Ajker Patrika

পছন্দের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তালিকা, ট্যাব বঞ্চিতদের অভিযোগে ৩ শিক্ষককে শোকজ

এস এম রকি, খানসামা (দিনাজপুর)
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৮: ২৩
পছন্দের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তালিকা, ট্যাব বঞ্চিতদের অভিযোগে ৩ শিক্ষককে শোকজ

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৯ম-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্রমিক নম্বরের প্রথম তিনজনকে একটি করে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ট্যাবলেট কম্পিউটার (ট্যাব) দেওয়ার কথা থাকলেও দিনাজপুরের খানসামায় অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তালিকা করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠানোয় এসব শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

ট্যাব না পেয়ে গতকাল রোববার ও আজ সোমবার খানসামার তিনটি বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট তিন প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন ইউএনও। 

জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বাস্তবায়নাধীন জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্প-২০২১ থেকে পাওয়া ট্যাব প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে খানসামা উপজেলার ৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম ও দশম শ্রেণির ২৮২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। 

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নবম ও দশম শ্রেণির ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী প্রথম তিনজনকে ট্যাব দেওয়ার কথা থাকলেও কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নিজের পছন্দে তালিকা তৈরি করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠান বলে ট্যাব বঞ্চিত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়। 

তালিকা অনুযায়ী গতকাল রোববার উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের হলরুমে ট্যাব বিতরণ করা হয়। এর পরপরই বিষয়টি জানাজানি হলে ট্যাব বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। 

কালিতলা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা ইশরাত জাহান বলে, ‘আমার রোল নম্বর ৩ হওয়া সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার ৬ রোলের শিক্ষার্থীকে দিয়েছেন। যা নিয়ম বহির্ভূত। আমরা এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’ 

কুমড়িয়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লুবনা জাহান লিশাত (ক্রমিক নম্বর ৩) বলে, ‘পরিপত্র অনুযায়ী ট্যাব পাওয়ার কথা থাকলেও আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আমার পাওনা ট্যাব দিতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ 

ট্যাব বঞ্চিত খানসামা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম ইসলাম (ক্রমিক নম্বর ৩) লিখিত অভিযোগে বলে, ‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে আমাকে বাদ দিয়ে ২৩ রোলের এক ছাত্রীকে ট্যাব দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম।’ 

কালিতলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইশারত জাহান একজন অনিয়মিত ছাত্রী ও মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। ট্যাব নেওয়ার জন্য তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে তার পরিবার সাড়া দেয়নি। সেই কারণেই ৬ রোলের শিক্ষার্থীকে ট্যাব দেওয়া হয়েছে।’ 

তালিকার বিষয়ে জানতে কুমড়িয়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোকছেদ আলীর মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি। 

এ বিষয়ে খানসামা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২৩ রোলের ছাত্রী গরিব ও মেধাবী হওয়ায় তাঁকে আমরা ট্যাব দিয়েছি। তবে অভিযোগ হওয়ার পর সেই ট্যাব ফেরত নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। আর ২৩ রোলের ছাত্রীকে স্কুল থেকে একটি ল্যাপটপ কিনে উপহার দেওয়া হবে।’ 

খানসামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক জানান, সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী বিদ্যালয় থেকে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী ট্যাব বিতরণ করেছেন। তবে তালিকায় যদি অসংগতি থাকে সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। 

ইউএনও রাশিদা আক্তার বলেন, ‘ট্যাব বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে তিনটি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই তিন প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিপত্র অনুযায়ী ট্যাব বিতরণ নিশ্চিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয় দিবস পালন করতে হচ্ছে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অঙ্গীকার করে: প্রিন্স

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
রুহিন হোসেন প্রিন্স। ছবি: আজকের পত্রিকা
রুহিন হোসেন প্রিন্স। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘আমি ক্ষোভের সাথে লক্ষ করছি, পঁচিশের বিজয় দিবসের আগেই আমাদের একাত্তরের ঘাতক চক্র, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম, তাদের অপতৎপরতা সূচনা করেছে। সেই কারণে আমাদের এবারের বিজয় উৎসব পালন করতে হচ্ছে এই ঘাতকদের বিরুদ্ধে আমাদের অবিরাম সংগ্রামের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে।’

আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সিপিবি নেতা এসব কথা বলেন।

এ সময় রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, ‘গত ৫৪ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এই দেশটাকে গড়তে পারে নাই বলেই আজকে একাত্তরের ঘাতকসহ অন্যরা এখন সুযোগ পাচ্ছে। আমরা তাই মনে করি, এই ঘাতকদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অবিরাম চলবে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই ধরনের জাতীয় দিবসে এসে আমরা সাধারণভাবে বলি, আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হলেই সব কাজ করা যাবে। আমার বিবেচনায় এই কথাটা যথাযথ না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের শ্রেণিবিভক্ত সমাজে আমরা যখন একসাথে হই, আমাদের যার যার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে। প্রকৃতপক্ষে জনস্বার্থের উদ্দেশ্য যাদের আছে তারা এক না হয়ে, যারা জনবিরোধী শক্তি আছে তারাই ঐক্যবদ্ধ হয়। তখন কিন্তু জনস্বার্থবিরোধী অবস্থানই তারা ঘোষণা করতে পারে। সুতরাং আজকে সময় এসেছে জনস্বার্থের পক্ষের রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিবর্গকে এক হওয়া। সেই কাজটি আমরা বামপন্থীরা প্রচেষ্টা নিয়ে চলেছি। সেই লক্ষ্য নিয়েই এবারে আমরা বিজয় দিবস পালন করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পদ্মা সেতুতে এক বাসের পেছনে আরেক বাসের ধাক্কা, হেলপার নিহত

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

পদ্মা সেতুতে এক বাসের পেছনে আরেক বাসের ধাক্কায় তোফায়েল মিয়া (২৭) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এতে আরও বেশ কয়েক যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার অধীন পদ্মা সেতুর ২৯ নম্বর পিলারের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত তোফায়েল বসুমতি পরিবহন বাসের চালকের সহকারী (হেলপার)।

পুলিশ জানায়, রাত আনুমানিক পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা থেকে ভাঙ্গাগামী বসুমতি পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে এসে পেছন দিক থেকে ঢাকা থেকে কুয়াকাটাগামী পদ্মা স্পেশাল পরিবহনের একটি বাসকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বসুমতি পরিবহনের সহকারী তোফায়েল নিহত হন।

দুর্ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য সেতুতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটি জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পদ্মা সেতু এলাকায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চবির বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক বিবৃতিতে এবার মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য সেই সঙ্গে নেতৃত্বদানকারী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম. এ. জি ওসমানীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যাসহ বিবৃতিতে এসব বলা হয়েছে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, তাঁর বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান তাঁর বক্তব্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে শুধু পাকিস্তানি বাহিনীর কাজ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেছেন। এই নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে এবং জাতিকে সঠিক ইতিহাস জানাতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) বেলা ১১টায় চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘যে সময় আমি (পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী) দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছি, আমি জীবিত থাকব না মৃত থাকব, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি; সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’ এ ছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পরই সমালোচনা হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলসহ ছয়টি সংগঠন তাঁর পদত্যাগের দাবি করে। এ দাবিতে তাঁরা গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে রাখেন। ফলে রাত প্রায় পৌনে ৯টা পর্যন্ত ভবনটিতে আটকা ছিলেন সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ২৪’র জুলাই আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম. এ. জি ওসমানীসহ সকল শহীদকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

ড. শামীম উদ্দিন খান একাডেমিক আলোচনার অংশ হিসেবে তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে বেশ কয়েকটি রেফারেন্স টেনে আনেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কাদিরের লেখা ‘দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীন’ বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘৬ ডিসেম্বর থেকে দৌঁড়ের উপর থাকা পাকিস্তানি বাহিনী ১৪ তারিখ এতগুলো লোকের বাসায় গিয়ে গিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ এ ছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনিরের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে বলেছেন, ‘পাকিস্তানিরা আমার বাবাকে হত্যা করেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় জানিয়েছে, বক্তব্য পেশ করার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে উপ-উপাচার্য ‘পাকিস্তানি বাহিনী’র পরিবর্তে ‘পাকিস্তানি যোদ্ধা’ এবং ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলতে গিয়ে ‘অবান্তর’ শব্দ ব্যবহার করেন, যা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। এটি ছিল অনিচ্ছাকৃত এবং তাৎক্ষণিক আলোচনার অংশ।

উল্লেখ্য, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের মানসপুত্র খ্যাত উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনৈতিক নেতা। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর লেবাননের বৈরুতের এক হোটেলকক্ষে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান তিনি। অন্যদিকে জাতীয় নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক প্রথিতযশা বাঙালি রাজনীতিবিদ। তিনি ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের কাছে শেরেবাংলা (বাংলার বাঘ) এবং ‘হক সাহেব’ নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মহান এ দুই নেতার একজনের মৃত্যুর নয় বছর ও অন্যজনের আট বছর পর মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ফলে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন এ প্রশ্ন তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিহাস বিকৃতি করছে। এক বিকৃতির ব্যাখ্যায় আরেক বিকৃতি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পরিবেশ সৃষ্টি হলে নির্বাচনে যাব, পাতানো নির্বাচনে যাব না: কাদের সিদ্দিকী

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ‘স্বাধীনতা যার জন্য, সেই মর্যাদা এখনো হয় নাই। এ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। ভালো নির্বাচন হয়নি বলেই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ভালো নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা সরকারের এইভাবে নির্মম পতন হতো না।’

আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের যে কর্মকাণ্ড, যাদের নিয়ে উনি ওঠেন বসেন, তারাই বাংলাদেশ না। তারা বাংলাদেশের হয়তো ২৫ ভাগও না। সেই জন্য সার্বিকভাবে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে আমরা অবশ্যই নির্বাচন করব। কিন্তু কোনো পাতানো নির্বাচনে আমরা যাব না।’ এ সময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত