Ajker Patrika

‘নয়া কাটের বিরিজ হইল, হামরা অনেক খুশি’

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ১৪: ২৭
Thumbnail image

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়নে বুড়াইল নদে ভেঙে পড়া সেই বাঁশের সাঁকো পুনরায় নির্মাণ করে দিলেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। নির্মাণকাজ শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই সাঁকো পরিদর্শন করে জনসাধারণের চলাচলে সেটি উন্মুক্ত করে দেন। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে ওই এলাকার মানুষ। চর খোর্দ্দা গ্রামের জমিলা বেগম বলেন, ‘নয়া কাটের বিরিজ হইল। হামরা অনেক খুশি।’ 

গত ২৮ মে দৈনিক আজকের পত্রিকায় ‘ভোটে জিতে খোঁজ নেন না’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর বিষয়টি স্থানীয় এমপির নজরে আসে। এরপর এমপি নদীতে ভেঙে পড়া সাঁকোটি পুনরায় নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ২০ দিনের মাথায় তিনি ভেঙে যাওয়া সেই বাঁশের সাঁকোর স্থানে আবারও কাঠ দিয়ে নির্মাণ করে দেন সেতু।

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে এটি দ্রুত করে দেওয়া হলো। মজবুত করতে বাঁশের পরিবর্তে এবার কাঠ আর কংক্রিটের সিড়ি দিয়ে করা হয়েছে। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পরই পুনরায় নির্মাণ শুরু করা হয়েছিল। তদারক করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আমার প্রতিনিধিরা। পরশু সম্পন্ন হওয়ায় সেটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো জনসাধারণের চলাচলে। আশা করি দুর্ভোগ অনেকটাই কমবে। এখানে ব্রিজ না হওয়া পর্যন্ত এই সাঁকো আমি নিজেই তদারক করব।’

শামীম হায়দার আরও বলেন, ‘এই বুড়াইল নদের ওপর স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণে অনেক আগেই তালিকা পাঠানো হয়েছে, কিন্তু করোনার কারণে মনে হয় দেরি হচ্ছে। তা না হলে এত দিনে ব্রিজটি হয়ে যেত। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি লেগেই আছি।’

তবে এলাকারবাসীর মূল দাবি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ। জমিলা বেগম বলেন, ‘ছাওয়ারা এখন হামার স্কুল যাবার পাইবে। কিন্তু কয় মাস যাইবে এখান বিরিজ। সেটাও মনে হয় হামার। সেই জন্যে হামার দাবি একবারে এমন বিরিজ করি দেন, আর যিন না ভাঙ্গে। তাহইলে চিন্তা শেষ হইবে হামার।’ 

খোর্দ্দা নামাপাতা গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিন ছেলে মানিক ব্যাপারী (৩০) বলেন, ‘আগে এটে বাঁশের সাঁকো আছিল। তাক ভাঙ্গি নদীত পড়ি গেইছে। ম্যালাদিন থাকি হামারগুলার খুব কষ্ট হইছে। এমপি স্যার এটে কাঠ দিয়া বিরিজ করি দিলেন। হামরা আইজ সবাই খুব খুশি। আল্লাহ স্যারের ভালো করুক। তবে হামাকগুলাক একবারে ভালো বিরিজ করি দেওয়া নাইগবে। এইটা হামারগুলার মূল দাবি।’ 

সেই বাঁশের সাঁকোটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছেতারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমিও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছি। এমপি মহোদয় টাকা দেওয়ার পরে কাজ শুরু করি। এটি করতে ১০-১২ দিন লেগেছে।’
 
আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘তারাপুর ইউনিয়নে এ ধরনের সাঁকো আছে প্রায় ১০টি। একার পক্ষে এগুলো করা সম্ভব নয়। তাছাড়া পরিষদে এ ধরনের কোনো বাজেটও নেই। সে কারণে এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় করা হয়েছে। তবে স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

উপজেলা প্রকৌশলী শামছুল আরেফীন জানান, ‘এখানে স্থায়ীভাবে ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলেই ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

উল্লেখ্য, তারাপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দা নামাপাতা নামক গ্রামের ওপর দিয়ে চলে গেছে বুড়াইল নদ। এটি ছোট হওয়ায় বাঁশের সাঁকো, আবার কখনো কাঠের সাঁকো দিয়েই চলে নানা শ্রেণি-পেশার প্রায় ৫০ হাজার জনসাধারণের যাতায়াত। প্রতিবছর একবার করে নির্মাণ করতে হয় সাঁকোটি। সংস্কার করতে হয় বছরে দুবার। মাস দুয়েক আগে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। ঝুঁকি জেনেও যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটেছে অনেক। সর্বশেষ গত মে মাসের ২০-২২ তারিখের দিকে নড়বড়ে সাঁকোটি নদীতে ভেঙে যায়। যাতায়াতের একমাত্র ও শেষ ভরসা বাঁশের সাঁকোটি নদীতে ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে ছিল দুই পারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এতে বন্ধও ছিল শির্থীদের স্কুলে যাতায়াত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত