Ajker Patrika

রাজশাহীতে ছাত্রদল নেতাদের হাতে ‘লাঞ্ছিত’ অধ্যক্ষের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১৮: ৪৮
Thumbnail image

রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনা আবেদীনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কারণে আজ মঙ্গলবার কলেজ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্রদলের নেতারা তাঁকে পদত্যাগ করতে চাপ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও ছাত্রদল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তবে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হক লিমন ও মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। পরে একটি পদত্যাগপত্র প্রিন্ট করে আনা হলে অধ্যক্ষ সেখানে স্বাক্ষর করেন।

কথা বলতে আমিনা অবেদীনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। তবে আমিনা আবেদীন আজ ফেসবুকে তিনটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। একটিতে তিনি লেখেন, ‘আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছে।’ আরেকটিতে লেখা হয়, ‘আমাকে ও আমার ছেলেকে শারীরিকভাবে হামলা করেছে ছাত্রদল।’ অন্য স্ট্যাটাসে অধ্যক্ষ লেখেন, ‘ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাতে আমার জীবন হুমকির মুখে।’

আমিনা আবেদীনের ছেলে নিজেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর মাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন। তিনি লিখেছেন, ‘আজকে রাজশাহীর প্রধান একটা কলেজের অধ্যক্ষের গায়ে হাত তুলেছে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। জোর করে তাঁকে দিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমেনা আবেদীন এবং তাঁর সন্তান অর্কর গায়ে হাত তুলেছে ছাত্রদল। এই অর্ককে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনতেই আমরা মতিহার থানায় ১০ ঘণ্টা বসে ছিলাম।’

সেলিম রেজা নিউটন লেখেন, ‘ছাত্রদল কি পুরানা জমানার খাসলত থেকে বের হবে না? ছাত্রলীগের জুলুমের পথেই চলবে তারা? আর বাংলাদেশ তা মেনে নেবে? আশা করি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতারা, জেলা প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জেলা বিএনপির নেতারা এর একটা বিহিত করবেন।’

মাহবুব টুংকু নামের আরেক ব্যক্তি ফেসবুকে লেখেন, ‘আমিনা আবেদীন, যাঁকে আমি তাঁর ছাত্রজীবন থেকে জানি। কখনো কোনো দিন দেখিনি কোনো দলের পারপাস সার্ভ করতে। তাঁর দুটি সন্তান রাজশাহীর যেকোনো ন্যায়সংগত আন্দোলনে সবার আগে হাজির হয়েছে। এবারের এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা সম্মুখসারিতে অংশগ্রহণ করেছে। তাকে আজ জোরপূর্বক অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমিসহ ৮০ শতাংশ মানুষ হতাশ, ১০০ ভাগ সংক্ষুব্ধ। বিএনপি-জামায়াতের পাড়াগত এই রাজনীতির নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।’

জানতে চাইলে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হক লিমন অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি পরে গিয়েছিলাম। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই অধ্যক্ষকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যক্ষের ঝামেলা হচ্ছিল। সেখানে অধ্যক্ষের ছেলে আসেন। এটা নিয়েই ঝামেলাটা হয়।’ লিমনের পাঠানো একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্র নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলছেন, তাঁরা কোনো গোষ্ঠীর নন। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁরা পদত্যাগ দাবি করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত