Ajker Patrika

নীলফামারীর ডিমলায় হঠাৎ বন্ধ বয়স্ক ভাতা, বিপাকে প্রবীণেরা

মাসুদ পারভেজ রুবেল,  ডিমলা (নীলফামারী)
আপডেট : ২৬ মে ২০২৪, ১০: ২৬
Thumbnail image

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুর্নারঝাড় গ্রামের বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম পাঁচ বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। ছয় মাস আগে হঠাৎ করেই তাঁর ভাতা আসা বন্ধ হয়ে যায়। পরে সমাজসেবা কার্যালয়ে কয়েকবার ধরনা দিয়ে জানতে পারেন, ভাতাভোগীদের তালিকায় তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে। তাই তাঁর ভাতার কার্ড বাতিল হয়ে গেছে। তাঁকে কীভাবে মৃত দেখানো হলো, কারা এমনটি করল, এর কিছুই জানেন না তিনি।

শুধু হামিদুল নন, তাঁর মতো উপজেলার অনেক জীবিত ভাতাভোগী এখন কাগজে কলমে মৃত হওয়ায় ভাতা পাচ্ছেন না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাঁদের মৃত দেখিয়ে কার্ড বাতিল করেছে সমাজসেবা কার্যালয়। অনেক ভাতাভোগীর ফোন নম্বর গোপনে পরিবর্তন করে ভাতাবঞ্চিত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে অভিযোগ জানালে হয়রানি ও অসদাচরণ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিমলায় ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ২৩০। এর মধ্যে ১২ হাজার ১৮৫ জন বয়স্ক, ৬ হাজার ৪৭ জন প্রতিবন্ধী এবং ৭ হাজার ৮৯৮ জন বিধবা ভাতাধারী।

ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়া হামিদুল বলেন, ‘সংসার চালাতে বৃদ্ধ বয়সেও তিনি দিনমজুরের কাজ করেন। সরকারের দেওয়া মাসে ৬০০ টাকা তাঁর একটি সম্বল হয়ে উঠেছিল। এখন নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে সমাজসেবা কার্যালয়ে যাতায়াতে তাঁর বেশ কিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে। এ জন্য তিনি স্থানীয় এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদের ওপর দেড় হাজার টাকা নিয়েছেন। এখন সেই টাকাও বেড়ে সুদে-আসলে  দ্বিগুণ হয়েছে।

খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের আজিরন বেওয়া সাত বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। তবে গত ৯ মাস ধরে আর ভাতা পাচ্ছেন না। স্থানীয় ইউপি সদস্য ওহাব আলীর মাধ্যমে সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন কাগজ কলমে তিনি মৃত, তাই ভাতা বন্ধ। কে এমন কাজ করেছে, তা জানেন না ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান কেউই। এখন ভাতা বন্ধ হওয়ায় নিজের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। আজিরন বলেন, ‘সমাজসেবা অফিসে গিয়েছি। তাঁরা কাগজপত্র দেখেছেন। মৃত তালিকা থেকে নাম কাটতে খরচ বাবদ কিছু টাকাও চেয়েছেন। আমি দিতে পারিনি।’

ইউপি সদস্য ওহাব আলী বলেন, ‘আমার গ্রামে কোনো লোক মারা গেলে অবশ্যই আমার জানার কথা। বিষয়টি হাস্যকর। এই ইউনিয়নে আরও ২০ থেকে ২৫ জন সুবিধাভোগীর একই সমস্যা হয়েছে।’

খালিশা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, হামিদুল ও আজিরনকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কখনো মৃত ঘোষণা করা হয়নি। তাঁদের নামে মৃত্যু বা অন্য কোনো সনদ কোথাও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

একই অভিযোগ করেন উত্তর তিতপাড়ার মকবুল হোসেন। তিনি জানান, আগে নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেলেও দেড় বছর ধরে আর টাকা পান না। দেড় বছর ধরে সমাজসেবা কার্যালয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার নুরী বলেন, ভাতাভোগীদের সঠিকতা যাচাই-বাছাইয়ের (লাইভ ভেরিফিকেশন) সময় যাঁদের পাওয়া যায়নি, নিরুদ্দেশ দেখিয়ে তাঁদের ভাতার কার্ড বাতিল করে নতুন সুবিধাভোগীর নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই সংখ্যা পাঁচ-সাতজনের বেশি নয়। নিরুদ্দেশ ব্যক্তিদের প্রত্যয়নপত্র বা মৃত্যুসনদ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা নিরুদ্দেশ ব্যক্তিদের তালিকা দিয়েছেন। তবে তালিকার কপি দেখাতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এ সময় সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

যোগাযোগ করা হলে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, মৃত্যুসনদ ছাড়া ভাতা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। এ ঘটনায় তদন্ত করে কোনো অনিয়ম পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত