Ajker Patrika

খরচ ওঠাতে পেঁয়াজ আমদানি দুই মাস বন্ধ চান কৃষক

  • প্রতি বিঘায় খরচ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
  • বিক্রি ৯৬ হাজার টাকা, লোকসান ৩৪ হাজার টাকা।
  • সংরক্ষণের অভাবে কন্দ পেঁয়াজ একসঙ্গে বাজারে আসায় কমেছে দাম।
রানা আহমেদ, নলডাঙ্গা (নাটোর) 
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ০৮
কৃষকেরা পেঁয়াজ তুলে বাছাই করে হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতি বিলের সোনাপাতিল মাঠে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কৃষকেরা পেঁয়াজ তুলে বাছাই করে হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতি বিলের সোনাপাতিল মাঠে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলায়। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষক দ্বিগুণ দামে জমি লিজ নিয়েছেন, বেশি দামে বীজ কিনে রোপণ করেছেন। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে বাজারে পেঁয়াজের দরপতন হওয়ায় এখন কৃষকের মাথায় হাত। উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না তাঁরা, উল্টো প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

কৃষকের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে তাঁরা পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। টেকসই উৎপাদন বজায় রাখতে এবং কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে অন্তত ফলনের মৌসুমে দুই মাসের জন্য হলেও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার দাবি তুলেছেন তাঁরা।

খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ, কিন্তু দাম কম: গত মঙ্গলবার নাটোরের বৃহৎ পেঁয়াজের পাইকারি হাট নলডাঙ্গায় নতুন জাতের কন্দ পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, যা পাইকারি হিসাবে প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অথচ কৃষক বলছেন, উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না তাঁরা।

হালতি বিলের সোনাপাতিল এলাকার ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকেরা জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে সারিবদ্ধ করে রাখছেন। নারী শ্রমিকেরা পেঁয়াজ কেটে, বাছাই করে, রোদে শুকিয়ে দিচ্ছেন। তারপর ওজন দিয়ে বস্তাবন্দী করে হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। সেখানে কথা হয় কৃষক সাজদার রহমান, আতিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও রাজু আহমেদের সঙ্গে। তাঁরা জানান, এবার বীজের দাম ছিল অনেক বেশি। প্রতি মণ বীজ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। এক বিঘা জমিতে লেগেছে ৮ থেকে ১০ মণ বীজ, শুধু বীজেই খরচ পড়েছে ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। জমি লিজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি মিলিয়ে মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ মণ।

কৃষকের হতাশা ও ক্ষতির হিসাব: সাজদার রহমান বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৮০ মণ, যা বাজারে বিক্রি করে পেয়েছি ৯৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ৩৪ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।’

তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক আহসান হাবিব বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছি। খরচ হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, কিন্তু বিক্রি করে পেয়েছি ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এতে ৭০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এই কন্দ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না, তাই জমি থেকে তুলে বাজারে যে দামই থাকুক, তাতেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’

বাজারে ধস, আমদানি বন্ধের দাবি: নলডাঙ্গা হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম ও আড়তদার বুলবুল জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকায় দেশীয় পেঁয়াজের দাম পড়ে গেছে। প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আরও কমতে পারে। এতে কৃষক উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না। তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আমদানি বন্ধ না হলে আগামী দিনে কৃষক পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাবেন।

উৎপাদন বেড়েছে, কিন্তু সংকট কাটেনি: নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এবার উপজেলায় ১ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে কন্দ পেঁয়াজ চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫৪০ হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ হাজার ৯১১ টন। কিন্তু প্রতি টনে কৃষকেরা সাড়ে ৭ হাজার টাকা লোকসান গুনছেন।

নাটোর জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান বাজারে যে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, তা সংরক্ষণযোগ্য নয়। তাই কৃষকেরা একসঙ্গে বাজারে ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, ফলে সরবরাহ বেড়ে দাম কমছে। আমরা প্রতিদিন বাজারদর মনিটরিং করে তথ্য পাঠাচ্ছি। কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণে ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের জন্য কাজ চলছে। পাশাপাশি, কৃষকেরা যেন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন, সে জন্য সংরক্ষণাগার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’

কৃষক বলছেন, উৎপাদন খরচের সঙ্গে মিল রেখে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা না হলে আগামী দিনে তাঁরা পেঁয়াজ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। এতে শুধু কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, ভোক্তারাও এর প্রভাব অনুভব করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সঠিক সময়ে নির্বাচন না হলে দেশে মার্শাল ল হবে: নাগরিক ঐক্যের মান্না

আফগানিস্তানের সেমিতে যাওয়ার ‘আকাশ-কুসুম’ সমীকরণ

রমজানের চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে শনিবার থেকে রোজা

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত