Ajker Patrika

রংপুরে এতিমের টাকা সমাজসেবা কর্মকর্তার পকেটে

শিপুল ইসলাম, রংপুর
আপডেট : ১২ জুন ২০২৪, ১০: ৫০
রংপুরে এতিমের টাকা সমাজসেবা কর্মকর্তার পকেটে

নেই পর্যাপ্ত এতিম শিশু। নেই কমিটি। তবু এতিমখানার নামে আসে বরাদ্দ। বরাদ্দের টাকা উত্তোলনও করা হয়। তবে সেই টাকা পকেটে ভরেন তত্ত্বাবধায়ক ও সমাজসেবা কর্মকর্তা। এসব অভিযোগ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আল আমিন শিশুসদনের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা ছমির উদ্দিন ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সামিউল ইসলামের বিরুদ্ধে।

তত্ত্বাবধায়কের যোগসাজশে অতিরিক্ত এতিম শিশু দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, ওই শিশুসদনের কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। নতুন করে এখনো কোনো কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অথচ অনুমোদনহীন কার্যকরী কমিটি ও তত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর করা ভুয়া ব্যয়ের বিল-ভাউচার অনুমোদন করে এতিম শিশুদের জন্য ষাণ্মাসিক বরাদ্দ বাবদ ৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন সামিউল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার ওই টাকা উত্তোলন করা হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শিশুসদনটিতে ৮ থেকে ১০ জন এতিম ও দুস্থ শিশু রয়েছে। অথচ চলতি অর্থবছরে সেখানে অতিরিক্ত ভুয়া নিবাসী এতিম শিশু দেখিয়ে ৬ লাখ ৯৬ হাজার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও তেমন খরচ করা হয়নি। সমাজসেবা কর্মকর্তা ও শিশুসদনের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা নামমাত্র খরচ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। বছরের পর বছর চলে আসছে এভাবে।

এতিমখানার হিফজখানার শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, এখানে মক্তব ও হিফজখানায় প্রায় ৩০ জনের মতো শিশু পড়ে। এর মধ্যে তিন-চারজন এতিম শিশু রয়েছে। গত বছর তিন-চার মাস প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ছিল।

শিশুসদনের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা ছমির উদ্দিন বলেন, ফেব্রুয়ারিতে এতিমখানার কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন কমিটি জমা করা হয়। কমিটি এখনো অনুমোদন হয়নি। আগের কাগজপত্র বাতিল করে আবারও ব্যয়ের বিল-ভাউচার তৈরি করা হয়। তবে ভুয়া এতিম শিশু দেখিয়ে অর্থের অনিয়ম যদি হয়ে থাকে, তার দায়ভার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার।

সদনের সাবেক সভাপতি বলেন, ‘আমি সভাপতি থাকাকালে আবাসিক-অনাবাসিকে ১৫-১৮ জন এতিম ও দুস্থ শিশু ছিল। টাকার অভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিশুসদনটি বন্ধ হয়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক বিভিন্ন কৌশলে অতিরিক্ত এতিম শিশু দেখিয়ে কর্মকর্তার যোগসাজশে সরকারি বরাদ্দের টাকা তোলেন এবং খরচ করেন। তাঁকে বাধা দিলেও কোনো কাজ হয় না।’

সমাজসেবা কর্মকর্তা সামিউল বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে অল্পসংখ্যক হলেও এতিম ও দুস্থ শিশু খাওয়া-দাওয়া করে। বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করা না হলে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ড বাতিল হয়ে যাবে। তাই বিভিন্ন সুপারিশে প্রথম কিস্তির বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর করা হয়নি। অনুমোদনহীন কমিটির স্বাক্ষরে এতিমের টাকা উত্তোলন  ও এতিমখানায় ১২০ জন নিবাসী শিশু থাকার প্রত্যয়ন দেওয়ার  বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

সমাজসেবা অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, ‘আল আমিন শিশুসনদ ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুয়া এতিম সাজিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের টাকা ছাড় না করার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে কৌশলগতভাবে টাকা উত্তোলন করে থাকলে এর দায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নিতে হবে।’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘ওই এতিমখানায় কোনো এতিম শিশু নেই। ইউএনও বিষয়টি আমাকে নিশ্চিত করেছেন। এতিমের বরাদ্দ লোপাটসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত