Ajker Patrika

সঙ্গে যেতে ছুটে এসেছিলেন রাতে, সকালে লাশ রেখে পরীক্ষা দিতে গেল মেয়ে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
সঙ্গে যেতে ছুটে এসেছিলেন রাতে, সকালে লাশ রেখে পরীক্ষা দিতে গেল মেয়ে

এইচএসসি পরীক্ষার্থী জিম আক্তার। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষার প্রথম দিন বাবা জুয়েল মিয়ার (৫০) সঙ্গে কেন্দ্রে যাওয়ার কথা ছিল তার। মেয়েকে কথা দিয়েছিলেন তিনি। কথা রাখতে কাজ শেষ করে বুধবার রাতেই রংপুর থেকে বাড়িতে ফেরেন পেশায় কাঠমিস্ত্রি জুয়েল মিয়া। 

কিন্তু মেয়েকে দেওয়া কথা রাখতে পারেননি জুয়েল। বাবার লাশ বাড়িতে রেখে একাই কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে জিম। 

জিম আক্তারের বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের পৌর এলাকার ভরসার মোড় এলাকায়। এ বছর নীলারাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে জিম। তার কেন্দ্র কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে হার্টঅ্যাটাক করে বাড়িতেই মারা যান জিমের বাবা জুয়েল মিয়া। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নিতে না চাইলেও স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে যায় জিম। 

জিমের পরিবার জানায়, জুয়েল মিয়ার তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে জিম দ্বিতীয়। বৃহস্পতিবার জিমের প্রথম পরীক্ষা হওয়ায় বুধবার রাতে কাজ শেষ করেই রংপুর থেকে বাড়ি ফেরেন জুয়েল। বাড়িতে আত্মীয় থাকায় একা একটি কক্ষে ঘুমান। বৃহস্পতিবার ভোরে জিম ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসার সময় পাশের ঘর থেকে বাবার গোঙানির শব্দ শুনতে পায়। ডাকাডাকিতে জুয়েল মিয়া সাড়া না দিলে ঘরের বেড়ার টিন খুলে ভেতরে ঢুকলে তাঁকে মৃত অবস্থায় পায় পরিবারের লোকজন।

জুয়েল মিয়া পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। তাঁর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার। বাবার লাশ রেখে পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়নি জিম। কিন্তু স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে অবশেষে সে পরীক্ষা দিতে গেছে।

জিম বলে, ‘বাবার সাথে কথা ছিল তিনি আমাকে নিয়ে কেন্দ্রে দিয়ে আসবেন। বাবা বলেছিলেন, মা, যত রাতই হোক আমি বাড়ি যাব। বাবা এসেছিলেনও। কিন্তু হঠাৎ বাবার মৃত্যু আমার আশা পূরণ করতে দেয়নি। আমার বাবা অনেক কষ্ট করে আমার পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। এ জন্য পরিবারের লোকজনসহ সবাই আমাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেছে। পরে একা গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। সবার দোয়ায় পরীক্ষা ভালো হয়েছে।’ 

জুয়েল মিয়া অসুস্থ ছিলেন জানিয়ে জিম বলে, ‘আমরা গরিব মানুষ। বাবা কাঠমিস্ত্রির কাজ করে পরিবারের খরচের পাশাপাশি আমাদের লেখাপড়ার খরচ দিতেন। তিনি নিজে অসুস্থ থাকলেও টাকার অভাবের কারণে ডাক্তার দেখাতে চাননি। আজ বাবা চলে যাওয়ায় আমাদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। সবাই বাবার জন্য দোয়া করবেন।’ 

ভরসারমোড় এলাকার বাসিন্দা ও জিমের প্রতিবেশী মেহেদী হাসান মিঠু বলেন, ‘জুয়েল মিয়া আমার প্রতিবেশী। হঠাৎ ভোরে তাদের বাড়িতে চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি উনি মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁর মেয়ে জিম এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সবার পরামর্শে বাবার লাশ রেখে সে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।’ 

ওই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মোছা. সহিরন বেগম বলেন, ‘জুয়েল মিয়ার আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষার হলে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া অবশ্যই অনেক কঠিন কাজ। মাগরিবের পরে জুয়েল মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত