Ajker Patrika

আমাদের বাহিনীগুলো সরকারের নির্দেশে মানুষের বুকে গুলি মারে: রিজওয়ানা হাসান

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বক্তব্য দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বক্তব্য দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘আমাদের বাহিনীগুলো সরকারের নির্দেশে মানুষের বুকে গুলি মারে। ভূমিদস্যুর মুখে গুলি মারে না। পাথর ব্যবসায়ীর বুকে গুলি মারে না। দুষ্টের, ঘুষখোরের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয় না। সেইখানে তাদের সখ্যতা রয়েছে। যখন হেলমেট পরে এসে নিরীহ ছাত্রদের আক্রমণ করে, তাদের জন্য তাদের গুলির বরাদ্দ নাই। গুলির বরাদ্দ হচ্ছে নিরীহ ব্যক্তিদের জন্য।’

আজ বুধবার দুপুরে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শহীদ জুলাই দিবস’ ও আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি বলছি না গুলি করতে হবে, আমি বলছি যাদের আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি করতে হবে, যারা আসলে আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি, যারা আসলে শান্তি সৃষ্টির জন্য হুমকি, যারা নানা অজুহাতে আমি আর তুমি মনস্তাত্ত্বিক ঢুকিয়ে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমাদের সমাজে কখনোই প্রতিরোধের ব্যবস্থা গড়ে উঠে নাই। যারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তারা যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যায়, তারা তাদের প্রটেকশন না দিয়ে ওই দুষ্টুদেরকেই প্রটেকশন দেয়।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছিলাম চীন সরকার সম্পূর্ণ নিজ অনুদানে একটা হাসপাতাল করে দেবে। সেই হাসপাতালটা বাংলাদেশের কোথায় হতে পারে। আসিফ ভাইয়ের হয়তো মনে থাকবে নিশ্চয়ই, আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বললেন, এই হাসপাতালটা রংপুরে হতে হবে এবং এই হাসপাতাল এই জন্য রংপুরে হতে হবে, আপনাদের আন্দোলনের কথাটা মনে রেখে। এই অবহেলিত পিছিয়ে পড়া জনপদে এগিয়ে যাওয়ার কথা মনে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলছিল, যারা চিকিৎসা নিতে যাবে, এত উন্নতমানের চিকিৎসা কী দেবে? তারা কি ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে আসবে চিকিৎসা নিতে? তখন উনি বললেন, ঢাকা থেকে যদি ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবে যায়, ব্যাংককে যায়, রংপুরেও আসবে। আপনারা যদি ভাবেন, আপনাদের মনে রাখি না, এটা ঠিক নয়। আমরা কাগজে কী রেখেছি, তা দিয়ে সব সময় জাজ করা যায় না। আমরা হৃদয়ে কী রেখেছি, এটার একটা বড় উদাহরণ আপনাদের দিলাম।’

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘তিস্তা নদী নিয়ে টাকা কারা দিবে, এ নিয়ে অনেক কথা হতে পারে। তিস্তার মতো একটা ভাঙনপ্রবণ, খরস্রোতা, ভাগ করে নেওয়া নদী, যেখানে আমরা ভাটিতে আছি, তার ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেকে উৎকর্ষতার দাবি রাখে। এ জন্য চীন সরকারের সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে যখন চুক্তি হয়, তাদের পরিকল্পনা সেলফে তুলে রাখা হয়। আমরা ওটা বের করলাম। ওটার ওপর কাজ করেছি।’

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা প্রকল্প এই এলাকায় বাস্তবায়িত হবে। এটার কাজ আমরা এগিয়ে নিচ্ছি। এখানে সরকার টাকা দিবে, চীন সরকারও টাকা দিবে। এটা ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা। তার মধ্যে পাঁচ বছরে সেচ, ভাঙনরোধ ও স্থায়ী বাঁধ—এই তিনটা জিনিসকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পরিকল্পনা আমরা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। গতকাল পরিকল্পনা কমিশন তাঁদের পক্ষ থেকে অনাপত্তি দিয়ে এই তিস্তা প্রকল্পের খসড়া পাঠিয়ে দিয়েছে ইআরডি বিভাগে। এখন ইআরডি বিভাগ থেকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে চায়নার কাছে। আমরা এখানে একমত। এখন বিশেষজ্ঞেরা এটা ডিজাইন করবেন। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে এই চুক্তিটা শেষ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব। আগামী বছর থেকে কাজ শুরু হবে। আমাদের প্রকল্পের দলিলে লেখা আছে, কাজ শুরু হবে জানুয়ারি ২০২৬-এ।’

আজ সকাল থেকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদকে শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় পীরগঞ্জের বাবনপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কালো ব্যাজ ধারণ করে এক শোক র‍্যালি বের করা হয়।

সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আবু সাঈদ তোরণ ও মিউজিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন তাঁর নিহত হওয়ার স্থানে ‘আবু সাঈদ চত্বর’ ঘোষণা করে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

এদিকে শহীদ দিবসের ভোর থেকেই আবু সাঈদের কবরের চারপাশে তৈরি হয় এক নীরব গভীর আবেগঘন পরিবেশ। কান্না, শোক আর শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে পীরগঞ্জের বাবনপুর। শহীদের কবরের পাশে ফুল হাতে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর মা-বাবা, শিক্ষক, সহপাঠী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতারাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনবিআরে আন্দোলন: শাস্তি পেতে পারেন তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী

প্রধান প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, ইইডিতে তোলপাড়

সাবেক আইজির রাজসাক্ষী হওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পুলিশে

গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় ফেসবুকে সরব ইসলামপুরের পলাতক আওয়ামী নেতারা

সরকারি চাকরির নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়া হবে না

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত