Ajker Patrika

আশ্রয় চেয়ে ডিসির কাছে ‘ধর্ষণের শিকার’ কিশোরী গৃহকর্মীর চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ২০: ১৮
আশ্রয় চেয়ে ডিসির কাছে ‘ধর্ষণের শিকার’ কিশোরী গৃহকর্মীর চিঠি

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের কাছে একটি চিঠি এসেছে। হাসপাতাল থেকে এই চিঠি লিখেছে ১৩ বছরের এক কিশোরী। সে জানিয়েছে, তার মা-বাবা বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। এখন গৃহকর্মীর কাজ করে সে। হাসপাতাল থেকে সে আর গৃহকর্তার বাড়ি যেতে চায় না। কিন্তু তার আর কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই। তাই সে আশ্রয় চায়। 

গত সোমবার এই চিঠি পান জেলা প্রশাসক। এরপর তিনি সেটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে পাঠান। চিঠির ওপরে লিখে দেন, ‘জরুরি আলোচনা প্রয়োজন।’ এ চিঠি পেয়েই সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক হাসিনা মমতাজ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করেন। এরপর তিনি ছুটে যান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে জেনেছেন, মেয়েটি ধর্ষণের শিকার। 

এই কিশোরীর বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরে। ১০ বছর আগে তার বাবা ও মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এরপর তাঁরা আবার অন্য জায়গায় বিয়ে করেছেন। মা-বাবা কেউ এই কিশোরীকে তাঁদের সঙ্গে নেননি। অনেক দিন নানির বাড়িতেই থেকেছে এই কিশোরী। গত বছরের ১২ আগস্ট রাজশাহী শহরের রাজপাড়া থানা এলাকার এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজের জন্য তাকে রেখে যায় চাচির বোন। বাড়িটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষের। ৮০ বছরের বেশি বয়সী এই ব্যক্তির বিরুদ্ধেই নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে ওই কিশোরী। 

ওই কিশোরী জানায়, যে বাসায় থেকে গৃহকর্মীর কাজ করত, সে বাসার নিচতলায় থাকেন একজন নার্স। তিনিই নির্যাতিত এই কিশোরীকে কয়েক দিন আগে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করান। এরপর অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক তাকে বাসায় নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভুক্তভোগী কিশোরী তাঁর সঙ্গে যায়নি। কিশোরীর থাকার জায়গা নেই দেখে পাশের শয্যার রোগীর এক আত্মীয় জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি লিখে দেন। এই চিঠি জেলা প্রশাসকের কাছে যাওয়ার পরই ঘটনা জানাজানি হয়। 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক হাসিনা মমতাজ বলেন, ‘চিঠিতে ওই কিশোরী লিখেছিল, তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। আসলে সে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষায় এর সত্যতাও পাওয়া গেছে। ওই কিশোরী গৃহকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। এখন তার পরিবারের কেউ এলে তাঁরা মামলা করতে পারবেন। তা ছাড়া ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) থেকেও মামলা করা হতে পারে।’ 

হাসিনা মমতাজ আরও জানান, হাসপাতালে ওই কিশোরী আগে সাধারণ ওয়ার্ডে ছিল। তিনি যাওয়ার পরে তাকে ওসিসিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল তাদের কাছে কিশোরীকে হস্তান্তর করবে। তার যাওয়ার জায়গা নেই, তাই সরকারি সেফ হোমে রাখা হবে। 

অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে আজ বুধবার বিকেলে কল দেওয়া হলে তাঁর পুত্রবধূ ধরেন। তিনি জানান, ওই কিশোরীকে তাঁরা মেয়ের মতোই আদর করতেন। রাতে তার সন্তানের সঙ্গেই ঘুমাত। শারীরিক নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। তবে যেদিন কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেদিন হাসপাতালে থাকা পুলিশের মাধ্যমেই খবর পান। তখন শুনেছিলেন, তাকে মারধর করা হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণের বিষয়টি শোনেননি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত