Ajker Patrika

জানার পরও সময়মতো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন

তাসনিম মহসিন ও গোলাম কবির, পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে
জানার পরও সময়মতো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন

রংপুরের পীরগঞ্জে উপজেলার উত্তর জেলেপল্লির আশপাশে ঘটনার দিন (১৭ অক্টোবর) জোহরের নামাজের পর মানুষ জড়ো করতে থাকে দুষ্কৃতকারীরা। মাগরিবের পরই স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়। এরও প্রায় ৩ ঘণ্টা পর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে জেলেপল্লিতে আগুন দেওয়া হয়। খোদ থানার পুলিশই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে আগুন লাগার আগে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন অনেক সময় পেয়েছিল ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিকেল থেকেই তাঁরা ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন।

 উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছাদেকুল ইসলাম সাদেক বলেন, ‘মাগরিবের পরপরই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলার সহকারী কমিশনারকে (এসি ল্যান্ড) নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। আমরা উত্তেজিত জনতাকে জেলেপল্লির দিকে এগোতে দিইনি। কিন্তু আলোচনার মাঝখানে উত্তর জেলেপাড়ায় আগুন জ্বলতে দেখি।’

ঘটনার দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূজার ছুটিতে ছিলেন। সেদিন ইউএনওর অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেন এসি ল্যান্ড মো. খাইরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঘটনাস্থলে যাই, তখন সেখানে ২০০-৩০০ মানুষ ছিল। আশপাশের মসজিদের ইমামদের ডেকে জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু জনবল কম থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে।’

অতিরিক্ত জনবল কেন আনা হলো না, এমন প্রশ্নে খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ধারণা করেছিলাম, শুধু পরিতোষের বাসায় হামলা হতে পারে। তাই পরিতোষ যে জেলেপল্লিতে থাকে, সেটিকেই সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তবে রাত ৯টার দিকে প্রচুর মানুষ জড়ে হতে দেখে জেলা প্রশাসককে ফোন করে অতিরিক্ত জনবল পাঠাতে বলি।’

পৌরসভার পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিপুল চন্দ্র সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিকেলে একজন ফোন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়ে পুলিশকে জানাই। ঘটনাটি জানার পরই সন্ধ্যায় স্পিকারের একান্ত সহকারীকে ফোন করে বিষয়টি জানাই। নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত প্রশাসন পাঠানোর অনুরোধ করি।’

তবে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুরেশ চন্দ্র বলেন, ৯৯৯-এ একজনের কল থেকে রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে তাঁরা বিষয়টি জেনেছেন। তাৎক্ষণিক পুলিশের ১০-১২ জন সদস্য ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু সেখানে তখন হাজারের বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার ও লাইভের পর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও লোক আসছিল। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে পুলিশ প্রথম জেলেপল্লিতে আগুন দেখতে পায়।

স্থানীয় সূত্র বলছে, পুলিশকে বিকেলে ঘটনাটি জানানোর পর স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় পেয়েছিল। প্রশাসন কুমিল্লার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হলে উত্তর জেলেপল্লির মানুষকে ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে হতো না।

পীরগঞ্জ উপজেলার পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক সুধীর চন্দ্র রায় ও পৌরসভার পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিপুল চন্দ্র সরকারের দাবি, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়। 

ঘটনার শুরুতে ফায়ার সার্ভিস ছিল নিষ্ক্রিয় 
আগুন দেওয়ার আগে থেকেই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেখানে উপস্থিত ছিল। তবে শুরুতে আগুন নেভাতে তাদের সক্রিয় ভূমিকা দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন জেলেপল্লির ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। পীরগঞ্জ থানার পুলিশ বলছে, শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভয় পেয়েছিলেন। পরিতোষের বাড়ির খড়ের গাদায় আগুন দেওয়া হলেও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এগোননি।

পরে পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিলে ফায়ার সার্ভিস কাজ শুরু করে।

এসি ল্যান্ড খাইরুল ইসলাম দাবি করেন, শুরুতে ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নেভাতে বাধা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এমন ছিল, ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে গেলে তারা হামলার শিকার হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত