Ajker Patrika

এক লাইট ও এক ফ্যান চালিয়ে কাছিরনের বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৭ হাজার ২০০ টাকা

কুড়িগ্রাম ও উলিপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ২১: ৫৫
Thumbnail image

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দিনমজুর কাছিরন বেওয়া। সরকারের দেওয়া বিধবা ভাতা আর অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলে তাঁর দিন। থাকার একটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে তাতে একটি মাত্র বাল্ব জ্বালান। ঘরের বেড়া কেটে এমনভাবে বাল্বটি লাগানো হয়েছে, যেন একই সঙ্গে ঘর ও ঘরের বাইরে আলো পাওয়া যায়। তীব্র গরম থেকে রেহাই পেতে ঘরে বিছানার ওপর ছোট একটি মিনি ফ্যান চালান। জীর্ণ রান্না ঘরে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তারপরও কাছিরনের একটি লাইট আর ছোট একটি ফ্যানের বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৭ হাজার ২০০ টাকা। 

অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলে কাছিরনের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বিলের কাগজ নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। অস্থিরতায় দিন কাটছে তাঁর। দুই দিন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উলিপুর অফিসে গেলেও কোনো সমাধান মেলেনি। বিল নিয়ে অসহায় এই নারী আজ দিশেহারা। তিনি এর সমাধান দাবি করেছেন। 

কাছিরনের বাড়ি উলিপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রামদাস ধনিরাম সরদারপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত কাশেম আলীর স্ত্রী। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বাড়িতে একা থাকেন কাছিরন। 

কাছিরনকে দেওয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মে মাসের বিলের কাগজে দেখা গেছে, বর্তমান ইউনিট ৬০, পূর্ববর্তী ইউনিট ০ ও ৭১৬। ব্যবহৃত ইউনিট উল্লেখ করা হয়েছে ০। তবে গড় বিল উল্লেখ করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৬২ টাকা। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বিল পরিশোধ হলে কাছিরনকে অন্যান্য চার্জসহ মোট ৭ হাজার ২০০ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। 

কাছিরন বেওয়া জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার পর ঘরে মাত্র একটি লাইট আর একটি মিনি ফ্যান ব্যবহার করে আসছেন। এর বাইরে তিনি কোনো বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন না। প্রতি মাসে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসছিল। এই টাকাও কাছিরনের কাছে বড় অঙ্ক। তাই মার্চ মাসে তিনি মিটার পরিবর্তন করে নেন কম বিদ্যুৎ বিলের আশায়। এরপর দুই মাস তাঁকে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ দেয়নি। মে মাসে তাঁকে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ২০০ টাকা। প্রতিবেশীদের কাছ এত টাকার বিদ্যুৎ বিল আসার কথা শুনে তাঁর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। 

কাছিরন বলেন, ‘মাইনষের বাড়িত কাজ করি আর সরকারের ভাতার টাকায় কোনো রকম সংসার চলে। এত টাকা বিল হয় কেমন করি। বিলের কাগজ আসার পর ভাত রান্না করবার পাই না। চিন্তায় চিন্তায় ইয়ার-উয়ার বাড়ি যাই। বিলের কপি নিয়া দুই দিন অফিস গেছি। কোনো কথায় শোনে না। ৭ হাজার ২০০ টাকা পরিশোধ করবার কইছে। আমি গরিব মানুষ, এত টাকা কেমন করি পরিশোধ করি। তোমরা ইয়ার সমাধান করি দেও।’ 

কাছিরনের বিদ্যুৎ বিল ৭ হাজার টাকা হওয়া অস্বাভাবিক বলে স্বীকার করেছেন কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উলিপুর অফিসের ডেপুটি জোনাল ম্যানেজার (ডিজিএম) সোহানুর রহমান। হোয়াটসঅ্যাপে কাছিরনের বিলের কাগজের ছবি পাঠিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বিলের কাগজে যে রিডিং উল্লেখ করা হয়েছে সেটি আমার কাছেও অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। আমি বিলিং সহকারীর কাছে জানলাম যে এটা সমস্যা হয়েছে। সংশোধন করা হবে।’ 

বিল প্রস্তুতকারীর বরাতে ডিজিএম বলেন, ‘পুরোনো মিটারের একটি ইউনিট ভুলবশত এই বিলে উঠে গেছে। বিলিং সহকারী আগের নষ্ট মিটারের ইউনিট এই বিলে দিয়ে থাকতে পারেন। আগামীকাল সকালে আসলে বিষয়টি দেখে আমরা সংশোধন করে দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত