Ajker Patrika

‘কী স্বপ্ন দেখলাম, আর কী হলো’—জাবিতে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবা

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩: ০২
Thumbnail image

‘আমি এক হতভাগ্য বাবা। আমার দুর্ভাগ্য, আমার একমাত্র ছেলে ধর্ষণের মতো অপরাধে অভিযুক্ত একজনকে পালাতে সহায়তা করেছে। ছেলের এ ধরনের কাজের জন্য বাবা হিসেবে আমি অনুতপ্ত।’ এ কথাগুলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ কর্মী সাগর সিদ্দিকীর বাবা মফিজুল হক সিদ্দিকীর। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাঁর । এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলের গ্রেপ্তারে অভিভাবক হিসেবে নিজেদের পারিবারিক অবস্থান প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

গ্রেপ্তার সাগর সিদ্দিকী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও একই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের নেওয়াশী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক সিদ্দিকীর ছেলে। বাবা-মায়ের দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে সাগর ছোট ও একমাত্র ছেলে। 
 
ধর্ষণের মতো ঘটনার মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে গ্রেপ্তার হওয়া প্রসঙ্গে সাগর সিদ্দিকীর বাবা বলেন, ‘এই ঘটনার সাথে সে (সাগর) জড়িত নয়। একজন অপরাধীকে আইনের হাতে সোপর্দ না করে তাকে পালাতে সহায়তা করা এক ধরনের অপরাধ। এটা সে ভুল করেছে। তার এই ভুলের জন্য আমরা পারিবারিকভাবে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুতপ্ত। আমরা কষ্ট পাচ্ছি।’ 

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এই বাবা তাঁর স্বপ্নভঙ্গ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সে ছাত্ররাজনীতি করুক আমি তা চাইনি। আমি তাকে আমার আদর্শে মানুষ করার চেষ্টা করেছিলাম। কী স্বপ্ন দেখলাম, আর কী হলো! আমি এখন কারও সাথে ফোনে কথা বলতে কষ্ট পাই। আমি বাইরে যেতে কষ্ট পাই, লজ্জা পাই। আমি খুব হতাশ।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী ওরফে সাগর সিদ্দিকী। ছবি: সংগৃহীতবর্তমান ছাত্ররাজনীতির প্রভাবে শিক্ষার্থীরা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষক এ বাবা বলেন, ‘আগের বা আশির দশকের যে ছাত্ররাজনীতি তার সাথে বর্তমান ছাত্ররাজনীতি যায় না। কোনো অভিভাবক চান না তাঁর সন্তান ছাত্ররাজনীতি করুক। ছেলের সাথে আমার হাজার হাজার বার কথা হয়েছে। তাকে বারবার ছাত্ররাজনীতি করতে বারণ করেছি। সে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হোক এটা চাইনি। তাকে বলেছি, বাবা, আমরা গরিব মানুষ। তুমি পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি করো, এটাই আমার স্বপ্ন। কিন্তু তারপরও সে রাজনীতিতে জড়িয়েছে। 

 ‘আমি অনুতপ্ত। কোনো সন্তান যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে বাবা-মা অনুতপ্ত হন। এটা প্রাকৃতিক। এর কোনো ব্যাখ্যা হয় না।’ যোগ করেন তিনি। 

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন আবাসিক হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে হলের পেছনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনুর রশীদ মামুনের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী ওরফে সাগর সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। পরে তাঁকেসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে সাগর সিদ্দিকীসহ তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি তিনজনের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সনদ স্থগিত করা হয়।

আরও পড়ুন—

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত