Ajker Patrika

সেতুর নিচ থেকে বালু তুলছেন ঠিকাদার, ঝুঁকিতে বাঁধ-সেতু

মাসুদ পারভেজ রুবেল,  ডিমলা (নীলফামারী)
Thumbnail image
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এভাবে নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা সেচ প্রকল্পসংলগ্ন বুড়িতিস্তা নদীতে সেতুর নিচ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়ছে তিস্তা সেচ প্রকল্প এবং সেতু ও প্রতিরক্ষা বাঁধ। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা সেচ প্রকল্পসংলগ্ন বুড়িতিস্তা নদীতে সেতুর নিচ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের বুড়িতিস্তা সাইফুন (নদীর তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত সেচনালার অবকাঠামো) প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের নামে এক মাস ধরে অবৈধ বোমা মেশিন দিয়ে এই বালু তুলছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদার।

এদিকে অবৈধ এই বালু উত্তোলনের কারণে তিস্তা সেচ প্রকল্প, বুড়িতিস্তা সাইফুন, সেতু ও প্রতিরক্ষা বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, তীর রক্ষার জন্য ব্যবহৃত সিসি ব্লক তৈরি হচ্ছে নদীর নিম্নমানের বালু দিয়ে। নিম্নমানের সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে এই কাজে।

নীলফামারী পাউবোর দেওয়া তথ্যমতে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বুড়িতিস্তা নদীর ডান তীরে ৫০০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৮ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আওতায় নদীর ডান পাড় উঁচু করে ১ লাখ সিসি ব্লক বসানো হবে। কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঠাকুরগাঁওয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. শামিমুর রহমান-মো. জামাল হোসেন (জেবি)। কাজের মেয়াদ গত জুনে শেষ হলেও সম্পন্ন হয়েছে ৫০ ভাগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের সাজ্জান এলাকায় বুড়িতিস্তা নদীর তলদেশ দিয়ে সেচ প্রকল্পে পানিপ্রবাহের সাইফুনের নিচে ও নির্মাণাধীন প্রতিরক্ষা বাঁধের ২০ মিটারের কম দূরত্বে নদীর মাঝখানে একাধিক বোমা মেশিন বসিয়ে গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ওই বালু ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁধ নির্মাণকাজে। যে স্থানে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তার ১০০ মিটার দূরত্বে তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রধান নালা, বুড়িতিস্তা সেতু ও পাকা সড়ক।

অথচ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা যাবে না। নদীর তীর ভাঙনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বালু তোলা নিষেধ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেতু ও সাইফুনের খুব কাছেই গভীর খাল করে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি আত্মঘাতী। আসন্ন বর্ষায় বাঁধসহ আশপাশের সব ধসে সেচ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে সাইফুন দেবে গেলে সেচ প্রকল্পের পানিপ্রবাহ বন্ধ হবে।

বালু উত্তোলনকাজে নিয়োজিত বোমা মেশিনের চালক জুয়েল জানান, তাঁরা এখানে মেশিন দিয়ে বালু তুলে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে বাঁধে দিচ্ছেন। মাসখানেক সময় ধরে কাজ চলছে। কী পরিমাণ বালু উঠেছে, তা এখনো হিসাব হয়নি। তিনি বলেন, ঠিকাদারের নির্দেশে তাঁরা এ কাজ করছেন।

কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জুলফিকার রহমান বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তাঁরা যখন কাজের স্থানে যান, তখন কেউ বালু উত্তোলন করে না।

তবে এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করলেও সাড়া মেলেনি।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নদীবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন অবৈধ। নদী বা সেচ প্রকল্প এলাকায় বালু উত্তোলন করলে তা হবে আত্মঘাতী। এভাবে বালু উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করলে সেটা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে।

এ বিষয়ে নীলফামারী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা বা নদী থেকে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। ঠিকাদার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত