Ajker Patrika

পছন্দের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তালিকা, ট্যাব বঞ্চিতদের অভিযোগে ৩ শিক্ষককে শোকজ

এস এম রকি, খানসামা (দিনাজপুর)
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৮: ২৩
Thumbnail image

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৯ম-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্রমিক নম্বরের প্রথম তিনজনকে একটি করে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ট্যাবলেট কম্পিউটার (ট্যাব) দেওয়ার কথা থাকলেও দিনাজপুরের খানসামায় অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তালিকা করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠানোয় এসব শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

ট্যাব না পেয়ে গতকাল রোববার ও আজ সোমবার খানসামার তিনটি বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট তিন প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন ইউএনও। 

জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বাস্তবায়নাধীন জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্প-২০২১ থেকে পাওয়া ট্যাব প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে খানসামা উপজেলার ৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম ও দশম শ্রেণির ২৮২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। 

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নবম ও দশম শ্রেণির ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী প্রথম তিনজনকে ট্যাব দেওয়ার কথা থাকলেও কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নিজের পছন্দে তালিকা তৈরি করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠান বলে ট্যাব বঞ্চিত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়। 

তালিকা অনুযায়ী গতকাল রোববার উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের হলরুমে ট্যাব বিতরণ করা হয়। এর পরপরই বিষয়টি জানাজানি হলে ট্যাব বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। 

কালিতলা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা ইশরাত জাহান বলে, ‘আমার রোল নম্বর ৩ হওয়া সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার ৬ রোলের শিক্ষার্থীকে দিয়েছেন। যা নিয়ম বহির্ভূত। আমরা এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’ 

কুমড়িয়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লুবনা জাহান লিশাত (ক্রমিক নম্বর ৩) বলে, ‘পরিপত্র অনুযায়ী ট্যাব পাওয়ার কথা থাকলেও আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আমার পাওনা ট্যাব দিতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ 

ট্যাব বঞ্চিত খানসামা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম ইসলাম (ক্রমিক নম্বর ৩) লিখিত অভিযোগে বলে, ‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে আমাকে বাদ দিয়ে ২৩ রোলের এক ছাত্রীকে ট্যাব দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম।’ 

কালিতলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইশারত জাহান একজন অনিয়মিত ছাত্রী ও মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। ট্যাব নেওয়ার জন্য তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে তার পরিবার সাড়া দেয়নি। সেই কারণেই ৬ রোলের শিক্ষার্থীকে ট্যাব দেওয়া হয়েছে।’ 

তালিকার বিষয়ে জানতে কুমড়িয়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোকছেদ আলীর মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি। 

এ বিষয়ে খানসামা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২৩ রোলের ছাত্রী গরিব ও মেধাবী হওয়ায় তাঁকে আমরা ট্যাব দিয়েছি। তবে অভিযোগ হওয়ার পর সেই ট্যাব ফেরত নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। আর ২৩ রোলের ছাত্রীকে স্কুল থেকে একটি ল্যাপটপ কিনে উপহার দেওয়া হবে।’ 

খানসামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক জানান, সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী বিদ্যালয় থেকে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী ট্যাব বিতরণ করেছেন। তবে তালিকায় যদি অসংগতি থাকে সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। 

ইউএনও রাশিদা আক্তার বলেন, ‘ট্যাব বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে তিনটি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই তিন প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিপত্র অনুযায়ী ট্যাব বিতরণ নিশ্চিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত