Ajker Patrika

জমির দখল ফিরে পেল বৃদ্ধের পরিবার, ‘রাস্তাঘাটে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে’ প্রভাবশালীরা

রংপুর প্রতিনিধি
আব্দুল জব্বার। ছবি: আজকের পত্রিকা
আব্দুল জব্বার। ছবি: আজকের পত্রিকা

খড়ের ছাউনি দেওয়া ১০ হাত একটি ঘরে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে থাকেন আব্দুল জব্বার (৬৮)। জায়গার অভাবে গোসল করেন সেচ ক্যানেলে। স্ত্রী-সন্তানদের প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় ঝোপঝাড়ে। পানির জন্য যেতে হয় অন্যের নলকূপে। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের বেলাইচণ্ডী সর্দারপাড়া গ্রামে থাকেন আব্দুল জব্বার। নিজের বাপ-দাদার জমি থাকলেও এলাকার প্রভাবশালীরা তা দখল করে ছিল। বছরের পর বছর আইনি লড়াই শেষে সম্প্রতি পৈতৃক জমির দখল ফেরত পেয়েছেন আব্দুল জব্বার। জমির দখল ফিরে পেয়ে তিনি ভেবেছিলেন, এবার বুঝি সুখের দেখা মিলবে। কিন্তু এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি তাঁর। ১৩ জুলাই জমি দখল মুক্তির দিনই হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। প্রভাবশালী দখলদারদের হামলা ও প্রাণনাশের হুমকিতে

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জব্বার ও তাঁর পরিবার। এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার তারাগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।

পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় জানা গেছে, আব্দুল জব্বারের দাদা জমির উদ্দিনের অনেক জমিজমা ছিল। সেগুলো দখল করে নিয়েছেন এলাকার প্রভাবশালীরা। এ নিয়ে ৭০ বছর আগে মামলা হয়। কিন্তু দখলদারেরা জমি ছাড়েন না। জমির উদ্দিন মারা যাওয়ার পর বাদী হন তমিজ উদ্দিন। তমিজ উদ্দিন মারা যাওয়ার পর ২০১৫ সালে মামলার বাদী হন আব্দুল জব্বার। মামলার রায়ে জমিটি পুনরুদ্ধারে নির্দেশনা দেন আদালত। ১৩ জুলাই দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিসহ সেনাবাহিনী, তারাগঞ্জ থানা-পুলিশ ও আদালতের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ৬৮ শতাংশ জমিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে তাঁর কাছে জমির মালিকানা হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু ওই দিনই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উচ্ছেদকৃত জমি ও তাঁর বসতবাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালান প্রভাবশালীরা। আব্দুল জব্বারের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন পুরোনো দখলদার প্রভাবশালীরা। এতে পরিবার নিয়ে তিনি আতঙ্কে আছেন। হামলা ও প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় গতকাল এলাকার রাজু, জামাল উদ্দিন ওরফে টোল্লা, দুলু, খোকন সরদার রেজাউল হোসেন, রফিক আলী, চন্টু, কালা মিয়া, জিকরুল ইসলাম, জিয়ারুল ইসলাম, সম্ভারু, আরজিনা বেগম, দুলালী বেগম, রফিকা বেগম, মশিয়ার রহমান ওরফে কালুয়া, লাল বাহাদুর, মাসুদ ও আফেজা বেগমের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন তিনি।

আজ শুক্রবার সরেজমিন গেলে আব্দুল জব্বার জানান, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৬৮ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছিলেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিষয়টি নিয়ে রংপুর সদর কোর্টে মামলা চলছিল। আদালতের নির্দেশে ১৩ জুলাই দুপুরে তারাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে জমি দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হয়। আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার জমি দখল করেছি। আমার পেশিশক্তি নাই। একটা ছোট ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। তাঁরা আমার একটি মাত্র খড়ের ঘরের চারদিকে চুলা বসাত। ধোয়ায় আমরা ঘরে থাকতে পারতাম না। কল, টয়লেট, গোসলখানা ছিল না। তাদের কাছে আড়াই শতক জায়গা চেয়েছিলাম, কিন্তু দেয় নাই। আমার থাকার আশ্রয়টাও কেড়ে নিতে চেয়েছিল। আল্লাহ মুখ তুলে তাকাইছে। আইনের মাধ্যমে জমি ফিরে পাইছি। কিন্তু এখন মারতে আসছে। মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। খুব ভয়ে আছি।’

আব্দুল জব্বারে মেয়ে জেসমিন আক্তার বলেন, ‘দখলদারেরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের মারধর করতে আসছিল। আমরা কী করব ভেবে পাচ্ছি না। রাতে পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছি। এতে প্রতিপক্ষ আরও ক্ষিপ্ত। তারা রাস্তাঘাটে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আদালতের রায়ের আদেশে পুলিশ, সেনাবাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনও আদালতের লোকজন আমাদের দখল বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ আমাদের জমিতে যেতে দিচ্ছে না। তারা আইন মানছে না, পেশিশক্তি দেখাচ্ছে। আমাদের শক্তি নেই। আমরা আইনের মাধ্যমে সরকারে কাছে এর বিচার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এক দখলদার মো. সম্ভারু বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থাকি আমরা এইভাবে আছি। কাগজপাতি ওতোটা বুঝি নাই। ওরা জমি পাইছে জমি নিবে। মারধরে হুমকির অভিযোগ ঠিক না।’

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত