Ajker Patrika

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল দিয়ে পরিবেশবান্ধব বাড়ি

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
বাড়িটি তৈরি করতে তিন রুমে ৩০ হাতে ১৭ হাজার ৮৬৫ বোতল লেগেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাড়িটি তৈরি করতে তিন রুমে ৩০ হাতে ১৭ হাজার ৮৬৫ বোতল লেগেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কোমল পানীয়ের পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি তৈরি করেছেন এক অটোচালক। গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার অদূরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ছাপড়হাটি গ্রামের এই অটোচালকের নাম মো. আব্দুল হাকিম খান (৩২)। তাঁর এই বাড়ি দেখতে প্রতিদিনই আসছেন অনেকে। আগ্রহ নিয়ে দেখছেন বৈচিত্র্যময় এই বাড়ি। এলাকায় বাড়িটি এখন ‘বোতলবাড়ি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকের বোতলে বালুভর্তি করে সিমেন্ট দিয়ে পরিবেশবান্ধব এই বাড়ি তৈরি করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন আব্দুল হাকিম।

আব্দুল হাকিমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিনি অটোচালান। একদিন ইউটিউবে দেখতে পান ফেলে দেওয়া কোমল পানীয় বোতল দিয়ে বাড়ি বানানো। সেই থেকে তাঁর মনে বাসনা জাগে তিনিও বোতল দিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করবেন। অটো চালানোর সুবাদে তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে ফেলে দেওয়া বোতল সংগ্রহ করেন। পরবর্তীকালে রাজমিস্ত্রি ডেকে এনে বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করেন।

বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরির কাজ করছেন রংপুর জেলার হারাগাছা গ্রামের রাজমিস্ত্রি বাদশা মিয়া। রাজমিস্ত্রি পেশায় ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা তাঁর। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বোতল দিয়ে বাড়িটি নির্মাণকাজ করছেন।

মিস্ত্রি বাদশা মিয়া জানান, বাড়িটি তৈরির শুরুতে প্রাথমিকভাবে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করেন। এরপর প্লাস্টিকের বোতলগুলোতে বালু ও মাটিভর্তি করে সিমেন্ট দিয়ে দেয়ালের গাঁথুনি করেন। গাঁথুনির ওপরে দেন টিনের চাল। এভাবেই তৈরি হয় প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি। ইটের তৈরি বাড়ির চেয়ে এই বাড়িতে গরম কম লাগবে।

বাড়ির মালিক আব্দুল হাকিম খান বলেন, ‘এই বাড়ির মিস্ত্রি হিসেবে যিনি কাজ করছেন, তিনি সম্পর্কে আমার মামাশ্বশুর হন। প্রথমে বোতলসহ খরচ বেশি পড়বে বলে মামাশ্বশুর সম্মতি দেন নাই। পরে আমি সবকিছু খরচ করতে কোনো সমস্যা হবে না জানালে, তিনি রাজি হন।’

তিনি আরও বলেন, বাড়িটি তৈরি করতে তিন রুমে ৩০ হাতে ১৭ হাজার ৮৬৫ বোতল লেগেছে। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ এখনো বাকি আছে। এ পর্যন্ত চার লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাড়িটি তৈরি করতে সময় লেগেছে আড়াই মাস। আর সিমেন্ট, বালু, কাঠ, বোতল, রাজমিস্ত্রির বেতন মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরির কাজ করছেন রংপুর জেলার হারাগাছা গ্রামের রাজমিস্ত্রি বাদশা মিয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরির কাজ করছেন রংপুর জেলার হারাগাছা গ্রামের রাজমিস্ত্রি বাদশা মিয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি আরও বলেন, শুধু ইট-সিমেন্ট দিয়ে বাড়ি তৈরি করলে খরচ হতো প্রায় চার লাখ টাকা। কিন্তু পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে এই বাড়ি নির্মাণে খরচ হয়েছে অনেক কম। বাড়িটি তৈরির সময় এলাকার অনেকেই এসে নির্মাণকাজ দেখছেন। দেয়ালে ইটের পরিবর্তে বোতল দেওয়ায় কেউ কেউ নেতিবাচক বা তির্যক কথাও বলেছেন। এখন বাড়িটি পরিবেশবান্ধব হবে জেনে অনেকেই প্রশংসা করছেন।

গত শুক্রবার খানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল হাকিমের বোতলবাড়ির পাশে আম, কাঁঠাল, নারকেল, সুপারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির অনেক গাছ রয়েছে। এসবের মধ্যেই তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি। বাড়ির দেয়ালে কোমল পানীয়ের বোতলের পেছনের অংশ আর ঘরের ভেতরের অংশে বোতলের মুখের অংশ রয়েছে। এখনো ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি আছে।

প্লাস্টিকের বোতলে বালুভর্তি করে সিমেন্ট দিয়ে পরিবেশবান্ধব এই বাড়ি তৈরি করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন হাকিম খান
প্লাস্টিকের বোতলে বালুভর্তি করে সিমেন্ট দিয়ে পরিবেশবান্ধব এই বাড়ি তৈরি করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন হাকিম খান

ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থী জারিন তাজমিন বলেন, ‘প্লাস্টিকের বাড়ি শুধু ইউটিউবে দেখেছি। আজ সামনাসামনি দেখে খুব ভালো লাগছে। আমার কয়েকজন বান্ধবীসহ আমরা বাড়ি দেখতে আসছি।’

সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া থেকে বোতলবাড়ি দেখতে আসা মো. মোসলেম আলী বলেন, এই বাড়ির কথা তিনি আগেই শুনেছেন। তবে আজ দেখতে এসেছেন। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে অভিনব কায়দায় তৈরি বাড়িটি দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন। তিনিও এভাবে বাড়ি করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

বাড়িটি তৈরির শুরুতে প্রাথমিকভাবে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করেন। এরপর প্লাস্টিকের বোতলগুলোতে বালু ও মাটিভর্তি করে সিমেন্ট দিয়ে দেয়ালের গাঁথুনি করেন। ছবি : আজকের পত্রিকা
বাড়িটি তৈরির শুরুতে প্রাথমিকভাবে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করেন। এরপর প্লাস্টিকের বোতলগুলোতে বালু ও মাটিভর্তি করে সিমেন্ট দিয়ে দেয়ালের গাঁথুনি করেন। ছবি : আজকের পত্রিকা

প্রকৌশলী শাহিদুল ইসলাম বলেন, প্লাস্টিকের তৈরি বাড়িগুলো সৌন্দর্য বর্ধন হিসেবে মানুষ করে থাকে। ঘরগুলো না দেখলে টেকসইয়ের বিষয়ে ভালোভাবে বলা যাবে না। যদি দেয়ালের গাঁথুনির আগে চারদিক দিয়ে পিলারগুলো পরিমাণ মতো রড, সিমেন্ট, বালু ব্যবহার করা হয় তখন ঝুঁকি কম থাকে।

পরিবেশ অধিদপ্তর, গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হেদায়তুল ইসলাম বলেন, ‘প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণ করে। কিন্তু সেই প্লাস্টিককে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে যে বাড়ি তৈরি করেছেন, তা অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব। কোমল পানীয়ের প্লাস্টিকের বোতল যত্রতত্র ফেলে না দিয়ে এসব বোতল সংরক্ষণ করে বাড়ি তৈরি বা অন্য কোনো ভালো কাজে ব্যবহার করলে আমরা পরিবেশদূষণের হাত থেকে রক্ষা পাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারজিসের পোস্টে কমেন্ট করে বরখাস্ত মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী

‘৩ শর্তে’ সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুতদের বিক্ষোভ স্থগিত

চিরকুটে শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’

জামায়াতের অফিসে আগুন নেভাতে গিয়ে কোরআন শরিফ দেখেননি, দাবি ফায়ার সার্ভিসের

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর: উপদেষ্টা ফারুকী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত