Ajker Patrika

জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই

  • টানা ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি শুরু আজ।
  • ৫ জেলার লাখো মানুষ অবস্থান নেবে তিস্তার তীরে।
  • দাবি পানির হিস্যা, স্থায়ী বাঁধ ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
খোরশেদ আলম সাগর, লালমনিরহাট
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১: ৫৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তিস্তাতীরের ৫ জেলার লাখো মানুষ। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে আজ সোমবার রংপুরের মহিপুরে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কাল মঙ্গলবার সমাপনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

কর্মসূচি সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজক সংগঠন তিস্তা রক্ষা আন্দোলনের প্রধান বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলন কোনো দল বা মতের নয়; এটি গোটা রংপুর অঞ্চলের মানুষের গণদাবি। যার মধ্য দিয়ে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। আমরা চাই, তিস্তা মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে অবহেলিত এই অঞ্চলে গড়ে উঠুক স্যাটেলাইট ভিলেজ, অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন কেন্দ্রসহ কৃষি ও শিল্পবিপ্লব।’

জানা গেছে, কর্মসূচি সফল করতে নদীতীরের একাধিক স্থানে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। থাকবে তিস্তাপারের মানুষের সুখ-দুঃখের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, ভাওয়াইয়া গানের আসর, দিনভর ঘুড়ি উৎসবসহ গ্রামীণ নানান খেলাধুলা। স্থানীয় মানুষের নিজেদের চাল-ডাল সহায়তায় পরিবেশন করা হবে খিচুড়িসহ প্রয়োজনীয় খাবার। এভাবে টানা ৪৮ ঘণ্টা তিস্তাতীরেই অবস্থান করবে রংপুরের ৫টি জেলার কয়েক লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চলছে প্রচারাভিযান। ব্যাপক লোকসমাগমের প্রত্যাশা আয়োজক কমিটির।

ভারতের সিকিমে জন্ম নেওয়া তিস্তা নদী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে।

এরপর লালমনিরহাট, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।

উজানে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে দেশটি তিস্তার পানি একতরফা ব্যবহার করছে। এতে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে বর্ষা শেষ হতেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়ে জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। আবার বর্ষাকালে ভারত অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় নদীভাঙন ও বন্যার মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ অংশের রংপুর বিভাগ।

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হচ্ছে উভয় দেশের মধ্যে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন সময় নানান কর্মসূচি পালন করেছে। বহু আন্দোলন-সংগ্রাম হলেও সুফল পায়নি তিস্তাপারের মানুষ।

এ কারণে তিস্তাপারের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে তিস্তা নদী খনন করে উভয় তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের। যাতে নদীভাঙন, বন্যা আর খরা থেকে রক্ষা পায় এ জনপদ। তবেই চাষাবাদের আওতায় আসবে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। সেই দাবি পূরণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

তিস্তাপারের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, ‘নদীভাঙনে ১২-১৪ বার বসতভিটা সরিয়ে নিয়েছি। শুকনো মৌসুমে বালু জমিতে কঠোর পরিশ্রম করে, যা চাষাবাদ করে যা পাই, সেটুকু দিয়ে চলে পুরো বছর। কিন্তু বর্ষার বন্যায় তা বসতভিটা ভেসে বা ভেঙে যায় নদীতে। তাই চাই স্থায়ী বাঁধ; যাতে ফসল নষ্ট না হয় বা বসতভিটা ভেসে না যায়।’

তিস্তাপারের আদিতমারী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, তিস্তা নদী শাসন করতে পারলে উত্তরাঞ্চলে কৃষিবিপ্লব ঘটবে, শিল্পবিপ্লব ঘটানোও সম্ভব। চাষাবাদের আওতায় আসবে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। সব মিলিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পিছিয়ে পড়া তিস্তাপারের মানুষ স্বস্তি পাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত