Ajker Patrika

‘দুধের নহর বইলেও লোকসান দিয়ে খামার টিকিয়ে রেখেছি’

শিপুল ইসলাম, রংপুর
আপডেট : ৩১ মে ২০২৩, ১৮: ২৩
‘দুধের নহর বইলেও লোকসান দিয়ে খামার টিকিয়ে রেখেছি’

রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ রঘু বাজার এলাকার গরুর খামারি জামাল উদ্দিন। তিনি ১০টি গাভিতে প্রতিদিন গড়ে ১২০ লিটার দুধ পান। গাভিগুলোকে খড়, ভুসি, কাঁচা ঘাসসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়াতে তাঁর প্রতিদিন ৬ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। প্রতি লিটার দুধ ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে পান ৫ হাজার ৭৬০ টাকা। এতে প্রতিদিন তাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৭৪০ টাকা। 

জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এক বছরে চার দফা গোখাদ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু দুধের দাম বাড়েনি। এক লিটার দুধ বিক্রির টাকায় এক কেজি ভুসি হয় না। খামারে দুধের নহর বইলেও গোখাদ্যের উর্ধ্বমুখীতে অনেক কষ্টে লোকসান দিয়ে খামার টিকিয়ে রেখেছি। দুধের ন্যায্য দাম পেলে তবেই খামার ধরে রাখা সম্ভব, না হলে খামার বন্ধ করে দিতে হবে। শুধু আমার অবস্থাই এমন নয় আশপাশের সব খামারিদের একই অবস্থা।’ 

দুধ নিয়ে কথা হলে মাহিগঞ্জের খাসবাগ এলাকার আরেক খামারি শাহাদত ইসলাম বলেন, ‘রাত পোহালে (১ জুন) বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। এ দিবসে কত কিছু পালন করা হয়। কিন্তু দুধ উৎপাদনকারীদের দিকে তাকানো হয় না। বর্তমানে দুধ উৎপাদনে লোকসানে আছি। যা লাভ মধ্যস্বত্বভোগীদের আর কোম্পানির। আমাদের দাবি গোখাদ্যের দাম কমানো হোক।’ 

রংপুর জেলায় এক হাজার ৬৮৮টি ডেইরি খামার ও প্রায় ১০ হাজার গৃহপালিত দুগ্ধ গাভি আছে বলে জানা গেছে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে। কিন্তু রংপুর ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, রংপুরে ৮ উপজেলায় ছোটবড় প্রায় ৫ হাজার ডেইরি খামার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন গড়ে এসব খামার থেকে প্রায় দেড় লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। 

রংপুর ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন বলেন, ‘প্রতি লিটার দুধ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ৫৫ টাকা। আর দুধ বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ৪৫-৫০ টাকা। সব সময় এই দামও পাওয়া যায় না। গড়ে দুধ উৎপাদন করতে লিটারে ১০ টাকা লোকসান হচ্ছে খামারিদের।’ 

গাভির দুধ দোয়াতে ব্যস্ত রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী এলাকার খামারি রতন মিয়া। ছবিটি গতকাল বুধবার সকালে তোলা। আজকের পত্রিকাখামারিদের টিকিয়ে রাখতে রংপুরে ডেইরি বোর্ড গঠন করার দাবি জানান লতিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘খামারি, দুধের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সমন্বয়ে দুধের নির্দিষ্ট দাম ঠিক করতে হবে। ভর্তুকি দেওয়া, সরকারের খাস জমি খামারিদের জন্য ঘাস উৎপাদনে বরাদ্দ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসা সেবা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে হবে।’ 

জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী এলাকার গরুর খামারি রতন মিয়া বলেন, ‘দুধে ভাতে সুখের নহর এখন আর নেই। গাভির খামারে দুধ উৎপাদনের শুধুই লোকসান। দুধের নহর বইলেও, সুখ নেই। উৎপাদন খরচ বাড়ায় খামার ছোট করতে বাধ্য হচ্ছি।’ 

জেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৫ জন ডেইরি খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দুধের দামের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি। এতে লোকসানে খামার টিকে রাখছেন খামারিরা। গোখাদ্যের দাম কমানোসহ দুধের দাম বাড়ানোর দাবি জানান তাঁরা। 

খামারিরা যাতে দুধের ন্যায্য দাম পান তা নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘খামারি ও দুধের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে বসে মূল্য নির্ধারণ করা হবে যাতে খামারিদের লোকসান না হয়। উৎপাদন খরচ কমাতে ও গাভিগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে খামারিদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ 

আজ বুধবার স্থানীয় বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গোখাদ্যের দাম চড়া। দোকানগুলোতে ‘খড়েকুঁড়া’ প্রতিকেজি ১৫ টাকা, গমের ভুসি ৫৫-৬০, ধানের কুঁড়া ১৫, বুটের খোসা ৬২ ও দানাদার ফিড ৫০-৫৫ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি দুধ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত