Ajker Patrika

গাজীপুর সিটি করপোরেশন

সর্বনিম্ন দরদাতা পেল না কাজ, গচ্চা ৩.৬৭ কোটি

  • ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ।
  • সর্বনিম্ন দরদাতার বদলে কাজ পেয়েছে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা, ক্ষুব্ধ অন্যরা।
  • ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ সর্বনিম্ন দরদাতার, অস্বীকার সংশ্লিষ্টদের।
গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৭: ৩৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে (গাসিক) ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের জন্য দর আহ্বান করা হয়েছিল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। তবে সবচেয়ে কম দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে কাজ দেওয়া হয়েছে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে। এতে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে ৩ কোটি ৬৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩৬৯ টাকা।

বিষয়টি সামনে এনেছে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান প্রাইম ইঞ্জিনিয়ারিং। তাদের দাবি, শর্ত পূরণ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পরও তাদের ‘অযোগ্য’ বলে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বেশি দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। সেখানকার পানির সংকট মেটাতে জাইকার সহায়তায় একটি প্রকল্প হাতে নেয় গাসিক। নাম দেওয়া হয় ‘ইনস্টলেশন অব গ্রাউন্ড ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম ইন জোন ৭, ৮’। এর আওতায় ভূগর্ভস্থ পানির উৎস থেকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহব্যবস্থা স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। ই-জিপির মাধ্যমে কাজটি উন্মুক্ত রাখা হয়। অংশ নেয় পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল প্রাইম ইঞ্জিনিয়ারিং। তাদের প্রস্তাব ছিল ২৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দর ছিল পূর্বাচল ডিলার্স লিমিটেড-এসটিসিএল জেভির ২৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা এফএসএল-এসজেসি জেভির দর ছিল ২৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। কাজ দেওয়া হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটিকে।

প্রাইম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিইও মো. নূরুল ইসলাম তানভীর বলেন, ‘আমরা দরপত্রের প্রতিটি শর্ত পূরণ করেছি। সমমানের পূর্ব অভিজ্ঞতা, আর্থিক সক্ষমতা, জনবল ও যন্ত্রপাতির তালিকা ই-জিপি সিস্টেমে জমা দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমাদের অযোগ্য দেখানো হয়েছে।’ তাঁর অভিযোগ, কাজ পেতে সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম হারুনুর রশীদ ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসিবুল ইসলাম ২-৩ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় তাঁরা কাজ পাননি।

তানভীর জানান, তিনি এই অনিয়ম নিয়ে দুদক, স্থানীয় সরকার বিভাগ, এলজিইডি প্রধান, গাসিক প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ১৩ জুলাই রিভিউ প্যানেলেও আবেদন করা হয়।

পূর্বাচল ডিলার্র লিমিটেড-এসটিসিএল জেভির নির্বাহী পরিচালক হাসান আলী খান বলেন, ‘যদি প্রথম দরদাতা বাদও পড়েন, তবে দ্বিতীয় হিসেবে আমাদের কাজ পাওয়ার কথা। কিন্তু তৃতীয় প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক।’

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের ‘অনুরূপ প্রকল্পের অভিজ্ঞতা’ থাকতে হবে। গাসিকের দাবি, প্রাইম ইঞ্জিনিয়ারিং যে অভিজ্ঞতা সনদ দিয়েছে তা গভীর নলকূপ স্থাপন-সংক্রান্ত, যা গ্রাউন্ড ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম ইনস্টলেশন প্রকল্পের অনুরূপ নয়। তবে তানভীরের দাবি, ‘নলকূপ স্থাপনই পানির উৎস স্থাপন। আমরা ঢাকা ওয়াসার কাজ করেছি, তারা লিখিতভাবে আমাদের কাজের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু গাসিক সেটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্রাহ্য করেছে। অন্যদিকে যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ পেয়েছে, তাদের দেওয়া অভিজ্ঞতা সনদ ‘ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের। এটি পানি সরবরাহব্যবস্থার সম্প্রসারণ প্রকল্প হলেও মূল উৎস বা ইনস্টলেশন নয়।’

দরপত্র মূল্যায়নের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ১৪৮ দিন। কিন্তু কার্যাদেশ দিতে গিয়ে গাসিক এ সময়সীমা অতিক্রম করে। প্রাইম ইঞ্জিনিয়ারিং বলছে, সময়ক্ষেপণের কারণ ছিল পছন্দের ঠিকাদারকে যোগ্য দেখাতে সময় নেওয়া।

প্রকল্প পরিচালক এ কে এম হারুনুর রশীদ বলেন, প্রাইম ইঞ্জিনিয়ারিং যে অভিজ্ঞতা দিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসিবুল ইসলাম বলেন, শর্ত পূরণ না করায় প্রথম ও দ্বিতীয় দরদাতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দুই কর্মকর্তাই ঘুষ গ্রহণ বা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তৃতীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ায় প্রকল্পে ৩ কোটি টাকা বেশি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তাঁরা।

সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়াই আদর্শ, যদি না সে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়। তবে ‘অনুরূপ অভিজ্ঞতা’ কেমন হবে, সেটি ব্যাখ্যার বিষয়। এই ফাঁক গাসিক কীভাবে ব্যবহার করেছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও গণপ্রকৌশল বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম মাহবুবুর রহমান। তাঁর মতে, যদি প্রথম দরদাতার অভিজ্ঞতা যথাযথভাবে যাচাই না করে বাদ দেওয়া হয়, তা হলে সেটি গুরুতর অনিয়ম।

গাসিকের প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আপাতত কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

চাঁদা না দেওয়ায় মারধরের অভিযোগ বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে

এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কুৎসা, বরখাস্ত নিরাপত্তাপ্রহরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত