Ajker Patrika

‘রেলওয়ের বড় স্যাররা নির্দেশ দিছেন, আমি গাছ কাটছি’

পাবনা ও ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ২১: ১৮
‘রেলওয়ের বড় স্যাররা নির্দেশ দিছেন, আমি গাছ কাটছি’

‘রেলওয়ের বড় স্যাররা নির্দেশ দিছেন, আমি গাছ কাটছি। বৈধ কি অবৈধ, নিলাম হইছে কি হয় নাই, সেটা আমার জানা নাই। স্যাররা অর্ডার করছেন, আমি তাঁদের হুকুম পালন করছি শুধু।’ এভাবেই গাছ কাটার কারণ জানালেন রেল কর্মচারী (লাইন মিস্ত্রি) আশরাফ আলী। 

ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেললাইনের পাবনার ভাঙ্গুড়া রেলস্টেশন থেকে দিলপাশার স্টেশন পর্যন্ত সাত কিলোমিটার দেখভাল করেন লাইন মিস্ত্রি আশরাফ আলী। তিনি এক কাঠ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় রেলপথে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টি গাছ কেটে ফেলেছেন। 

এ বিষয়ে ভাঙ্গড়া রেলস্টেশন মাস্টার আব্দুল মালেক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টেন্ডার ছাড়া তিনি এত গাছ একবারে কাটতে পারেন না। প্রয়োজন হলে গাছের ডাল কাটতে পারেন, কিন্তু এত গাছ একবারে কীভাবে তিনি কাটলেন, তা বোধগম্য নয়। এমন কোনো নির্দেশনার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’ 

পাবনার ভাঙ্গুড়া রেললাইনের ধারে কেটে ফেলা গাছের মূল। ছবি: আজকের পত্রিকা অভিযোগে জানা যায়, আঁকাবাঁকা রেলপথে গাছ থেকে ঝোপঝাড় পড়ে ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে অন্তত ১০ দিন আগে গাছগুলো কাটা হয়। রেললাইনের দুধারে ছিল প্রায় ৩০ বছর বয়সী কাঁঠাল, আমসহ নানা প্রজাতির কাঠের গাছ। অথচ কোনো নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই কেটে ফেলা হয়েছে গাছগুলো। পরে গাছের ধরগুলো স্থানীয় করাতকল নিয়ে রাখা হয়। 

এ ঘটনায় লাইন মিস্ত্রি আশরাফ আলী, কাঠ ব্যবসায়ী আফসার আলী শুধু নয় এর সঙ্গে পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। 

অভিযুক্ত লাইন মিস্ত্রি আশরাফ আলী বলেন, ‘এই এলাকায় ট্রেন চলাচলে দীর্ঘদিন ধরেই সিগন্যালে সমস্যা হচ্ছিল। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তাঁদের মৌখিক অনুমতি পেয়েই আমি এই গাছগুলো কেটেছি।’ 

নিলাম ও কাটার যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি স্যারদের নির্দেশনা মেনেই গাছ কেটেছি। ন্যায়-অন্যায় বা বৈধ-অবৈধ এগুলো তাঁরাই ভালো জানেন।’ ১১টি কাঁঠাল, তিনটি আম ও কিছু কড়ইসহ বেশ কিছু গাছ কাটার কথা স্বীকার করেন তিনি। 

করাতকলে রাখা বড় গাছের ধর। ছবি: আজকের পত্রিকা কাঠ ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, ‘রেলওয়ের পিডব্লিউ স্যার দুজন এসে আমাকে আশরাফের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে যান। তারপর লাইন পরিষ্কার করার শর্তে আর শ্রমিক খরচ বাবদ গাছগুলো কেটে নিতে বলেন। তা না হলে তো আমার খরচ উঠে না। গাছ বিক্রি করা হয় নাই। ছয়জন শ্রমিক দিয়ে চার দিন কাজ করতে ইতিমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।’ 

পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশল শাখার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী আহসানুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ওই পথে সিগন্যালে সমস্যা হচ্ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় গাছগুলো কাটা হয়েছে।’ 

মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনায় নিলাম ছাড়া গাছ কাটার কোনো নিয়ম আছে কি না—এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে নিয়ম বা নিলামের কিছু নেই। আমাদের লাইনের সিগন্যালের সমস্যার কারণে গাছ কাটার দরকার ছিল, কাটা হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়।’ 

করাতকলে রাখা বড় গাছের ধর। ছবি: আজকের পত্রিকা ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘টেন্ডার ছাড়া সরকারি গাছ কাটার কোনো নিয়ম নেই। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহ সূফী নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘রেললাইনের সিগন্যালের সমস্যার জন্য গাছের পাতা বা ডাল কেটে লাইন পরিষ্কার করা যেতে পারে। কিন্তু বড় গাছ কাটা যাবে না। ছবিতে যেমন দেখলাম তাতে মনে হলো বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এটা সমীচীন হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছি। যারা গাছ কাটার কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত