Ajker Patrika

নড়বড়ে সৈয়দপুর শহররক্ষা বাঁধ, ভাঙনের আশঙ্কা

জসিম উদ্দন, নীলফামারী
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ২৭
নড়বড়ে সৈয়দপুর শহররক্ষা বাঁধ, ভাঙনের আশঙ্কা

নীলফামারীর সৈয়দপুরে খড়খড়িয়া নদীর শহররক্ষা বাঁধটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বাঁধের ওপর দিয়ে বালুবাহী ট্রাক ও বাঁধের গোড়ার মাটি কেটে নেওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ বছর পুরোনো বাঁধটির ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক স্থানে ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানির স্রোতে ওই বাঁধের কোথাও ভাঙন দেখা দিলে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা করছেন শহরবাসীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের চান্দিয়ার ব্রিজ থেকে শুরু করে সৈয়দপুর পৌর এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া হয়ে পার্বতীপুরের বেলাইচন্ডী ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত রয়েছে শহররক্ষা বাঁধ। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধের কারণে সৈয়দপুর শহরের সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলো বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু বাঁধ ভেঙে গেলে ওই সব স্থাপনা পুরোপুরি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে সৈয়দপুর বিমানবন্দর, সেনানিবাস, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা, ১৫০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বাংলাদেশ আর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সৈয়দপুর সরকারি কলেজ, বিসিক শিল্পনগরী, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, সৈয়দপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাসপাতালসহ ছোট-মাঝারি শিল্প কারখানা ভয়াবহ প্লাবন জোনে অবস্থান করছে। 

বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি শহরে ঢুকলে ওই স্থাপনাগুলো কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভৌগোলিকগত অবস্থানের কারণে নদীর প্লাবন স্তর থেকে সৈয়দপুর শহরের ওই স্থাপনাগুলো স্থান ভেদে অবস্থান ৩-৬ ফুট নিচে। নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি খড়খড়িয়া নদী আগের মতো আর ধারণ করতে পারে না। ফলে সহসায় বাঁধ উপচে বন্যার পানি শহরমুখে ধাবিত হয়। 

ওই নদীতে রয়েছে অনেক বাঁক এবং প্রস্থ অনেক কম। কিন্তু বর্ষাকালে থাকে তীব্র স্রোত। নদীতে অনেক বাঁক থাকার কারণে তীব্র বেগে ধাবিত পানির স্রোত সরাসরি শহর রক্ষা বাঁধে আঘাত হানে। 

শহরের কুন্দল এলাকার বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা মোস্তফা ফিরোজ বলেন, খড়খড়িয়া নদীর শহররক্ষা বাঁধটি টেকসই করতে হলে নদী সোজাকরণ করতে হবে। প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও নদী সোজা করা উচিত বলে মনে করছি। নদীটি সোজা করে শহররক্ষা বাঁধটি কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করা হলে এ জনপদের মানুষ বর্ষাকালে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন। 

শহররক্ষা বাঁধের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈয়দপুর পওর বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবু সৈয়দ মো. আমিনুর রশিদ বলেন, প্রতিবছর বর্ষাকালে বন্যার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আগেই খড়খড়িয়া নদীর পানি বাঁধ উপচে শহরে প্রবেশ করে। ওই সময় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ দিয়ে পানি আটকে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা রক্ষা করা হয়। উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রতিবছর চার-পাঁচবার বন্যার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। 

উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নকালে পাকা ব্লক দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হলে অন্তত ১০০ বছরে বাঁধের কোনো ক্ষতি হবে না। 

এ বিষয়ে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই বাঁধ টেকসই করার জন্য আমরা ডিপিপির প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছি। সঠিক সময়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে। 

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, বাঁধের গোড়ার মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিনিয়ত তদারক করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে বর্ষার আগেই মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত