Ajker Patrika

ফেসবুকে মন্তব্য নিয়ে দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী গ্রামে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা

দিনাজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৩: ৫৮
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য নিয়ে দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম বনতাড়ায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগ তুলে এক হিন্দু যুবককে গ্রেপ্তারের দাবিতে গত এক সপ্তাহে দুই দফা বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। হামলার আশঙ্কায় মুখে ওই গ্রামের ২০–৩০টি হিন্দু পরিবার সপ্তাহখানেক দোকানপাট বন্ধ রেখে প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায় কাটিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে আজ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী বনতাড়া গ্রামের বাসিন্দা গাজীপুরে পোশাক কারখানায় কর্মরত ওই যুবক গত ২ এপ্রিল ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের কমেন্টে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিনে দুই দফা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়। এতে বনতাড়াসহ আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দোকানপাট বন্ধ করে রাখেন ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে যায়।

তবে আজ মঙ্গলবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং ব্যবসা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফেরাতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোকে চাল ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

আজ সকালে বনতাড়া এলাকায় ওই যুবকের মা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। স্থানীয় আঞ্জুয়ারা, মঙ্গলি ও দুলোবালার কাছে কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, পরিবারের সুখ-দুঃখের আলাপ করছেন। তাঁদের মধ্যে কোনো সমস্যা নাই। একজনের জন্য এলাকার সবাই সমস্যায় পড়েছেন।

তাঁদের পেরিয়ে ওই যুবকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় ঘরের বারান্দায় বসে আছেন তাঁর মা (৪১)। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ২৯ মার্চ ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসে সে (যুবক)। ঈদের পরের দিন স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ি সদর উপজেলার ঝানজিরা এলাকায় যায়। পরে এলাকার কিছু তরুণ ছেলে জানায় সে (যুবক) মোবাইলে কী কী সব লিখেছে। তাকে পেলে লোকজন মারবে। এ ঘটনার পর থেকে ছেলের মোবাইল বন্ধ। এমনকি ওই দিন থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে যুবকের বাবাও বাড়িতে নেই।’

ওই যুবকের মা বলেন, ‘আমার ছেলে অপরাধ করছে, আমি ছেলের পক্ষ হইয়ে সবার কাছে মাফ চাচ্ছি। আমাদের জন্য গ্রামবাসী সবারে অন্যায় অত্যাচার, ভয়তে বাড়িত থাকতে পারছে না। মেলাজন আপদ-বিপদে আছে। আমার ছেলে অপরাধ করছে আমাদেরকে শাস্তি দেন, জনগণ কেনে শাস্তি পাবে। দোষ করছে আমার ছেলে আমার ছেলেই শাস্তি পাবে।’

বনতাড়ার ছোট্ট বাজারটিতে ১০-১৫টি মুদি ও চায়ের দোকান। এর মধ্যে ৫/৬টি দোকানের মালিক হিন্দু সম্পদ্রায়ের লোকজনের। অধিকাংশই জেলে ও কৃষক। কয়েকজন ইজিবাইক চালান। ঘটনার পর থেকে তাঁরা দোকানপাট ও স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ রেখেছিলেন।

জালিয়াপাড়া জেলে সমিতির নেতা মানিক চন্দ্র দাস (৫০) বলেন, ‘আমরা এখানে সবাই মিলেমিশে থাকি। মনে করেন মায়ের কোলাতে আছি। একজন বিপদে পড়লে সবাই দৌড় যাই। আজকে যুবকের কারণে আমাদের অশান্তি শুরু হয়া গেইছে। একজনের অপরাধে সবারে ভোগান্তি হলো। গ্রামের লোক কারও দোকানপাট-বাড়িঘর ভাঙতে গেলে তো আফসোস করবে। কিন্তু বাইরের লোক তো ওগুলা দেখিবে না। এইজন্য আমরা দোকানগুলা বন্ধ রাখছিলাম। এখানে কেউ আমাদের কোনো হুমকি ধামকি দেয় নাই।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যুবকের পরিবারসহ অন্যদের সামান্য খাদ্যসামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। দোকানপাট সব খোলা হয়েছে। আর কোনো সমস্যা হবে না।’

স্থানীয় হরিসভা মন্দিরের সভাপতি মনো দাস (৪৫) বলেন, ‘আমাদের হরিসভা গত বৃহস্পতিবার থেকে হবার কথা ছিল। কোনো বাধা না আসলেও বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমরা সেটা বন্ধ করে রাখি। আমরা সবুজ দাসের বিচার চাই। যে দোষ করছে তার শাস্তি চাই।’

ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নটা খুব শান্তশিষ্ট। আমরা হিন্দু-মুসলমান সকলে মিলেমিশে থাকি। এখানে যেন আর কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য আমরা সকলে সচেষ্ট আছি।’

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় উসকানি ও সহযোগিতার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত