Ajker Patrika

বৃষ্টির পানিতে ভাসছে বিলের পাকা ধান, গাছেই গজাচ্ছে চারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে পাকা ধান। সেই ধান জমি থেকে কেটে নিচ্ছেন কৃষকেরা। ছবিটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা রিশিকুল ইউনিয়নের বামলাইন বিল থেকে তোলা। ছবি: মিলন শেখ
বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে পাকা ধান। সেই ধান জমি থেকে কেটে নিচ্ছেন কৃষকেরা। ছবিটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা রিশিকুল ইউনিয়নের বামলাইন বিল থেকে তোলা। ছবি: মিলন শেখ

এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিলের নিচু জমির পাকা ধান পানিতে ভাসছে। গাছে থাকা অবস্থায় এসব ধানে চারা গজাতে শুরু করেছে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানিতে নেমে কৃষকেরা সেই ধান কেটে ঘরে তুলছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, তার কোনো হিসাব নেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ মে দিবাগত রাত থেকে রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ২০ মে ৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার, ২১ মে ৩৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার, ২২ মে ৮৪ মিলিমিটার, ২৪ মে ৩১ দশমিক ৮ মিলিমিটার, ২৫ মে ১৫ মিলিমিটার, ২৬ মে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সবশেষ গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, টানা এই বৃষ্টিতে নিচু ও বিল এলাকার জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বামলাইন বিলের কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিলে এখন হাঁটুপানি। তার তিন বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। শিষের ধানেই এখন চারা গজাচ্ছে।’

নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিলের কৃষক তুহিন আলী বলেন, ‘বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে ধান কেটে জমিতেই পাড়ন দিয়েছিলেন। আঁটি বেঁধে ওই ধান ঘরে তোলার আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ফলে ধান আর ঘরে তোলা যায়নি। বিলের পানিতে ধান এখন ভাসছে। এই ধানে চারা গজাতে শুরু করেছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের হাঁকরইল গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, ‘বোরো ধানের ফলন এবার খুব ভালো হয়েছিল। বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ২৭ মণ ফলন আশা করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টিতে ধান শুয়ে পড়েছে। এ কারণে অনেক ধান ঝরে গেছে। শিষের ধানেও চারা গজিয়েছে। এখন বিঘাপ্রতি ফলন কমে ১৫ থেকে ১৬ মণ হতে পারে।’

শিষের ধানেই চারা গজিয়ে যাচ্ছে। ছবি: মিলন শেখ
শিষের ধানেই চারা গজিয়ে যাচ্ছে। ছবি: মিলন শেখ

নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিভিন্ন বিলের জমির বোরো ধান এখনো তলিয়ে আছে। মান্দার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আহসান হাবীব বলেন, ‘গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অনেক জমির ধান তলিয়ে গেছে। রোদ না থাকায় শিষ ধান থেকে বীজ বের হচ্ছে। এই ধানের ফলন কম হবে বলে কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।’

তবে বরেন্দ্র অঞ্চলের বৃষ্টিতে ক্ষতি খুব একটা হবে না বলে মনে করেন রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা। তিনি বলেন, ‘রুক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিতে খুব বেশি সমস্যা হয় না। আর আমাদের রাজশাহী জেলায় ইতিমধ্যে ৭৫ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকি ধানগুলোও দ্রুতই কাটা শেষ হয়ে যাবে। বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হবে না।’

ঝড় ছাড়া বৃষ্টি হলে ক্ষয়ক্ষতির কোনো হিসাব সংগ্রহ করা হয় না বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যদি ঝড় এবং ভারী শিলাবৃষ্টি হয়, তখন আমরা ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করি। এ ধরনের বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সংগ্রহ করা হয় না। আমরা মাঠপর্যায়ে খোঁজ রাখছি।’

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি অঞ্চলের চার জেলা—রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫ টন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনা যাঁকে ঢাকায় ‘হত্যা করলেন’, তিনি ময়মনসিংহে জীবিত!

চরফ্যাশন থেকে গেটিসবার্গ কলেজ

জীবিত ভাইকে জুলাই আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলায় সাক্ষীও দুই ভাই, নেপথ্যে যা জানা গেল

নগদে স্ত্রীর চাকরি, স্বার্থের সংঘাতে জড়ালেন নাহিদের সাবেক পিএ আতিক মুর্শেদ

যুক্তরাষ্ট্রে সি চিন পিংয়ের মেয়েকে বহিষ্কারের দাবি, হঠাৎ কেন এই বিতর্ক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত