাঁর নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম করলে তাঁরা খুশি হবেন বলে জানান মকবুল হোসেন।
এদিকে সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রংপুরের তাজহাট থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সাতজনকে সম্পূরক এজাহারে যুক্ত করা হয়। আদালতের আদেশে তাঁরা মামলায় নামীয় আসামি হন। এই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, এএসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশ। পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল হলে তা আমলে নেওয়া হয়। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ২৬ পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২।
১৬ জুলাই ঘিরে যেসব আয়োজন
আবু সাঈদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ জুলাই দিবসের অংশ হিসেবে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ কর্মসূচিতে যোগ দেবেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আকবার, পরিবেশ, বন ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। এদিন পীরগঞ্জের বাবানপুরে আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের পর ক্যাম্পাসে ফিরে কালোব্যাজ ধারণ ও শোক র্যালি করা হবে। শহীদ আবু সাঈদ গেটে শহীদ আবু সাঈদ তোরণ ও মিউজিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এরপর পার্কের মোড়ে আবু সাঈদের স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।
এ দিকে ওই দিন শহীদ আবু সাঈদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কবর জিয়ারত, পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময়, মাদ্রাসায় কোরআন খতমের ব্যবস্থা, মসজিদে বাদ জোহর দোয়া মাহফিল এবং এতিম ও গরিবদের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
মাসজুড়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কর্মসূচি জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর এলাকায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে ইউএনওর গাড়িতেও ভাঙচুর চালায় তারা।
১১ মিনিট আগেব্যবসায়িক দ্বন্দ্বেই পুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী কালাচাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
২৮ মিনিট আগেবুধবার সকালে সিঅ্যান্ডবি মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ম্যুরালের পাদদেশে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পেছনে দাঁড়িয়ে প্রতিকৃতি মুছে ফেলা ম্যুরাল। ম্যুরালের নিচের অংশে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। দুপাশে সীমানাপ্রাচীরের সঙ্গে থাকা টেরাকাটার কিছু অংশ তুলে ফেলা হয়েছে। ওপরের অংশে লেখা, ‘জালেমের ওপর
৪১ মিনিট আগেমিটফোর্ডে ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যার ঘটনায় একাধিকবার ইট মারা মো. রিজওয়ান উদ্দিন অভিকে পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী...
৪৪ মিনিট আগে