Ajker Patrika

ডিমলায় তিস্তার চরে নিচু জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, বসবাসে ভোগান্তি

মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ৫৩
ডিমলায় তিস্তার চরে নিচু জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, বসবাসে ভোগান্তি

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামে তিস্তা নদীর দুর্গম চরে নিচু জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্ষা মৌসুমে এসব ঘরে পানি ওঠে। বসবাসে ভোগান্তি হওয়ায় অনেক উপকারভোগী অন্যত্র চলে গেছেন। 

বাসিন্দাদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে চরের নিচু জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যে স্থানে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানিতে ডুবে যায়। প্রকল্পের দেড় শতাধিক মানুষ বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানিবন্দী থাকে। 

ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন তিস্তা নদীবেষ্টিত। কেল্লাপাড়া গ্রাম তিস্তার দুর্গম চরে অবস্থিত। এলাকাটিতে জনবসতি কম। সেখানে আবাদি ও অনাবাদি জমি বেশি। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে কেল্লাপাড়া গ্রামে তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। জনপ্রতি দুই শতক জমিসহ ও একটি করে ঘর নির্মাণে মোট বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। 

স্থানীয়রা জানান, যে স্থানে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে ১৫ বছর আগে নদীর প্রবাহ ছিল। পরে নিচু জায়গায় জেগে ওঠা চরে আশ্রয়ণের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। 

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের ঘরগুলো উপজেলার শেষ সীমানায় দুর্গম চরে নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাটির চারদিকে তিস্তা নদী। বর্ষায় পানিতে তলিয়ে থাকে। নদীভাঙনের আতঙ্ক আছে। 

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, বর্ষায় প্রকল্পের চারপাশে কোমরসমান পানি থাকে। ঘরের জানালা পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকে। যাতায়াতের রাস্তা নেই। বর্ষাকালে পানি-কাদায় এখানে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেকে নামমাত্র দামে ঘর বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছেন। 

প্রকল্পের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বাস করেন। সামান্য বন্যাতেও নদীর পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। তাঁরা জিনিসপত্র, চাল-ডাল, গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপদে পড়েন। এমন মানবেতর জীবন যাপন করতে কে এসব ঘরে থাকতে চাইবে? প্রশ্ন করেন তিনি। 

নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তার চরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা বানেছা বেগম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘সরকার হামাক এমন জায়গাত ঘর দিছে, বছরের পাঁচ মাস পানিবন্দী থাকির নাগে। ছাওয়া গিলা স্কুল যাবার পায় না। বড় বান আসিলে হামাক ঘরোত পানিতে মইরবার নাগিবে।’ 

এলাকার লোকজনের অভিযোগ, জেনেশুনে নদীর চরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। উঁচু জায়গায় ঘরগুলো করা হলে প্রকল্পের বাসিন্দাদের এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। 

‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন, ‘এই আশ্রয়ণ প্রকল্প ভূমিহীনদের জন্য বড় আশীর্বাদ হতে পারত। কিন্তু নিচু জায়গায় অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। দিন শেষে তাঁদের উদ্বাস্তু হওয়ারই দশা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের কোটি কোটি টাকাও অপচয় হলো।’

ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। তবে বাঁধের বাইরে নদীর চরে ওই ঘরগুলো নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। বাঁধের ভেতরে ঘর নির্মাণ করলে এ সমস্যা হতো না।’ 

ঘর নির্মাণ কমিটির সদস্যসচিব পিআইও মেজবাহুর রহমান বলেন, প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণের দায়িত্ব ভূমিসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তাঁরা শুধু প্রকল্পের ঘর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের অনেক আগে আবাসন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার হবে।’ 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক নায়িরুজ্জামান রাসেল মিয়া বলেন, ‘কেন, কী কারণে নদীর চরে প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল—এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।’ সেই সঙ্গে প্রকল্পের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটি রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের তদবির

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত