Ajker Patrika

রাজশাহীর বৃহত্তম মোকামে ঢলন আর শোলাপ্রথায় জিম্মি আমচাষি

পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১২ জুন ২০২২, ১৯: ০৮
রাজশাহীর বৃহত্তম মোকামে ঢলন আর শোলাপ্রথায় জিম্মি আমচাষি

রাজশাহীর সর্ববৃহৎ আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার। এই মোকামে ১২৬ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁরা সিন্ডিকেট করে স্থানীয় আমচাষি ও বিক্রেতাদের জিম্মি করে রেখেছেন। চক্রটি কয়েক বছর ধরেই ঢলন ও শোলাপ্রথার নামে চাষিদের ঠকাচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর করোনার অজুহাতে চক্রটি প্রতি মণে ১০ কেজি বেশি আম নিয়েছে। এটিকে তারা বলে ‘ঢলন’। এবার আরও এক কেজি বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ১১ কেজি। 

চাষিরা বলছেন, বাজারের আম ব্যবসায়ীদের কাছে চাষিরা জিম্মি হয়ে আছেন। বিষয়টি বাজার কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

আজ রোববার সকালে জেলার সর্ববৃহৎ আমের মোকাম বানেশ্বর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের বেশির ভাগ ক্রেতা স্থানীয় ফড়িয়া ও আড়তদার। হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী বাইরে থেকে এসেছেন। তাঁরা আম কিনছেন মণ ও চুক্তি দুভাবেই। প্রতি মণে নেওয়া হচ্ছে গড়ে ৫০ থেকে ৫১ কেজি আম। সে হিসাবে বিক্রেতাকে প্রতি মণে ঢলন দিতে হচ্ছে ১০-১১ কেজি। 

বানেশ্বর বাজারে আসা আমবাগান মালিক মজনু ইসলাম বলেন, ‘বাজারে আম বিক্রি করতে এসে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয়। তারা যেভাবে পারছে বিক্রেতাদের লুট করছে। কয়েক বছর আগেও ৪৫ কেজিতে এক মণ আম বিক্রি করেছি। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০-৫১ কেজি।’

মজনু ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত আম নেওয়ার বিষয়টি প্রতিবছরই বাজার কমিটি বা স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়। আর ঢলনপ্রথা বাতিল করতে বাজার কমিটি ও উপজেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের নিয়ে প্রতিবছর দু-একবার বৈঠক-সমাবেশ হয়। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো সুফল আমচাষিরা পাচ্ছেন না।’

মো. রিপন নামে অপর একজন আম বিক্রেতা বলেন, ‘এই বাজারে আম বিক্রি করতে হলে চাষিদের কয়েকটি ধাপে ভর্তুকি দিতে হয়। এর মধ্যে আড়তদার ঢলন নেয় প্রতি মণে ৯ কেজি। ওজনকারী প্রতিমণ মাপার আগে শোলার নামে বড় দুটি আম আলাদা করে রাখে। এরপর ওই ওজনকারীরা বাড়িতে খাওয়ার কথা বলে সব বিক্রেতার কাছ থেকে দুই-তিনটা করে আম নেয়। এরপর আম বিক্রির দাম পরিশোধ করার সময় হিসাবরক্ষক বাটার নামে (হিসাবরক্ষকের কমিশন) ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত কেটে নেয়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বানেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ী ও হাট ইজারদার ওসমান আলী বলেন, ‘আম কাঁচামাল। এটার কিছু ভর্তুকি আছে। এই অজুহাতে ব্যবসায়ীরা মণ হিসেবে অতিরিক্ত কিছু আম নেন। আর এই কারণে ঢলনপ্রথা তুলে দিতে আমরা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করি— মণে নয়, তারা যেন যত কেজি আম কেনেন তত কেজির দাম দেন। বিভিন্নভাবে বোঝানোর পরও সেটা কার্যকর হচ্ছে না।’

আম ব্যবসায়ীরা অবশ্য অতিরিক্ত আম দিতে কাউকে কাউকে বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেন, এখানে কোনো বিক্রেতার কাছ থেকে জোর করে আম নেওয়া হয় না। কেনার সময় তাঁদের বলা হয় প্রতি মণে কত কেজি ঢলন দিতে হবে। তাঁদের ইচ্ছে হলে দেবেন, আর না হলে নয়।

হাট ইজারাদার ওসমান আলী বলেন, ‘অনিয়ম রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় আমের বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত