Ajker Patrika

এই সময়ের মধ্যে বিচার করতে হবে—আমি তো বলতে পারি না: আসিফ নজরুল

রংপুর প্রতিনিধি
বেরোবিতে আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে অলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বেরোবিতে আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে অলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার একটা ব্যাপার রয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আমি তো বলতে পারি না—এই সময়ের মধ্যে বিচার করতে হবে। তাহলে তো হস্তক্ষেপ করা হয়। আমি নিশ্চিত আমাদের সরকারের শাসনামলেই আপনারা আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যাবেন।’

আজ বুধবার দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ‘শহীদ জুলাই দিবস’ ও আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে অলোচনা সভায় আসিফ নজরুল এ মন্তব্য করেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আবু সাঈদ আমাদের জুলাইয়ের বীরশ্রেষ্ঠ। এত বড় বীরত্ব অনেক বছর লাগবে আমাদের রিয়েলাইজ করতে। আবু সাঈদের সঙ্গে অন্য শহীদদের কথা আমাদের বলতে হয়, ঘটনার দিন প্রতিবাদ করে আর পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ওয়াসিমের কথা আমার মনে আছে। সেও ছাত্র ছিল। চট্টগ্রামের একটা কলেজের। সবাই জেনে গেছে এভাবে দাঁড়ালে পুলিশ গুলি করবে, মৃত্যু হবে। এটা জেনে এই দেশে এক হাজারেরও বেশি তরুণ আত্মাহুতি দিয়েছে দেশ গড়ার জন্য।’

উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এত বড় আত্মদান যখন হয়, তখন আমরা যখন দায়িত্ব নিই, আমাদের সত্যি মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রোপার সম্মান করার সাধ্য কি আমাদের আছে। আসলে নাই, কিন্তু আমরা চেষ্টা করি।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সাঈদ হত্যাকাণ্ডের জন্য স্পষ্টভাবে দুজন পুলিশ কনস্টেবল দায়ী ছিল। সুজন ও আমির হোসেন। তারা দুজনেই গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের বিচারকাজ শুরু হয়েছে। ফরমাল চার্জ দেওয়ার মাধ্যমিক বিচারকার্য শুরু হয়।’

বিচারব্যবস্থা নিয়ে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা যেখানেই যাই, সেখানেই বলে বিচার দেরি হচ্ছে কেন? আরও দ্রুত করতে হবে, বিচার দেখে যেতে চাই। এই যে আপনারা মুক্তভাবে আমাকে লিখে দিয়ে প্রশ্নগুলো করতে পারেন, এটার জন্যই তো জুলাই গণ-আন্দোলন হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। এই স্বাধীনতার চর্চা সব সময় বজায় রাখতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে রাখার আহ্বান জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা যতভাবে পারেন, আমাদের জবাবদিহির মধ্যে রাখবেন। আমি শুধু আপনাদের একটা কথা বলি, যখন আমরা বিচারকার্য শুরু করলাম, প্রথমদিকে কোর্টই নাই। কোর্ট ভবন রেনভেট করতে হয়েছে। আমাদের ইঞ্জিনিয়ার বলেছিল, তিন মাস লাগবে। আমি ও আমাদের আদিলুর রহমান খান, আমরা রেগুলার ওখানে ইনস্পেকশনে যেতাম। যেটা তিন মাস লাগবে বলেছিল, সেটা আমরা এক মাসে করেছি।’

বিচারকার্যে কারও কোনো গাফিলতি নেই উল্লেখ্য করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘কোর্ট ছিল না, বিচারক ছিল না, বিচারক নিয়োগ দিতে হয়েছে। প্রসিকিউটর ছিল না, প্রসিকিউটর নিয়োগ দিতে হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারপর দেখা গেল, কিছু লোক কাজ করছে না। তাদের চেঞ্জ করে দেওয়া হয়েছে এবং আপনাদের আমি নিশ্চিত করছি, বিচারককার্য দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। কারও কোনো গাফিলতি নাই।’

শেখ হাসিনার শাসনামলের উদাহরণ টেনে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনা কথায় কথায় তার বাবার মৃত্যুর কথা বলত। সেই বাবার মৃত্যুর হত্যাকাণ্ডের যে বিচার, সেটা করতেই উনার আমলে সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছিল। একটা বিচারকার্য যদি স্পষ্টভাবে, সুষ্ঠুভাবে, সারা পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্যভাবে করতে যাই, আমাদের সমস্ত কিছু চিন্তা করতে হয়।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা তো শেখ হাসিনার বিচার করতে আসি নাই। শেখ হাসিনার আমলের বিচার করতে এখানে আসিনি। শেখ হাসিনার আমলের মতো ধরলাম, ফাঁসি দিয়ে দিলাম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়েছে পরবর্তীকালে। সেটা না, আমরা চেয়েছি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে সারা পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্যভাবে এ বিচারকার্যটা যেন হয়।’

বেরোবিতে আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে অলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বেরোবিতে আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে অলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভারত ও থাইল্যান্ডে চিকিৎসা না করে মানুষ রংপুরে আসবে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘চীনের যে হাসপাতাল রংপুরে নির্মাণের কথা রয়েছে, ওই হসপিটালটাকে ঘিরে একটি সর্বাধুনিক হেলথ সিটি গড়ার পরিকল্পনা আমাদের প্রধান উপদেষ্টার আছে। উনি বলেন, এমন হসপিটাল করতে হবে, মানুষ ভারতে, থাইল্যান্ড না গিয়ে রংপুর যেন যায়।

এর পাশাপাশি লালমনিরহাটে যে বিমানবন্দর রয়েছে, সেটি সর্বজনীনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে একটা সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে। আমরা আমাদের সময়ে হয়তো শেষ করতে পারব না, আমরা যেখান থেকে শুরু করে যাব, সেটাকে পাহারা দেওয়ার, রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের থাকবে।’

এর আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কালো ব্যাচ ধারণ করার পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় শোকযাত্রা। ক্যাম্পাসের ১ নম্বর গেটে শহীদ আবু সাঈদ তোরণ এবং পার্কের মোড়ে আবু সাঈদ মিউজিয়ামের উদ্বোধন করে অতিথিরা। এরপর বেরোবি ক্যাম্পাসে আলোচনা সভায় অংশ নেন অতিথিরা।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুরে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বেরোবির ভিসি প্রফেসর ড. শওকাত আলী প্রমুখ।

আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. তানজীমউদ্দীন খান। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনবিআরে আন্দোলন: শাস্তি পেতে পারেন তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী

প্রধান প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, ইইডিতে তোলপাড়

সাবেক আইজির রাজসাক্ষী হওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পুলিশে

গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় ফেসবুকে সরব ইসলামপুরের পলাতক আওয়ামী নেতারা

সরকারি চাকরির নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়া হবে না

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত