Ajker Patrika

কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা শিক্ষকদের চাঁদায়

  • ১৫ এপ্রিল উপজেলা পরিষদে মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা
  • শিক্ষা কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা দিতে ৬০০ টাকা করে চাওয়া হয়েছে
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৪২
কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা শিক্ষকদের চাঁদায়

দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, খানসামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা দিতে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেন না বলে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ এপ্রিল খানসামা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স হলরুমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন আয়োজকেরা। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, কেন্দ্রসচিব ও কিছু শিক্ষকনেতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলার ১৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ৬০০ টাকা করে বাধ্যতামূলক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। এরপর উপজেলার ৪টি ক্লাস্টারের দায়িত্বরত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক, সাখাওয়াত হোসেন, কাজল চন্দ্র রায় ও হোসনে মোবারক চাঁদা সংগ্রহের বিষয়টি সমন্বয় করছেন। চাঁদার টাকা দিতে অনেক প্রধান শিক্ষক অস্বীকৃতি জানালেও কর্মকর্তাদের ভয়ে বাধ্য হয়েই ৬০০ টাকা করে দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্লাস্টার পর্যায়ে টিও (উপজেলা শিক্ষা অফিসার) এবং এটিও (সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা) স্যারেরা যোগদানের পরই সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আবার জেলার স্যারদেরসহ উপজেলা স্যারদের সংবর্ধনা প্রদানের জন্য ১৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৬০০ টাকা করে বাধ্যতামূলক চাঁদা দেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। ক্লাস্টারের দায়িত্বরত এটিও স্যার ও কিছু শিক্ষকনেতা এই চাঁদা প্রদানের জন্য প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন। তাই নিরুপায় হয়ে সেই চাঁদা দিতে হচ্ছে। আর সংবর্ধনা দিলেও এত টাকার প্রয়োজন হয় না।’

কয়েকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় কর্মকর্তারা আসবেন, এটা তাঁদের দায়িত্ব। সেখানে চাঁদা তুলে এত টাকা খরচ করে সংবর্ধনার যৌক্তিকতা কথায়? আমাদের মতো নিরীহ শিক্ষকদের টাকা তুলে অফিসারদের তোষামোদী ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য দেখতেছি না। এটার কোনো প্রয়োজন নেই।’

চাঁদা সংগ্রহের বিষয়ে জানতে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, কাজল চন্দ্র রায় ও হোসনে মোবারককে ফোন করা হলে তাঁরা বলেন, ‘এমনটি আমরাও শুনতেছি। সংবর্ধনার আয়োজক শিক্ষকেরা। সংবর্ধনায় কাকে কী দেবে, কত করে চাঁদা ধরেছে, সেটা আমরা জানি না।’ কোনো কথা জানার থাকলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন এক কর্মকর্তা।

সম্প্রতি যোগদান করা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির তালুকদার চাঁদা সংগ্রহ করে সংবর্ধনার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কেউ কোনো কিছু জানায়নি। চাঁদা সংগ্রহের ঘটনা ঘটলে সেটার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করে চাঁদা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ঘটনার সত্যতা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারি দায়িত্ব হিসেবে মাসিক সমন্বয় সভায় খানসামা যাওয়ার কথা রয়েছে। সংবর্ধনার বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি। এর আগে নিয়মিত পরিদর্শনে জেলার ১২টি উপজেলায় গেছি। কোনো উপজেলায় সংবর্ধনা গ্রহণ করিনি। সেখানে চাঁদা তুলে সংবর্ধনা আয়োজন করলে সেই সভায় যাব না।’ তিনি আরও বলেন, চাঁদা আদায়ের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত